ওয়েলিংটনে তৃতীয় দিনের শেষে ভারত যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে টেস্টটা জিতে সিরিজে সমতা ফেরানো এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার। বিদেশে টানা হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এই অ্যাওয়ে জয়টা ভারতীয় দলের খুব দরকার ছিল।
আমি তো আগেই লিখেছিলাম যে, প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই ভারতের ম্যাচে ফেরার লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। আমাদের বোলাররা যে ভাবে আরও এক বার পিচ আর আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে বিপক্ষকে দুমড়ে দিল, দেখে মন ভাল হয়ে গেল। আগের অ্যাওয়ে সিরিজে, এমনকী নিউজিল্যান্ডে প্রথম টেস্টের সঙ্গেও ভারতের এই পারফরম্যান্সে প্রধান ফারাক অবশ্যই বোলিংয়ে। এখানে ভারতীয় বোলাররা প্রথম দিন থেকেই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তার থেকেও বড় কথা, দলের যখন সবচেয়ে বেশি দরকার, ঠিক তখনই আমাদের বোলিং ইউনিট নিজেদের সেরাটা বের করে এনেছে। সেটা না পারলে টেস্ট ম্যাচে আগে বল করা সব সময়েই ঝুঁকির হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দলকে প্রথম দিনেই চালকের আসনে বসিয়ে দেওয়াটা নিশ্চিত করল আমাদের পেস-ত্রয়ী। |
৯ রানে ম্যাকালামের ক্যাচ ফেলছেন কোহলি |
ইশান্ত শর্মার নামটা আলাদা করে বলতেই হবে। অসাধারণ বল করছে। সঙ্গে উল্টো দিক থেকে সমান তালে চাপ রেখে যাচ্ছে মহম্মদ শামি আর জাহির খান। আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি যে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যদি বিদেশের মাঠে বড় রান তুলে দেয়, তা হলে সবুজ, পেস-সহায়ক উইকেটে সব সময় ভারতই এগিয়ে থাকবে। কারণ আমাদের বোলাররাও উইকেট আর পরিবেশের ফায়দা তুলে উইকেট-টেকিং ইউনিট হয়ে উঠবে।
আসলে জাহিরের দলে ফেরাটা আশীর্বাদ হয়েছে। ভারতীয় বোলিং আক্রমণের চেহারাই পাল্টে গিয়ে আরও উন্নত আর আগ্রাসী দেখাচ্ছে। জাহিরের মানের বোলারের নিয়ন্ত্রণ আর বৈচিত্র তো আছেই, বোলিংয়ে বাঁ-ডান কম্বিনেশনটাও হচ্ছে। ইশান্ত আর উল্লেখজনক উন্নতি করা শামির ডান-হাতি আক্রমণের পাশে বাঁ-হাতি জাহিরের উপস্থিতি ভারতীয় আক্রমণে বাড়তি ছোবল আমদানি করেছে।
বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করার পর দলকে আরও ভাল জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার দায়টা কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ছিল। মানতে হচ্ছে শিখর ধবনরা সেই কাজটা দারুণ ভাবে করে দেখাল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ব্যর্থতার পরে এই সিরিজের ওয়ান ডে পর্বেও ব্যাট হাতে বেশ অসহায় দেখিয়েছিল শিখরকে। কিন্তু এত দিন রানের মধ্যে না থাকার বিশাল চাপ ও পরপর দু’টো টেস্ট ইনিংসে দুর্দান্ত ভাবে কাটিয়ে উঠল! অকল্যান্ডের ১১৫-র পর এখানে ৯৮ রান। ইনিংস দু’টো শিখরকে শুধু আরও ভাল ব্যাটসম্যান করে তুলবে না, ওর উপর নির্বাচকদের আস্থাও বাড়িয়ে দেবে যে হ্যাঁ, যে-কোনও পরিস্থিতিতে খেলে দেওয়ার জন্য এর উপর নির্ভর করা যায়। সিমিং পিচে শিখর যে ইতিবাচক মানসিকতার সঙ্গে ব্যাট করল, দেখে মনে হচ্ছিল ব্যাটিং ব্যাপারটা যেন কতই না সহজ!
আর এক জন ব্যাটসম্যানও খুব চুপচাপ পারফরম্যান্সের জোরে দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলছে। অজিঙ্ক রাহানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় দারুণ খেলেছিল ছেলেটা। এখানেও ঠিক যখন দলের ওর কাছ থেকে বড় রান দরকার, চোখ ধাঁধানো ইনিংসটা খেলে গেল! রাহানে নামার সময় ভারত ছিল ১৬৫ রানে পাঁচ উইকেট। সেই সময় আর একটা উইকেট পড়া মানে নিউজিল্যান্ড হইহই করে ম্যাচে ফিরে আসবে। কিন্তু রাহানে দারুণ খেলে দিল। তৃতীয় দিনের শেষে স্কোর বোর্ডের দিকে তাকালে, ওর ইনিংসটার গুরুত্ব আরও মোক্ষম ভাবে বোঝা যাবে। রাহানের টেকনিক নিখুঁত। মানসিকতা দারুণ আর চাপের মুখে শান্ত থাকতে পারে। সব মিলিয়ে টেস্টে ভারতীয় মিডল অর্ডারের ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারে ও।
এর পরেও কিন্তু বলব, সোমবার সকালটা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তরুণ পেসাররা জেতানোর চিন্তায় অতি উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কিন্তু লক্ষ্যে স্থির থাকা দরকার। আশা করি অভিজ্ঞ ধোনি ওদের শান্ত রাখতে পারবে। জরুরি হল বলটা ঠিক জায়গায় রেখে প্রতিপক্ষের উপর একটানা চাপ বাড়িয়ে যাওয়া। পিচে এখনও পেসারদের জন্য যথেষ্ট মশলা রয়েছে। দ্বিতীয় বলটাও প্রায় নতুনই আছে। মাথা ঠান্ডা করে বোলিং করলে বাকিটা আপনিই হবে। |
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস
(গত দিন ২৪-১ এর পর) |
রাদারফোর্ড ক ধোনি বো জাহির ৩৫
উইলিয়ামসন ক ধোনি বো জাহির ৭
লাথাম ক ধোনি বো শামি ২৯
ব্রেন্ডন ব্যাটিং ১১৪
অ্যান্ডারসন ক ও বো জাডেজা ২
ওয়াটলিং ব্যাটিং ৫২
অতিরিক্ত ১২
মোট ২৫২-৫।
পতন: ২৭, ৫২, ৮৭, ৯৪।
বোলিং: ইশান্ত ২৩-৩-৬৩-০, জাহির ২৫-৮-৬০-৩
শামি ২৫-৪-৭২-১, জাডেজা ২৬-৫-৪৯-১। |
|
|