‘গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা!’সুকুমার রায়ের বিখ্যাত লাইন-ই যেন এখন ক্রিকেট বিশ্বের সেরা পেস বোলিংয়ের ‘সিগনেচার মার্ক’! মিচেল জনসন দীর্ঘ ঝোলা গোঁফ রাখার পর থেকেই যে মাস চারেক যাবৎ অস্ট্রেলীয় পেসারের বলে আগুন। যে আগুনে অ্যাসেজে ইংল্যান্ড ০-৫ পুড়ে ছারখার হওয়ার পর শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টে ২৮১ রানে ধ্বংস।
আর জনসন? সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে কুইন্সল্যান্ডের পেসার তাঁর সাত বছরের টেস্ট কেরিয়ারে সেরা বোলিং পারফরম্যান্স করলেন। ম্যাচে ১২-১২৭। প্রথম ইনিংসে ৭-৬৮’র পর এ দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ৫-৫৯। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার পিটারসেনকে নিজের প্রথম ওভারেই আউট করে জনসন আজ টেস্টে তাঁর আড়াইশো উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন। আপাতত জনসনের ৫৭ টেস্টে ২৫৪ উইকেট। শেষ ছয় টেস্টে জনসনের শিকার ৪৯ উইকেট। যার ঠিক আগের টেস্টটায় গোঁফহীন জনসনের বোলিং হিসাব ছিল দিল্লিতে ভারতের বিরুদ্ধে ১৯-৩-৬০-০।
জনসন: ১২-১২৭। ছবি: এএফপি।
চার মাসের মধ্যে উলটপুরাণ! বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলকে তাদের ঘরের মাঠে এ ভাবে বিধ্বস্ত করায় স্বভাবতই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’-এর জন্য জনসন ছাড়া দ্বিতীয় নামের প্রশ্ন ছিল না। ম্যাচের সেরা হয়ে জনসন যদিও বলেছেন, “আসলে আমাদের ব্যাটসম্যানরা বড় রান তুলে বোলারদের সামনে বিপক্ষকে আক্রমণ করার সুযোগ এনে দিয়েছিল। তার পরে একটা বোলিং ইউনিট হিসাবে আমরা ভাল বল করেছি। যখন পরিকল্পনাগুলো ঠিক খেটে যায় সেটা দারুণ। অ্যাসেজের সাফল্য দক্ষিণ আফ্রিকায়ও ধরে রাখার জন্য এই টেস্টের আগে বেশ নার্ভাস ছিলাম। নিজেকে একটু বেশিই তাতিয়ে ছিলাম। ফলে এ রকম একটা বোলিং হিসাব নিয়ে শেষ করতে পেরে বাড়তি আনন্দ হচ্ছে।”
জনসনদের পেস বোলিংয়ে সেই লিলি-টমসনের যুগের আগ্রাসন যেন আবার ফিরে এসেছে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার দু’ইনিংসেই হায়েস্ট স্কোরার (৯১-এর পর এ দিন ৪৮ রান) এবি ডে’ভিলিয়ার্স বলেই ফেলেছেন, “এই অস্ট্রেলীয় পেস আক্রমণ সামলাতে শারীরিক আঘাত খাওয়ার জন্যও তৈরি থাকতে হবে।” এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে জনসনের বাউন্সার ম্যাকলারেনের হেলমেটে আছড়ে পড়ে একবার। একবার ব্যাট ভেঙে যায় পেসের ধাক্কায়। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯০-৪ তুলে ১৭৪ ওভারে ৪৮২ রানের টার্গেট দিয়েছিল গ্রেম স্মিথের দলকে জিততে। জনসন-হ্যারিস-সিডল ত্রয়ীর দাপটে ৫৯.৪ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ ২০০ রানে। দু’টো করে উইকেট পান হ্যারিস-সিডল।
মিচের আগুনে
• জনসনের ৭ বছর এবং ৫৭ টেস্ট ম্যাচের কেরিয়ারে সেরা বোলিং হিসাব।
• ২৩ বছরের মধ্যে কোনও অস্ট্রেলীয় পেসারের টেস্ট ম্যাচে ১২ উইকেট দখল। শেষ পেয়েছিলেন ’৯১-এ ব্রুস রিড। ভারতের বিরুদ্ধে।
• ৮ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে কোনও পেসারের ম্যাচে ১২ উইকেট দখল। শেষ পেয়েছিলেন ভারতের ইরফান পাঠান। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে।
• ৬০ বছরের মধ্যে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম ব্যবধানে টেস্ট হার।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.