তরুণ ভারতীয় দলের কাছে বিদেশে এই দিনটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। টেস্ট ম্যাচের প্রথম দু’দিন ওরা শুধু নিজেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত তৈরিই করেনি, প্রতি বার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। ওরা যথেষ্ট দৃঢ় মনোভাব নিয়ে খেলছে, যেটা নিউজিল্যান্ডকে বেশ চমকেই দিয়েছে।
ফ্রন্টফুটে ভুল খেলে প্রথম দিন যখন ভারতের দুটো উইকেট পড়ে গেল, তখন টিমটা নাছোড় ছিল। মুরলী বিজয় তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাওয়ার সময়ও। দেড়শো রানের আশেপাশে পাঁচটা উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও। দ্বিতীয় নতুন বল আসার আগে বেকায়দা সময় বিরাট কোহলির আউট হয়ে যাওয়াও টিমের মনোভাব নষ্ট করতে পারেনি। এ সব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভারত মাটি আঁকড়ে থাকতে না পারলে ২৪৬ রানের এই লিডটা স্বপ্ন হয়েই থাকত।
এই টিম ইন্ডিয়ার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে, সেটা খুব পরিষ্কার। দুটো বিদেশ সফরে বেশ কয়েকটা কেরিয়ার খুব ভাল ভাবে শুরু হয়েছে। পূজারা আর কোহলি নতুন করে নিজেদের মান প্রমাণ করে দিয়েছে। শিখর ধবন আর অজিঙ্ক রাহানে ভাল জায়গায় আছে। ব্যাটসম্যান হিসেবে সবে নিজের জায়গাটা খুঁজে পাচ্ছে রবীন্দ্র জাডেজা। মহম্মদ শামি সবার শ্রদ্ধা ছিনিয়ে নিয়েছে। ইশান্ত শর্মার পুনর্জন্ম যদি সত্যি সত্যিই হয়ে থাকে, তা হলে এই টিম ঘিরে অনেক অশান্তি মিটিয়ে দিতে পারবে ও। তবে একটা কথা বলব। এখন কয়েক দিন ওয়ান ডে থেকে ইশান্তকে দূরে রাখাই ভাল।
শনিবার ব্যাটিং তারকা অবশ্যই ছিল রাহানে। কয়েকটা জিনিস দেখলে বোঝা যায়, কারও মধ্যে সত্যি প্রতিভা আছে কি না। সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে রাহানের তাড়াহুড়ো না করা আর সেঞ্চুরি করে ওর একটুও আবেগ না দেখানো এই দুটো জিনিস দেখে মনে হচ্ছে, ছ’নম্বরের কঠিন জায়গায় ভিভিএস লক্ষ্মণের উত্তরসুরি হওয়ার ক্ষমতা আছে রাহানের মধ্যে। শেষ চারটে উইকেটের সঙ্গে ক্রিজে থেকে দুশোর বেশি রান তুলে দিল রাহানে। এই ছেলেটা ঠিক রাস্তায় এগোচ্ছে।
শনিবারের খেলার যে অংশটা আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি সেটা শুরু হল ধোনি ব্যাট করতে নামার সময়। তখন কোহলি সবে আউট হয়েছে। অফসাইডে সাত জন ফিল্ডার। অফস্টাম্পের ঠিক বাইরে নিখুঁত ফুল লেংথে বল করছিল নিল ওয়াগনার। দু’জন শর্ট কভার আর এক জন মিড-অফ কোহলিকে প্রায় শেকল দিয়ে বেঁধে ফেলেছিল। ওয়াগনারের ইন-ডিপিং ফুল ডেলিভারিগুলোকে কোনও ভাবেই উপেক্ষা করা যাচ্ছিল না। আর তখন যে হালকা হাওয়াটা ছিল, তাতে যে কোনও শট ফিল্ডারের হাতে চলে যাওয়ার সমূহ বিপদ ছিল।
বেশ অনেকক্ষণ নিজের উইকেটটা বাঁচিয়ে রেখেও শেষ পর্যন্ত বিপক্ষের ফাঁদে পড়ে গেল কোহলি। ভারতের লিড তখন খুব কম। আর একটা ব্যাপার প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে, কয়েক ওভার পরে দ্বিতীয় নতুন বলটা নিয়ে ভারতের টেল ধ্বংস করে দেবে নিউজিল্যান্ড। আর ঠিক এই সময়টায় ওয়াগনারকে পরপর চারটে বাউন্ডারি মারল ধোনি। ক্রিজে শাফল করে কী নিখুঁত ড্রাইভ, পুল আর কাট করল!
তার পরপরই ব্রেক কষে রাহানের সঙ্গে অনেকক্ষণ থাকল ধোনি। ওদের ১২০ রানের জুটিটাই নিউজিল্যান্ডের মেরুদণ্ড ভেঙে দিল। ব্যাটিং গিয়ার কী ভাবে পাল্টাতে হয়, তার শিক্ষা হয়ে থাকল এই জুটিটা। যে ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত শিখতে পারেনি জাডেজা।
|
ভারত প্রথম ইনিংস ৪৩৮ |
ধবন ক ওয়াটলিং বো সাউদি ৯৮
ইশান্ত ক ওয়াটলিং বো বোল্ট ২৬
কোহলি ক রাদারফোর্ড বো ওয়াগনার ৩৮
রোহিত বো নিশাম ০
রাহানে ক বোল্ট বো সাউদি ১১৮
ধোনি ক ওয়াটলিং বো বোল্ট ৬৮
জাডেজা ক ফুলটন বো ওয়াগনার ২৬
জাহির ক ওয়াটলিং বো ওয়াগনার ২২
শামি ন. আ. ০
অতিরিক্ত ২১
মোট ৪৩৮।
পতন: ২, ৮৯, ১৪১, ১৬২, ১৬৫, ২২৮, ৩৪৮, ৩৮৫, ৪২৩।
বোলিং: বোল্ট ২৬-৭-৯৯-৩, সাউদি ২০-০-৯৩-৩, ওয়াগনার ২২.৪-৩-১০৬-৩
অ্যান্ডারসন ১৬-২-৬৬-০, নিশাম ১৮-২-৬২-১
|
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ১৯২
দ্বিতীয় ইনিংস ২৪-১ |
ফুলটন এলবিডব্লিউ জাহির ১
রাদারফোর্ড ন.আ. ১৮
উইলিয়ামসন ন.আ. ৪
অতিরিক্ত ১
মোট ২৪-১।
পতন: ১।
বোলিং: ইশান্ত ৩-০-৯-০, জাহির ৩-২-৭-১, শামি ৩-০-৮-০ |
|
|