তিন হাত ঘুরে ধর্ষিত কিশোরী গাদিয়াড়ার হোটেলে
পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল জামাইবাবু। অভিযোগ, তিন দিন ধরে ধর্ষণ করার পর তেরো-চোদ্দো বছরের মেয়েটিকে সে বিক্রি করে দেয় এক বন্ধুর কাছে। বন্ধুর খপ্পরেও একই অভিজ্ঞতা। আরও এক প্রস্ত নির্যাতিতা হয়ে মেয়েটি বিক্রি হল সোনাগাছিতে। সেখান থেকে হাতবদল হয়ে তার স্থান হল গাদিয়াড়ার একটি হোটেলে। সেখানে তিন দিন ধরে ‘খদ্দের’দের আনাগোনা। এবং যথারীতি ধর্ষিত হওয়ার পালা।
ইতিমধ্যে বাড়ির লোকের অভিযোগ পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পুলিশ। রবিবার সকালে ওই হোটেলে হানাও দেয় তারা। মেয়েটিকে তখন পাওয়া যায়নি সেখানে। কিন্তু পরে হোটেলমালিক ভয় পেয়ে মেয়েটিকে উত্তর চব্বিশ পরগনার দত্তপুকুর থানা এলাকায় তার বাড়ির কাছে ছেড়ে দিয়ে যায়। হাওড়া জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার পর রবিবার দুপুরে ওই হোটেলে ফের হানা দিয়েছিল পুলিশ। লাইসেন্সহীন হোটেলে রীতিমতো মধুচক্রের হদিস দিয়ে এ বার সেখান থেকে উদ্ধার হয় আরও ছ’জন মেয়ে। তারা এখন স্থানীয় শ্যামপুর থানার হেফাজতে।
হোটেলমালিক, ম্যানেজার, কিশোরীর জামাইবাবু, তার বন্ধু ও সোনাগাছির এক মহিলা আপাতত এই পাঁচ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন বারাসত আদালতে তোলা হলে তাদের আট দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সোমবার আদালতে দাঁড়িয়ে দত্তপুকুরের ওই কিশোরী বলে, “পশুর মতো অত্যাচার করা হত। বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারব ভাবিনি।”
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরীর বাবা নেই। মা মানসিক ভারসাম্যহীন। মামাদের সঙ্গেই থাকত মা-মেয়ে। মাস কয়েক আগে মেয়েটির দিদির বিয়ে হয়। জামাইবাবু ছোটজাগুলিয়ার বাসিন্দা। ৯ ফেব্রুয়ারি পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ওই কিশোরীকে নিয়ে বেরোয় সে। তার পর তাকে দেগঙ্গা এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রাখে। মেয়েটির পরিবার সূত্রের খবর, জামাইবাবু বাড়ি ফিরে এসে দাবি করেছিল, মেয়েটির খবর সে জানে না। মেয়েটি নিজেই বাড়ি ফিরে এসেছে বলে তার ধারণা ছিল। কিন্তু মেয়ে না ফেরায় সেই রাতেই দত্তপুকুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে তার পরিবার।
দত্তপুকুর থানার পুলিশ মেয়েটির হদিস পাওয়ার আগে জামাইবাবু দেগঙ্গার ওই বাড়িতে মেয়েটিকে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ১২ ফেব্রুয়ারি সে মেয়েটিকে বিক্রি করে দেয় তার বন্ধু আকবর আলির কাছে। আকবর ১৩ তারিখ মেয়েটিকে কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেয়।
ইতিমধ্যে পুলিশ জানতে পারে, ৯ তারিখ মেয়েটিকে শেষ বার জামাইবাবুর সঙ্গেই দেখা গিয়েছিল। জামাইবাবুর নামে পুলিশের কাছে অপহরণের মামলাও দায়ের করেন মেয়েটির মামা। পুলিশ তাকে জেরা করতে শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, জেরার মুখেই জামাইবাবু স্বীকার করে, তিন দিন শ্যালিকার উপরে অত্যাচার চালিয়ে তাকে বন্ধুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে সে। এর পর আকবরকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর আকবরের কাছে খবর পেয়ে সোনাগাছি থেকে নমিতা সর্দার ওরফে রূপা নামে এক যৌনকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় নমিতা জানায়, মেয়েটিকে ১৩ তারিখেই সে গাদিয়াড়ার ‘রিভার ভিউ’ হোটেলে বিক্রি করে দিয়েছে।
রবিবার সকালে নমিতাকে নিয়ে আইসি সঞ্জয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে হোটেলে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু পুলিশের ধারণা, কোনও সূত্রে আগাম খবর পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ গোপন একটি কুঠুরিতে তখনকার মতো লুকিয়ে ফেলেছিল মেয়েটিকে। কিন্তু পরে ভয় পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। রবিবারই বাড়ি ফেরে অসুস্থ মেয়েটি। তখন আবার পুলিশে খবর দেন বাড়ির লোকেরা। মেয়েটি পুলিশকে জানায়, ওই হোটেলে তিন দিন ধরে তার উপরে নানা ব্যক্তি নির্যাতন করেছে। তখন ফের হানা দিয়ে পুলিশ ওই হোটেল থেকে উদ্ধার করে আরও ছ’জন মেয়েকে। তাদের মধ্যেও কয়েক জন নাবালিকা রয়েছে। হোটেল মালিক দেবনাথ কোলে আর ম্যানেজার দুলাল বেরা, দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার আকবর, নমিতা-সহ ওই দুই হোটেল কর্মী এবং মেয়েটির জামাইবাবুকে বারাসত আদালতে তোলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, মারধর, অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। মেয়েটিকে আপাতত একটি হোমে রাখা হয়েছে। সেখানেই তার শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা চলছে। বুধবার তার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
গাদিয়াড়ার মতো একটি পর্যটন কেন্দ্রে পুলিশের নাকের ডগায়, কী করে এই অবৈধ দেহব্যবসা চলছিল? হাওড়ার জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের অতিরিক্ত সুপার সুখেন্দু হীরা সোমবার বলেন, “দেহব্যবসার অভিযোগে গাদিয়াড়ায় অধিকাংশ লজই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা নজরদারি আরও বাড়াব। এই হোটেলটি লাইসেন্স ছাড়া চলছিল।” উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “যেমন মসৃণ ভাবে পুরো চক্রটি চলছে, তা দেখে আশ্চর্য হতে হয়।” কী করে সম্ভব হয় এমন? প্রায় দু’দশক ধরে পাচার প্রতিরোধের জন্য কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বৈতালী গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পাচারকারীরা রীতিমতো সিন্ডিকেট বানিয়ে কাজ করে। এখানে জোগানদার-ব্যবসায়ী-খদ্দের, সকলেই সকলকে চেনে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.