আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ
ঈশ্বরকে অসীম ধন্যবাদ,
ক্রিকেটটা খবরের কাগজে খেলা হয় না

প্রশ্ন: নিলামের পর নতুন এই কেকেআর আর সেই দু’হাজার এগারোর সাড়া জাগানো টিম নয়। অনেক লাইটওয়েট। ক্যাপ্টেন ছাড়া কোনও তারকা নেই।
সাধারণের রেটিংয়ের সঙ্গে আপনি একমত?

গম্ভীর: একদমই একমত নই। ম্যাচ উইনার হওয়াটা একটা অ্যাটিটিউড। সুপারস্টার মানেই তার সেই অ্যাটিটিউড থাকবে, এ রকম কোনও মানে নেই। এটাই যদি গড়পড়তা ধারণা হয়ে থাকে তা হলে আমি বলব, ঈশ্বরের অসীম ধন্যবাদ ক্রিকেটটা খবরের কাগজে খেলা হয় না। মাঠে হয়। আমার মনে হয় প্ল্যাটফর্মটা যত বড়, তত বেশি সাধারণের রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপ মনে করুন। কালুবিতারানা আর জয়সূযর্র্ রাতারাতি স্টার বনে গিয়েছিল। তার আগে ওদের কেউ চিনত না। বা জন্টি রোডস যেমন বিরানব্বই বিশ্বকাপের সেই রান আউটটা করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছিল। তেমনি এ বার আইপিএলে আমার টিমকে ঘিরেও এ সব ঘটবে না, কী করে জানলেন?

প্র: কলকাতা আরও একটা কারণে শোকার্ত যে তার প্রিয় ঘরের তারকাদের কাউকে রাখা হয়নি। লক্ষ্মী-কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শামি-কেও। আপনি নিলামের টেবলে থাকলে এত সহজে এদের ছেড়ে দিতেন?
গম্ভীর: এটা আপেক্ষিক। নিলামের আগে আমার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল কাকে কাকে নিয়ে আমাদের কী প্ল্যান? নিলামের মধ্যেও বেঙ্কি মাইসোরের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ তো আমার ছিলই। হ্যাঁ, আমার বেশ দুঃখিতই লাগছে যে লক্ষ্মী আর শামিকে আমরা হারিয়েছি। কিন্তু এটাই বাস্তব আর সেটাকে মেনে নিতে হবে। আমার মনে হয় দূর জঙ্গলে কী আছে সেটা না ভেবে আমার হাতে কী আছে সেটা নিয়ে মগ্ন থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

প্র: সত্যি বলুন, টিম নিয়ে আপনি কতটা খুশি? কোন কোন জায়গা আছে যেখানে মনে হয় নিলামে কেকেআরের লাকটা কাজ করেনি?
গম্ভীর: দেখুন ভাই, নেতা হিসেবে তার টিম সম্পর্কে গর্বিত থাকতেই হয়। তাদের পাশে থাকতে হয়। প্রয়োজন হলে হাত ধরে টেনে তুলতে হয়। আমিও ব্যতিক্রম নই। দু’দিন ধরে কেকেআর যাদের যাদের দলে টেনেছে, আমি তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে গর্বিত। এখন শুধু কেকেআর সমর্থকদের ভালবাসা আর সমর্থনের অপেক্ষা।

প্র: অনেকেরই আশ্চর্য লেগেছে স্পেশ্যালিস্ট ওপেনারের জন্য আপনাদের দৌড়তে না দেখে। না করলেন আপনারা সহবাগের জন্য বিড। না গেলেন মুরলী বিজয়ের পেছনে।
গম্ভীর: আমাদের শুরু থেকেই পরিষ্কার প্ল্যানিং ছিল কালিস আর আমি ওপেন করব। নইলে আমি আর রবিন উথাপ্পা। বীরু ভাইয়ের কথা মাথায় আসেনি কারণ আমার ধারণা ছিল ওর আর ওয়ার্নারের জন্য দিল্লি জোকার কার্ড ব্যবহার করবে। আমি বেশ আশ্চর্যই হয়ে গেছি দেখে যে দিল্লি সেটা করল না। আর মুরলী বিজয় ভাল, কিন্তু আমাদের দরকার ছিল আরও অলরাউন্ড প্লেয়ার।

