ধোনির নতুন সতীর্থের হাতে টেস্ট জয়ের স্বপ্ন কার্যত শেষ
এই বোলিং নিয়ে আর এক নম্বর
হওয়ার আশা না করাই ভাল
টেস্ট বিশ্বে যারা ভাল টিম হয়, তাদের বোলিং ইউনিটে একটা প্রিন্সিপল সাধারণ ভাবে চোখে পড়ে। নিজের ভাল দিনে শুধু ভাল করব, এমন নয়। খারাপ দিনেও এমন বল করব যাতে উইকেট না পেলেও রানটা আটকে দেওয়া যায়। জঘন্য বোলিং করে ম্যাচটা বিপক্ষের হাতে তুলে দেব এমন থিওরি কোনও চ্যাম্পিয়ন টেস্ট সাইডের হতে পারে না।
ভারতীয় বোলিংকে দেখে মনে হচ্ছে উপরের প্রিন্সিপলটা মানার ইচ্ছেই নেই। ধোনিরা আগে টেস্টে এক নম্বর ছিল, তার পর দুই। এই টেস্ট সিরিজটা হেরে গেলে তিনে নেমে যাবে। শুনলে খারাপ লাগবে, যদি এ ভাবেই চলতে থাকে ভারতীয় বোলিং, যদি শৃঙ্খলার কোনও চিহ্ন না থাকে, টেস্টে এক নম্বরে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নটা ছেড়ে দেওয়া ভাল।
সোমবার সকালে রীতিমতো আশ্চর্যই লাগছিল ইশান্ত, জাহিরদের বোলিং দেখে। টেস্ট ম্যাচের পাঁচ দিনে সবক’টা সেশনেই কোনও টিম দাপট দেখিয়ে যাবে, সম্ভব নয়। কিন্তু উইকেট না পেলে তুমি তো ঠিক জায়গায় বলটা ফেলবে? যাতে রানটা আটকায়? ব্যাটসম্যানা রান না পেলে অধৈর্য হবেই আর সঙ্গে সঙ্গে বোলারের উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাটাও বেড়ে যাবে। ইশান্ত, শামি, জাহিরদের নিয়ে তৈরি ভারতীয় বোলিং লাইন আপে বিপক্ষের কুড়িটা উইকেট তোলার ক্ষমতা আছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু সেটা স্রেফ ওদের নিজেদের দিনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যুদ্ধ এখন এতটাই কঠিন যে এক দিন ভাল বল করলাম, আর তারপর চার দিন খারাপ বল করলাম সেই থিওরিতে ম্যাচ বার করা যায় না। ভারত রবিবার প্রচুর উইকেট তুলেছিল, এমন নয়। কিন্তু রানটা দেয়নি। ৫ উইকেট পড়েছিল, কিন্তু নিউজিল্যান্ডের রান আড়াইশোতে আটকে ছিল। আর আজ উইকেট পড়ল মোটে একটা, রান উঠল তিনশো কুড়ি!

বল করতে হল ধোনিকেও। ছবি: এএফপি।
মঙ্গলবার সকালে যখন এই ম্যাচ রিপোর্টটা পড়বেন, ম্যাচ কোন দিকে গেল জেনে যাবেন। এ দিন রাত পর্যন্ত যা পরিস্থিতি দেখছি, ব্রেন্ডন ম্যাকালমরা একমাত্র দয়া না করলে টেস্টে ভারতের জয়ের সামান্যতম আশাটাও তৈরি হওয়া কঠিন। লিড এখনই তিনশো পঁচিশ রানের। চারটে উইকেট বাকি। যদি নিউজিল্যান্ড মঙ্গলবার এক ঘণ্টাও ব্যাট করে তা হলে রানটা সাড়ে তিনশো পেরিয়ে পৌনে চারশোর দিকে যাবে। যে রানটা তুলতে ৭৫-৮০ ওভার মতো হয়তো হাতে থাকবে ধোনিদের। একমাত্র নিউজিল্যান্ড যদি কাল শুরুতেই ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয়, জমজমাট একটা টেস্ট যুদ্ধ দেখা যেতে পারে। ভারত তখন রানটা তাড়া করতে যাবেই যেহেতু ড্র থাকলেও সিরিজটা নিউজিল্যান্ডই জিতবে। তাতেও যে ভারত জিতবে কেউ বলতে পারে না। ওভার পিছু চার-পাঁচ রান তুলতে গিয়ে হয়তো তাড়াতাড়ি চারটে উইকেটই চলে গেল, তখন? তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আদৌ নিউজিল্যান্ড সেই চ্যালেঞ্জটা দেবে কি না।
