অকল্যান্ডে যেখানে থেমেছিল ভারতীয় বোলাররা, ওয়েলিংটনে সেখান থেকেই শুরু করল। আর তাতেই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা বুঝে নিল, সময় বিশেষে কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে ভারতীয় বোলিং। দুঃখ একটাই— এই আগ্রাসন ইশান্ত-শামিদের বোলিংয়ে যদি আগে দেখা যেত!
কথায় বলে, মানুষ ঠেকে শেখে। ইশান্তের বোধহয় সেটাই হয়েছে। এত দিনে নিউজিল্যান্ডের উইকেট থেকে ভরপুর ফায়দা তুলে নিতে শিখেছে ও। সিরিজের প্রথম টেস্টেই অবশ্য সেটা বোঝাতে শুরু করে দিয়েছিল ইশান্ত। একটু বিশ্লেষণে ঢোকা যাক। উইকেট থেকে সাহায্য পেলে পেস বোলারদের শর্ট বল করার প্রবণতা বাড়ে। ইশান্তের বোলিংয়েও তা দেখা যাচ্ছিল। এখন ও যা করছে তা হল, লেংথটাকে ইঞ্চি ছয়েক বাড়িয়ে দিচ্ছে আর উইকেটের একটু উপরের দিকে, ব্যাটসম্যানের আর একটু কাছাকাছি বল ফেলছে। ফলে ব্যাটসম্যান বলটা খেলতে বাধ্য হচ্ছে। শর্ট লেংথে বলের অ্যাঙ্গলটা বড় হয়ে যাওয়ায় ব্যাটসম্যানের পক্ষে সেটা খেলতে অনেক সুবিধা হয়। কিন্তু লেংথ কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাটসম্যান আর সেই সুবিধা পায় না। অপেক্ষাকৃত বেশি বল খেলতে বাধ্য হওয়ায় ভুলের সম্ভাবনাও বাড়ে। এটাই ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখার সবচেয়ে ভাল রাস্তা।
শামি এই ব্যাপারটা অনেক আগেই ধরে নিয়েছে। ফলে টেস্ট আর ওয়ান ডে মিলিয়ে আগের দশটা ম্যাচে ও ২৭টা উইকেট পেয়েছে। শামি যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, ইশান্ত পারেনি বলেই ওর সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু শেষ তিনটে টেস্ট ইনিংসে ওকে ১৫ উইকেট পেতে দেখে নির্বাচকরা ইশান্তকে নিয়ে আশাবাদী হতেই পারেন। তবে ওর বোধহয় লাল বলে বেশি মন দেওয়া উচিত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ দল থেকে ওকে বাদ দিয়ে নির্বাচকরা ওর কাছে এই বার্তাটাই হয়তো পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। বার্তাটা যথেষ্ট ইতিবাচক ভাবে নিতে হবে ইশান্তকে।
নিউজিল্যান্ডকে দুশোরও কম রানে শুইয়ে দেওয়ার পর এ বার বল ব্যাটসম্যানদের কোর্টে। অন্তত সাড়ে তিনশো না করলে এই টেস্টে কিন্তু এগিয়ে থাকতে পারবে না ধোনিরা। ইশান্ত যেমন নিজেকে শুধরে নিতে পেরেছে, তেমন শিখর ধবনও নিজের ব্যাটিংয়ে ঠিকঠাক সংশোধন করে নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ও এখন আগ্রাসন দেখানোর চেয়ে বলগুলো নিখুঁত ‘টাইম’ করার দিকে বেশি মন দিচ্ছে, যা টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে বেশি জরুরি। শিখরের ব্যাট এখন অনেক নিয়ন্ত্রিত। ফলে রান আসছে স্বাভাবিক গতিতে। ভুলভ্রান্তিগুলো অনেক কম