প্র: নিলামে নেওয়া আরও কতগুলো সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। অমিত মিশ্র বা প্রজ্ঞান ওঝার পেছনে না যাওয়া। তার বদলে অনেক পেছনে থাকা পীযূষ চাওলাকে নেওয়া। সবচেয়ে বিস্ময়কর পীযূষ চাওলাকে যে টাকায় কেনা হয়েছে, শামিকে সেই একই টাকার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে বসে টিভিতে এ সব দেখতে দেখতে আপনার নিজেরও কি বিস্ফারিত লাগছিল না?
গম্ভীর: কেকেআর একটা বড় পরিবার। সব কিছুই একটা দলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হয়। আমরা অমিত মিশ্রর কথা প্রথমেই ভেবেছিলাম। কিন্তু যে ছেলেটা গত বছর তিন থেকে চারটে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পেয়েছে, ধরেই নেওয়া হয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে ‘রিটেন’ করবে। ঠিক যে কারণে আমরা বীরু ভাই বা ওয়ার্নারের পেছনে ছুটিনি, সেই জোকার কার্ডের কথা ভেবেই যাইনি মিশ্রর জন্য। কোনও সন্দেহ নেই মহম্মদ শামি ফাস্ট বোলার হিসেবে যথেষ্ট ভাল। কিন্তু ইডেন গার্ডেন্স উইকেটে আমাদের পেসের চেয়ে বেশি দরকার এমন কাউকে, যে স্পিডের রকমফের করতে পারবে। তাই বিনয় কুমারকে তুলি। এখন অবশ্য একটু অস্বস্তিই হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কী হবে। কারণ এখন শুনছি টুর্নামেন্টটা দক্ষিণ আফ্রিকায় হবে।

প্র: আপনাদের বোলিং ইউনিটটা বেশ ঝকঝকে দেখাচ্ছে। যদিও মর্কেলের ফিটনেস নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে।
গম্ভীর: আমি বরাবরই বলে এসেছি ম্যাচ বোলাররাই জেতায়। টি-টোয়েন্টিতে আরও বেশি করে তাই। কেকেআরে তাই আমাদের প্ল্যানগুলো বোলারদের ঘিরে তৈরি হয়। এ বারও তাই হবে।

প্র: গত মরসুমে কী কী ঘটেছিল যার জন্য টিমটা এগোতে পারেনি? আর সেগুলো কি এ বারের নিলামে ঠিক করা হয়েছে?
গম্ভীর: আমার মনে হয়েছে গত মরসুমে আইপিএল জিতে ফেলার পরে আমরা কিছুটা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। যেটা ফ্যানদের প্রতি অন্যায় হয়েছিল। এই টুর্নামেন্টের বেস্ট সমর্থক হল আমাদের। তাঁদের প্রতি আমাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। এ ছাড়া আর একটা কারণ হল কয়েকটা ম্যাচে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা চাপটা নিতে পারিনি। যে ম্যাচগুলো সহজে বার করার ছিল, সেগুলো হেরে বসেছি। অধিনায়ক হিসেবে এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।

প্র: টিমগুলো যেমন দাঁড়িয়েছে, তাতে কাদের সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হচ্ছে?
গম্ভীর: সবাই চেষ্টা করেছে বেস্ট কম্বিনেশন তৈরি করতে। তবে সমর্থকের জন্য আমাদের টিমের একটা এক্স ফ্যাক্টর আছে। যেটা আর কারও নেই।

প্র: সেই সমর্থকরা কিন্তু খুব উত্তেজিত আর ব্যথিত যে আপনারা তাঁদের সেন্টিমেন্টের মর্যাদা রাখেননি। টিমটার নামের সঙ্গে কলকাতা জড়িত। অথচ কলকাতার নামী কোনও ক্রিকেটারকে টিমে রাখা হয়নি।
গম্ভীর: এর জন্য মাফ চাইছি। কিন্তু আমরা শহরের জন্য সেরা কম্বিনেশনটাই করতে চেয়েছিলাম। আর সেটা করতে গিয়ে লক্ষ্মী-মনোজ কাউকেই টিমে টানতে পারিনি। পরের দিন আমরা নিয়েছি দেবব্রত দাস আর সায়নশেখর মণ্ডলকে। আর একটা কথা বলি। আমার তো মনে হয় এত দিনে আমিই বাংলার পালিত পুত্র হয়ে গিয়েছি। তাই নয় কি?

প্র: আইপিএল সেভেনে গৌতম গম্ভীরের ব্যক্তিগত টার্গেট কী?
গম্ভীর: আমার কোনও ব্যক্তিগত টার্গেট নেই। ক্রিকেট হল টিম স্পোর্ট। ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের জন্য সেখানে কেউ খেলে না। আমাদের টিমের একটাই লক্ষ্য থাকবে। সব কিছু পেছনে ফেলে আইপিএল জেতা। আশা করি কলকাতার সমর্থকদের আমরা নিরাশ করব না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.