কলকাতা নাইট রাইডার্স সংসারে ঢুকে পড়েছেন, মাত্র দিন পাঁচেক হয়েছে। কিন্তু মাত্র পাঁচ দিনেই নাইট সংসারে খুশির হাওয়া তুলে দিলেন উনিশ বছরের কুলদীপ যাদব।
অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে!
মূলত, তাঁর এবং আমির গনির দাপটে পাঁচ উইকেটে স্কটল্যান্ডকে (৮৮) হারিয়ে দিল ভারত (৯২-৫)। গনি এবং কুলদীপ দু’জনেই পেলেন চারটে করে উইকেট। কুলদীপের চার উইকেটের (১০-১-২৮-৪) মাহাত্ম্য বেশি কারণ সেটা হ্যাটট্রিক সমেত। যার পর কেকেআর শিবির থেকে কেউ কেউ বলতে শুরু করে দিলেন, নিলামের স্ট্র্যাটেজি তা হলে ক্লিক করে গেল। কেকেআরের পেস অ্যাটাক যতটা শক্তিশালী, স্পিন বিভাগও যে ততটা, সোমবারের পর তা প্রমাণিত।
শোনা গেল, নিলামে নাকি স্পিনার নিয়ে নির্দিষ্ট একটা কম্বিনেশনে যেতে চাইছিল কেকেআর। সুনীল নারিন ছিলেন। পীযূষ চাওলাকেও পেয়ে যাওয়ার পর ব্যাপারটা দাঁড়ায় অফস্পিন প্লাস লেগস্পিন। স্পিন বিভাগে বৈচিত্র বাড়াতে দরকার ছিল বাঁ হাতি স্পিনারের। ইকবাল আবদুল্লাহ না থাকায় প্রয়োজন ছিল তাঁরই মতো তরুণ কোনও স্পিনারের। সে কারণেই নাকি যাওয়া হয় কুলদীপের জন্য। |
যিনি শুধু বাঁ হাতি স্পিনার নন। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র বিশেষজ্ঞ ‘চায়নাম্যান’ বোলার। ক্রিকেট বিশ্বেই স্পিনের যে প্রজাতিকে বিশেষ দেখা যায় না। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চায়নাম্যান বোলার হলেন ব্র্যাড হগ। যাঁকে ৪৩ বছর বয়সেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া।
শোনা গেল, কুলদীপকে নেওয়ার পর কেকেআরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ ফোন করেছিলেন পীযূষ চাওলাকে। যেহেতু কুলদীপ নিজেও উত্তরপ্রদেশজাত। জানতে চাওয়া হয়, কুলদীপ স্পিনার কেমন? চাওলা নাকি আশ্বাস দেন যে, কুলদীপের মধ্যে বড় স্পিনার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল ভাবেই আছে। যে প্রতিভা সোমবার চমকে দিল স্কটল্যান্ডকে। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে শুধু প্রথম হ্যাটট্রিকই করলেন না, তাঁর স্পিনের দাপটে মাত্র ৮৮ রানে অলআউটও হয়ে গেল স্কটল্যান্ড।
কুলদীপের উত্থানের কাহিনিও সমান চমকপ্রদ। কানপুরের ছেলে। বছর দেড়-দুই আগে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে ‘ট্যালেন্ট স্পট’ করার জন্য দেশের অনামী অঞ্চলে যখন বিশেষজ্ঞরা গিয়েছিলেন, তখনই খোঁজ পাওয়া যায় কুলদীপের। কাছাকাছি সময়ে জুনিয়র জাতীয় নির্বাচকরাও কুলদীপ নামের এক ‘চায়নাম্যান’ বোলারের সন্ধান পান। হিমাচলপ্রদেশে উত্তরপ্রদেশ বনাম হিমাচল ম্যাচে। অন্য এক নির্বাচকের কথায় জুনিয়র জাতীয় নির্বাচক অরূপ ভট্টাচার্য হিমাচলে গিয়ে দেখতে পান যে অল্প বয়সের একটা ছেলে পাটা উইকেটেও সাত-সাতটা উইকেট তুলে নিচ্ছে বিপক্ষের!
এমনিতেই ভারতীয় স্পিনের পরবর্তী সেরা বাজি হিসেবে ধরা হচ্ছে কুলদীপ এবং বাংলার গনিকে। কিন্তু নির্বাচকদের কেউ কেউ বলে দিচ্ছেন, গনি প্রতিভাবান। কিন্তু কুলদীপ অন্য পর্যায়ের স্পিনার। বড় টার্ন যেমন করাতে পারেন, তেমনই জোরে আর্ম বল করতে পারেন, স্বচ্ছন্দ চায়নাম্যান (লেগস্পিনারের ক্ষেত্রে যা গুগলি) ডেলিভারিতেও। বলা হচ্ছে, অনূর্ধ্ব উনিশ জাতীয় দল সম্প্রতি যে সব সফরে গিয়েছে বা টুর্নামেন্টে নেমেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেরা বোলার কুলদীপ। উপমহাদেশীয় পিচে তো বটেই, বিদেশেও নাকি তাঁর উইকেট পেতে অসুবিধে হয় না। সঙ্গে ধরতে হবে এই ‘চায়নাম্যান’ বোলারের অধ্যাবসায়। নেটে তিন থেকে চার ঘণ্টা অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া কুলদীপের কাছে কোনও ব্যাপার নয়। বরং রোজনামচা। বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক কি আর রাতারাতি হয়? |