শান্ত রাহানেতে শাপমুক্তির দিকে ভারত
দ্রাবিড়ের জন্য বিশাল টোপও ফিরিয়েছিল
নিজের টেস্ট জীবনের প্রথম সেঞ্চুরি করে ওঠার পর শুনলাম অজিঙ্ক রাহানে বলেছে, রাহুল দ্রাবিড় ওর রোল মডেল। দ্রাবিড়কে সামনে রেখে ও নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার তৈরি করছে। সেঞ্চুরির পর সচিন তেন্ডুলকরকে যেমন ধন্যবাদ দিতে চায়, তেমন রাহুলকেও চায়।
কথাগুলো শুনে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। গত বছর আইপিএলের। আমি নাম করব না। কিন্তু ট্রান্সফার উইনডোর সময় একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি রাহানেকে রাজস্থান রয়্যালস থেকে বার করার জন্য অবিশ্বাস্য টাকা অফার করেছিল। রাজস্থান থেকে রাহানে যা পায়, তার প্রায় তিন-চার গুণ। শুনলে অবিশ্বাস্য লাগবে। রাহানে সে দিন প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিয়েছিল (রাজস্থান ফ্র্যাঞ্চাইজিও ওই টাকার একটা অংশ পেত। তাই ওদেরও সে রকম আপত্তি ছিল না রাহানেকে ছাড়তে)! বলে দিয়েছিল, রাজস্থানে থাকলে প্রত্যেকটা ম্যাচ ও খেলতে পারবে। অন্য কোথাও গেলে যেটা শিওর নয়। তার চেয়েও বড় ব্যাপার রাজস্থানে রাহুল দ্রাবিড় আছে। যার সঙ্গে ও খেলার সুযোগটা অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিতে গেলে পাবে না। টাকাটা ওর কাছে বড় নয়। দ্রাবিড়ের সঙ্গে খেলাটা বড়।

সেঞ্চুরির তৃপ্তি। শনিবার ওয়েলিংটনে। ছবি: এএফপি।
আইপিএল প্রজন্মের কোনও ক্রিকেটার স্রেফ নিজের আদর্শের সঙ্গে খেলবে বলে মোটা অঙ্কের প্রস্তাব অক্লেশে ফিরিয়ে দিচ্ছে, ভাবা যায়! আসলে রাহানেদের প্রজন্মে দু’ধরনের ক্রিকেটার আছে। এক দল মনে করে, এক বছর আইপিএল খেলব। কোটি কোটি টাকা রোজগার করব। ব্যস। আর কিছু দরকার নেই। আর এক দল মনে করে, ক্রিকেটটা শুধু খেলব মন দিয়ে। টাকা তা হলে আপনা-আপনিই আসবে। রাহানে এই দ্বিতীয় ঘরানার ক্রিকেটার। মনে আছে, সে দিন ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর কেউ কেউ ওকে পাগল বলেছিল! বলেছিল, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করল। কিন্তু ও যে আবেগের বশে সিদ্ধান্তটা নেয়নি, পরে কিন্তু প্রমাণিত। রাজস্থানের হয়ে ও গত বার প্রতিটা ম্যাচ খেলেছে। সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছে।
বেসিন রিজার্ভে সেঞ্চুরির পর অনেককে এখন বলতে শুনছি রাহানের ম্যাচিওরিটির কথা। কেউ কেউ বলছে, ছেলেটাকে ব্যাট করতে দেখে মনে হল অভিজ্ঞ, পোড়খাওয়া কেউ ব্যাট করছে। কিন্তু কতটা চাপের মধ্যে ওকে ইনিংসটা খেলতে হয়েছে ক’জন জানে? এই সফরের মাঝপথেই শুনেছিলাম যে, রাহানের এটাই শেষ সুযোগ। ও যদি পারে, থাকবে টিমে। নইলে অশ্বিনকে অলরাউন্ডার হিসেবে ব্যবহার করা হবে পরের সিরিজ থেকে। আমি নিশ্চিত যে রাহানেও খবরটা জানত। সেখান থেকে সেঞ্চুরি করে গেল। মাথা ঠান্ডা রেখে। যেটা এক দিনে নয়, বহু দিন খাটাখাটনির পর ওকে আয়ত্ত করতে হয়েছে।
রাহানের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল, ও মাথা ঠিক রাখতে জানে। সাফল্য, টাকা এ সবে ভেসে যাওয়ার ছেলে ও নয়। ওর প্রজন্মের আর পাঁচ জনের মতো রাহানেরও আইপ্যাড, আই ফোন ভাল লাগে। পছন্দ করে দামি গাড়ি চড়তে। কিন্তু ক্রিকেটকে সবচেয়ে আগে রেখে। গত আইপিএলের আরও একটা উদাহরণ দিই। তিন-চারটে ফ্র্যাঞ্চাইজি তখন রাজস্থানে। আমিও ছিলাম। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেটাররা সন্ধেবেলা বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু রাহানেকে দেখলাম গেল না। বরং আমার সঙ্গে ডিনারে গেল। সেখানে গিয়ে আর কয়েক জনকে নিয়ে ক্রিকেট আড্ডায় ডুবে গেল।
আমার তো মনে হয় টেস্টে ছ’নম্বর নয়। তিন নম্বর ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এই মুহূর্তে টেকনিক্যালি সবচেয়ে ভাল দুই ব্যাটসম্যানের নাম রাহানে আর পূজারা। আমার মতে, পূজারা চারে যাক। রাহানে তিনে আসুক টেস্টে। আর ওয়ান ডে-তে ওকে দিয়ে ওপেন করানো উচিত। এমনিতে রাহানের টেকনিক, টেম্পারামেন্ট, পরিশ্রম কোনও কিছু নেই প্রশ্ন ওঠার জায়গা নেই। শুধু একটা ব্যাপার আছে। ওকে দেখে স্বাভাবিক ভাবে আত্মবিশ্বাসী মনে হয় না। যেটা বিরাটের আছে। বিরাট যদি ভুলও করে, কেউ বুঝতে পারবে না ভুল করল। এতটা কনফিডেন্ট থাকে। রাহানের সেটা নয়। কিন্তু আজকের সেঞ্চুরির পর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওর সমস্যাটা থাকা উচিত নয়। ওর টিমেরও নয়।
টিম ধোনিকে আমার একটাই অনুরোধ। ছেলেটার উপর ভরসা রাখো। ব্যর্থ হলেই ছুড়ে ফেলো না। বরং আত্মবিশ্বাসটা সাপ্লাই করো। কারণ ছেলেটা যে কত বড় ট্যালেন্ট, সেটা ও নিজেও জানে না!

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.