কেকেআরের জন্য এ বার অন্তর্দ্বন্দ্ব সিএবিতে
ডেনের ঐতিহাসিক পদচিহ্ন কালিমালিপ্ত হয়ে গেল দুই কর্তার খেয়োখেয়িতে!
ইডেনে ঘড়ি উন্মোচন অনুষ্ঠানের সুখী ছবি চূর্ণ করে উঠে এল কেকেআর। প্রকাশ্যে বিপন্ন হয়ে পড়ল সিএবি-সংহতি। বেঙ্গালুরু নিলামে কেকেআরে বঙ্গ ক্রিকেটারদের ‘ব্রাত্য’ করে রাখা নিয়ে দুই সিএবি কর্তার যুদ্ধে। ‘ইডেন টাইম’-এর পরিকল্পনা (ঘড়ির নাম) যে দুইয়ের মস্তিষ্কপ্রসূত।
প্রথম জন— সিএবি সহ-সচিব জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি আবার নাইট কর্তাও। নিলামে প্যাডল তুলেছেন এবং লক্ষ্মী-শামিদের ব্রাত্য রাখা নিয়ে বিষোদ্গারের বর্তমান বিষয়বস্তু। সহ-সচিব আজ অগ্ন্যুৎপাত ঘটালেন। বলে দিলেন, “সিএবি কোষাধ্যক্ষ প্রচারলোভী! তাই এত কথা বলেছেন। পরের বার থেকে নিলামে কেকেআরের টেবলে উনিই বসুন!”
দ্বিতীয় জন— সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। যিনি নিলামের পরপরই বলে দিয়েছিলেন, সহ-সচিব উপস্থিত থাকার পরেও এমন কাণ্ড ঘটায় তিনি মুখ লুকোনোর জায়গা পাচ্ছেন না। যিনি এ দিন সহ-সচিবের পাল্টা শুনলেন। এবং শুনিয়ে দিলেন, “নিলামে বসতে রাজি। কিন্তু কারও কারও মতো টাকার বিনিময়ে নয়!”
সন্ধে সাড়ে ছ’টা। ক্লাবহাউসের উপরে ঘড়ি উন্মোচন ঘিরে ইডেন-আকাশে আতসবাজির প্রদর্শনী সবে শেষ হয়েছে। তখনও বোঝা যায়নি আধ ঘণ্টার মধ্যে কেকেআর ঘিরে দুই কর্তার মধ্যে ‘অন্য’ আগুন ধরবে। বিশ্বরূপ যখন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছিলেন, তখন জিৎ নীচে ছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হতেই জিৎ বলতে থাকেন, “গত বছর পর্যন্ত আইপিএলে ক্যাচমেন্ট এরিয়া থেকে চারটে প্লেয়ার নিতেই হত। এ বার নিয়মটা নেই। মাননীয় কোষাধ্যক্ষ নিশ্চয়ই সেটা জানতেন। তখন বিদ্রোহ করেননি কেন?” একটু থেমে, “মনোজ-দিন্দার যখন বোর্ডের চুক্তি গেল, তখনও কিছু বলতে শুনিনি। লক্ষ্মী যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিরিশ জনের দলে থাকল না, অথচ রজত ভাটিয়া থাকল, কোষাধ্যক্ষ কিছু বললেন না। কেকেআরের বেলায় শুধু মুখ খোলা হবে? আসলে প্রচারে না থাকলে কোষাধ্যক্ষের অসুস্থ লাগে!”
যা শুনে বিশ্বরূপও কড়া পাল্টা দিলেন। বললেন, “মনোজ-দিন্দা বোর্ডের চুক্তি থেকে বাদ পড়ার পরেই ব্যাপারটা ফিনান্স কমিটির বৈঠকে তুলেছিলাম। বলা হয়েছিল, মনোজ ফিট হলে ওকে ফেরানো হবে। আর দিন্দা ইন্ডিয়া এক বার খেললে সঙ্গে সঙ্গে চুক্তিতে ফিরবে। যিনি বলছেন, তিনি ওই মিটিংয়ের মিনিটস দেখে আসুন।” সঙ্গে সংযোজন, “আমি প্রচার চাই? যা বলেছি, সব বাংলার ক্রিকেটারদের জন্য। নিজে তো দু’টাকাও পাব না। কেকেআরের নিলাম টেবলে বসতে আমি রাজি। তবে কেকেআরের সঙ্গে যুক্ত হলেও টাকা নেব না কিন্তু। আর বাংলার প্লেয়ার না নিলে নিলাম থেকে বেরিয়ে আসব। সবাই সেটা পারবে তো?”