টেস্ট ম্যাচে শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক। একটা ব্যাপারে আমি মুগ্ধ। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ইনিংসটা দেখে। সাম্প্রতিকে যে ক’টা ভাল টেস্ট ইনিংস দেখেছি, তার মধ্যে অন্যতম সেরা। ম্যাকালাম ২৮১ করে নট আউট আছে সেটা বড় কথা নয়। বড় ব্যাপার হচ্ছে, কী ভাবে ইনিংসটাকে ও তৈরি করেছে। যখন নেমেছিল, নিউজিল্যান্ড তখন পরপর উইকেট হারিয়ে চাপে। যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমী জানে ম্যাকালম কী রকম মেজাজে খেলে থাকে সাধারণত। রবিবার দেখলাম নিজের ইনিংসের পেস পুরো পাল্টে ফেলল। আড়াইশো বল খেলে সেঞ্চুরি করল। দিনের শেষে ১১৪ নট আউট থাকল। কিন্তু যখন বুঝল যে, প্রয়োজনীয় ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’টা হয়ে গিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আসল ম্যাকালাম। সোমবার সারা দিনে একাই ১৬০ করে গেল! বেসিন রিজার্ভের উইকেট এখন খুব ভাল ব্যাটিং ট্র্যাক হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ম্যাকালাম, ওয়াটলিং বা নিশামের সামনে ইশান্তরা যে বলটাও করেছে, এক কথায় জঘন্য। চারটে বল ভাল করে পাঁচ আর ছ’নম্বরটা বাজে লেংথে। অধিকাংশ সময় যেগুলো বাউন্ডারি হল। আরে, ম্যাকালামকে ভাল বোলিং করেও অনেক সময় আটকানো যায় না। আর এ সব বোলিং ওর বিরুদ্ধে করা যায় নাকি?
ম্যাকালামের মারে
• ১৯ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান হতে আর যত রান বাকি ম্যাকালামের। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মার্টিন ক্রো-র ২৯৯।
• ২৮১ টেস্টে যে কোনও দেশের দ্বিতীয় ইনিংসে করা ব্যক্তিগত চতুর্থ সর্বোচ্চ রান। সর্বোচ্চ পাকিস্তানের হানিফ মহম্মদের ৩৩৭ রান।
• ৫১৪ দু’টেস্টের সিরিজে সব দেশ মিলিয়ে কোনও ব্যাটসম্যানের চতুর্থ সর্বাধিক মোট রান। সর্বাধিক জয়সূর্যের ৫৭১, ভারতের বিরুদ্ধেই।
• ৭২৭ ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে মিনিটের বিচারে দ্বিতীয় সর্বাধিক সময় ধরে খেলা ইনিংস। এখন পর্যন্ত সেরা শ্রীলঙ্কার সনৎ জয়সূর্যের ৭৯৯ মিনিটের ইনিংস।
• ৩৫২ টেস্টে ষষ্ঠ উইকেট পার্টনারশিপে বিশ্বরেকর্ড ম্যাকালাম-ওয়াটলিংয়ের। পূর্ব রেকর্ড ৪ বছর ২ মাস ২৮ দিন আগে ছিল ভারতেরই বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার মাহেলা ও প্রসন্ন জয়বর্ধনের ৩৫১। তার আগে ষষ্ঠ উইকেটে বিশ্বরেকর্ড ব্র্যাডম্যান-ফিঙ্গলটনের স্থায়ী ছিল ৭২ বছর ১০ মাস ১৩ দিন।
• ৪৭৭ টেস্টে ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট জুটি মিলিয়ে ওঠা সর্বোচ্চ রান। ৭৭ বছরের পুরনো বিশ্বরেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ+সপ্তম উইকেটে তোলা ৪১৪ রান।
• ২২৪ ও ২৮১ টেস্টে উপর্যুপরি ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করার অষ্টম নজির ম্যাকালামের। আগের সাত ব্র্যাডম্যান, হ্যামন্ড, কাম্বলী, গ্রেম স্মিথ, সঙ্গকারা, পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্ক।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.