নাম না করেও অনুব্রত নিয়ে বিধানসভায় সরব মুখ্যমন্ত্রী
যে নাম এফআইআর-এ নেই, তা নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের নাম জড়ানো নিয়ে বিধানসভায় প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার দুর্গাপুরে দলীয় কর্মশালায় নাম করেই ‘ভাল সংগঠক কেষ্টর’ (অনুব্রত) পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার আর তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির নাম নেননি। অনুব্রত-প্রসঙ্গে বিরোধীরা মিথ্যা বলছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তিনি। এর আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে, সাগর ঘোষ হত্যার পরেও বিধানসভায় নাম করে অনুব্রতর পক্ষ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের শেষে এ দিন জবাবি বক্তৃতায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিধানসভায় একটি এফআইআর-এর প্রতিলিপি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “নিহতের স্ত্রীর দায়ের করা এটাই সেই প্রথম এফআইআর-এর কপি, যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে দিনের পর দিন হইচই হচ্ছে। যে নাম নিয়ে এত কথা হচ্ছে, এফআইআর-এ কোথাও সেই নাম নেই।” অনুব্রত বিধায়ক নন। পরিষদীয় রীতি অনুসারে বিধানসভায় তাঁর নামোল্লেখ করা অসঙ্গত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এই সভার সদস্য নয়, বলে নামটা বলছি না।” তাঁর সংযোজন, “পরশু (শনিবার) দুর্গাপুরে দলের একটি সম্মেলন ছিল। সেটা কোনও ভাবেই সরকারি অনুষ্ঠান ছিল না। তদন্ত যখন চলছে, চলুক। কিন্তু মিথ্যা কথা কেন ওরা (বিরোধীরা) বলবে?” দুর্গাপুরে মমতা বলেছিলেন, “কেষ্ট এক জন ভাল সংগঠক। কেউ কেউ ওর পিছনে লাগে। ওর জন্য শেষ শক্তি পর্যন্ত থাকব!” হাইকোর্টে মামলা এবং বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) তদন্ত চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য গোটা প্রক্রিয়াকেই প্রভাবিত করবে বলে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল।
তদন্তকারী দল চলে যাওয়ার পরে বাড়ির দরজায় মা ও
স্ত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে হৃদয় ঘোষ। সোমবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য নিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “পাড়ুইয়ের ঘটনা এখন বিচারাধীন। স্পিকার বিবেচক হলে মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ যাওয়ার কথা।” কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ার মতে, “অনুব্রত নিয়ে যা হচ্ছে, বিপজ্জনক প্রবণতা! অনুব্রতের পাশে দাঁড়িয়ে ওঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ঘৃণা ও হুমকির সংস্কৃতিকেই লালন-পালন করছেন!”
বিরোধীদের বক্তব্য, যে মঞ্চ থেকেই বলুন, মমতা মন্তব্য করা মানেই তা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য। তা ছাড়া, সাগরবাবুর পুত্রবধূ শিবানী ঘোষের অভিযোগ ছিল, ২১ জুলাই রাতে হামলার পরে তাঁর শ্বশুরমশাইকে গুরুতর জখম অবস্থায় ফেলে রেখে পুলিশ তাঁদের দিয়ে জবরদস্তি সাদা কাগজে সই করায়। পরে তাতে ক’জনের নাম লিখিয়ে তাদের গ্রেফতার করায় আড়ালে চলে যায় আসল অপরাধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, শিবানীদেবী রেজিস্ট্রি ডাকে বীরভূমের তৎকালীন পুলিশ সুপারের কাছে তাঁর অভিযোগ পাঠিয়েছিলেন। জেলা পুলিশ প্রথমে তাকে এফআইআর হিসেবে গণ্যই করেনি। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয় ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে। যার এক নম্বরে রয়েছে অনুব্রতর নাম।
সিট-এর প্রতিনিধিরা এ দিন পাড়ুইয়ে গেলে, তাঁদের কাছেও জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করার অভিযোগ করেন শিবানীদেবী। তাঁর দাবি, ঘটনার রাতে পুলিশ পড়ে থাকা রক্তের দাগ মুছে ফেলার জন্য চাপ দিয়েছিল। সাগরবাবুর জামাকাপড়ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে বলেছিল। তদন্তকারী দল পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামে সাগরবাবুর বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সময় সাগরবাবুর পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গি সংগ্রহ করে। ব্লেড ও খুর্পি দিয়ে রান্নাঘরের মেঝে থেকে শুকিয়ে যাওয়া রক্তও সংগ্রহ করে। বিকেলে সাগরবাবুর বাড়িতে যান এডিজি (সিআইডি) রামফল পওয়ার এবং আইজি (সিআইডি) নীরজ সিংহ। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে শিবানীদেবী বলেন, “আসল অপরাধীদের আড়াল করতেই জেলা পুলিশ প্রমাণ লোপের চেষ্টা করেছিল। তা না হলে পুলিশ গুলিবিদ্ধ শ্বশুরমশাইয়ের রক্তের দাগ মেঝে থেকে মুছতে চাপ দেবে কেন?”
পাড়ুই থানার তৎকালীন ওসি সম্পদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এই হত্যা মামলার আগের তদন্তকারী অফিসার দ্বিজরাজ সাহানার দাবি, “ঘটনাস্থল থেকে যা পেয়েছি, সংগ্রহ করেছি। কাউকে আড়াল করতে কিছু করিনি। অভিযোগ ঠিক নয়।” ফোন এবং এসএমএস করে এ দিন এ ব্যাপারে অনুব্রতবাবুর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.