যুদ্ধের প্রেক্ষাপটটা অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল। শুক্রবারের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণী তালিকায় প্রথমে ছিল না লক্ষ্মীরতন শুক্ল, মনোজ তিওয়ারির নাম। পরে যোগ করা হয়। কেন? সিএবি কোষাধ্যক্ষ বললেন, “লোকাল সেন্টিমেন্ট রাখতে। কাগজে পড়লাম কেকেআরে দরকার নেই। আমাদের আছে!” সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া ব্যক্তিগত কারণে এ দিন অনুষ্ঠানে ছিলেন না। জানতেনও না, দুই কর্তার মধ্যে কী হয়েছে। রাতে ফোনে বললেন, “আপনার কাছেই শুনলাম। কাল যাব। দেখব কী অবস্থা। মিডিয়াকে কিছু বলার প্রয়োজন আছে দেখলে, নিশ্চয়ই বলব।”
সিএবি প্রেসিডেন্ট কী করবেন শেষ পর্যন্ত, পরের ব্যাপার। সিএবি সহ সচিব জিৎ আপাতত আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনটে যুক্তি দিচ্ছেন।
এক) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে কর্নাটকের এক জন প্লেয়ারও নেই। যে কর্নাটক রঞ্জি, ইরানি ট্রফি— দু’টোরই চ্যাম্পিয়ন। চেন্নাই, দিল্লি, রাজস্থান, পঞ্জাবেরও এক অবস্থা। কেকেআর তো বিড করেছে স্থানীয়দের জন্য।
দুই) কেকেআর বাংলার প্লেয়ার নিতে চেয়েছিল। কিন্তু চেষ্টা করেও পারেনি।
তিন) তিনি সংস্থার পদাধিকারী হয়ে নিলাম টেবলে বসে থাকলে ব্রিজেশ পটেল, কাশী বিশ্বনাথনরাও ছিলেন। এক জন কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার সচিব। অন্য জন তামিলনাড়ুর। তা হলে তাঁর অপরাধ কোথায়?
যে সব যুক্তি ময়দানের কাছে অবাক ঠেকছে। বলা হচ্ছে, কলকাতা কবে এত যুক্তির ধার ধেরেছে? নাইটরা আইপিএল ফাইভ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যে শহর এক লক্ষ লোকে ইডেন ভরিয়ে দিয়েছে, সেই একই শহর, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরেই দেখেছে সৌরভ বনাম কেকেআর ঘিরে ‘বঙ্গ-ভঙ্গ’।

‘ইডেন টাইম’ উদ্বোধনে বাংলার চার অধিনায়ক। লক্ষ্মীরতন শুক্ল,
দীপ দাশগুপ্ত, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনোজ তিওয়ারি। —নিজস্ব চিত্র।
এ বারও লক্ষ্মী, শামিদের না নেওয়ায় কেকেআরের ফ্ল্যাগ পুড়েছে ইডেনে। প্রতিবাদী প্রশ্ন উঠেছে, কোন যুক্তিতে শামি নন, পীযূষ চাওলা? কোন যুক্তিতে লক্ষ্মীর জন্য আরও যাওয়া হল না? জোকার কার্ড দিয়ে ইউসুফ পাঠানকে কেনার সময় কী ভেবেছিল কেকেআর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক? শামির জন্য না রেখে? জিৎ বললেন, “শামির জন্য জোকার কার্ড আর ছিল না আমাদের হাতে। আর পাঠানকে আমরা অনেক কম টাকায় পেয়ে গিয়েছি।” কিন্তু পাঠানের কার্যকারিতা আদৌ আছে কি? এ বার পাশ কাটানো উত্তর, “এগুলো আপেক্ষিক। এক এক জনের কাছে এক এক রকম।”
রাতের দিকে সিএবি-র অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্তাদের কেউ কেউ আশ্চর্য হয়ে গেলেন কোষাধ্যক্ষকে নিয়ে এমন মন্তব্য শুনে। বলা হল, বাংলা রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর টিমের জন্য স্লোগান তৈরি করা, অভিনব সংবর্ধনা আয়োজন, লক্ষ্মীর শততম রঞ্জি ম্যাচে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কানপুর থেকে দিল্লি উড়ে গিয়ে বাংলা অধিনায়ককে সংবর্ধনা দেওয়া— সিএবি-র যাবতীয় কর্মকাণ্ডে তাঁকেই দেখা যায়। তাই তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা অর্থহীন। বিশ্বরূপ নিজেও বললেন, “প্রচারে থাকা বলতে কী বলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। কাকে কী রকম দেখতে, তার বিচারে কেউ জনপ্রিয় হয় না। কাজের বিচারে হয়। আমি বাংলার প্লেয়ারদের জন্য কিছু বললে যদি সেটা প্রচার নেওয়া হয়, তা হলে এ রকম প্রচার আবার নেব। বাংলার প্লেয়ারদের জন্য আবার বলব। আমি কী করি, কতটা সৎ ভাবে করি, সেটা আমি জানি। প্লেয়াররাও জানে কার চেষ্টা কতটা আন্তরিক।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.