হচ্ছে। শনিবার সকালে প্রথম ৪০-৪৫ মিনিট কিউয়ি বোলারদের ঠেকিয়ে রাখতে পারলে বলটা যেমন পুরনো হয়ে যাবে, তেমন সকালের ভিজে ভাবটা কেটে গিয়ে উইকেটটাও ভাল অবস্থায় চলে আসবে। তখন কোহলি, রোহিত, রাহানে, ধোনিদের ব্যাট করতে অনেক সুবিধা হবে। শনিবার ভোরে যখন টিভির সামনে বসব, তখন দেখতে চাই শিখররা একেবারে উইকেট আঁকড়ে পড়ে রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের নতুন বল নিতে কিন্তু এখন পঞ্চাশেরও বেশি ওভার বাকি। তাই প্রথম দশ ওভার রান না করে কাটিয়ে দিলেও ক্ষতি নেই। এ ভাবে পরিকল্পনা করে এগিয়ে গেলে আখেরে লাভই হবে। সাড়ে তিনশোর কমে শেষ করা মানে ম্যাচ ফের ম্যাকালামদের দিকে ঝুঁকে যাওয়া। তাই ম্যাচে থাকতে গেলে এই রানটা তুলতেই হবে ভারতকে। |
• ঝড়ের নাম ইশান্ত
চলতি সফরে এটা ইশান্তের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট শিকার। শুক্রবারের ৬-৫১ টেস্টে তাঁর সেরা বোলিং। এর আগে সেরা ছিল ৬-৫৫ (২০১১-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে, ব্রিজটাউনে)।
চলতি টেস্ট সিরিজে এখন পর্যন্ত ১৫ উইকেট নিয়েছেন। টেস্ট সিরিজে এটা তাঁর দ্বিতীয় সেরা বোলিং হিসেব। সিরিজের সেরা বোলিং হিসেব ২০১১ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন টেস্টে ২২ উইকেট, গড় ১৬.৮৬।
• পেসের প্রত্যাবর্তন
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের বাকি চার উইকেট মহম্মদ শামির। তিরিশ বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথম ইনিংসে বিপক্ষের দশটা উইকেটই নিলেন দুই ভারতীয় পেসার। ১৯৮৩-তে আমদাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ন’টা উইকেট নেন কপিল দেব আর একটা বলবিন্দর সিংহ সাধু। এই ইনিংস মিলিয়ে ১২ বার ভারতীয় পেসাররা এক ইনিংসে বিপক্ষের দশটা উইকেট তুলেছেন। |
|
ওয়েলিংটনের স্কোর |
নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস |
ফুলটন এলবিডব্লিউ ইশান্ত ১৩
রাদারফোর্ড ক বিজয় বো ইশান্ত ১২
উইলিয়ামসন ক রোহিত বো শামি ৪৭
লাথাম ক ধোনি বো ইশান্ত ০
ম্যাকালাম ক জাডেজা বো শামি ৮
ওয়াটলিং ক রোহিত বো ইশান্ত ০
নিশাম ক ধোনি বো শামি ৩৩
সাউদি ক বিজয় বো ইশান্ত ৩২
ওয়াগনার ন.আ ৫
বোল্ট ক পূজারা বো শামি ২
অতিরিক্ত ১৬
মোট ১৯২।
পতন: ২৩, ২৬, ২৬, ৪৫, ৮৪, ৮৬, ১৩৩, ১৬৫, ১৮৪, ১৯২।
বোলিং: জাহির ১৭-৩-৫৭-০, শামি ১৬.৫-৪-৭০-৪,
ইশান্ত ১৭-৩-৫১-৬, জাডেজা ২-১-১২-০।
|
ভারত
প্রথম ইনিংস |
ধবন ব্যাটিং ৭১
বিজয় ক ওয়াটলিং বো সাউদি ২
পূজারা এলবিডব্লিউ বোল্ট ১৯
ইশান্ত ব্যাটিং ৩
অতিরিক্ত ৫
মোট ১০০-২।
পতন: ২, ৮৯।
বোলিং: বোল্ট ৯-৪-১৮-১, সাউদি ৭-০-২০-১,
ওয়াগনার ৭-০-৩৬-০, অ্যান্ডারসন ৩-০-১৪-০, নিশাম ২-০-৮-০। |
|
|