|
|
|
|
|
ভয় দেখানোটাও শিল্প,
রপ্ত করতে সময় লাগে
দীপ দাশগুপ্ত |
|
বডিলাইন সিরিজ তো দেখিনি। নানা গল্প শুনেছি, টিভিতে সেই বিখ্যাত সিরিয়ালটাও দেখেছিলাম। কিন্তু মিচেল জনসনের বোলিং দেখতে বসে এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছিলাম। ওর বল খেলার সময় কোন মুহূর্তে যে কী হাল হবে ব্যাটসম্যানের, তা বোঝা কঠিন। ভাবছিলাম মিচের সামনে পড়া সেই ব্যাটসম্যানদের কথা। কী আতঙ্ক নিয়ে ব্যাট করতে হচ্ছে ওদের!
রবিবার ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে দেখছিলাম, অনেকেই বলছে, বিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো একটা বোলার ভারতের থাকলে নিউজিল্যান্ড ইনিংস এ দিনই শেষ হয়ে যায়। ওদের ওয়াটলিং দু’একটা বল গায়ে খেলে এমনিতেই ভয়ে আউট হয়ে যেত। আইডিয়াটা ঠিক। এ রকম বোলার দলে থাকলে যে কোনও সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। যেমন জনসন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে করছে।
কিন্তু এ রকম ‘খুনে’ বোলার চাইলেই পাওয়া যায় না। ভাল বোলার, সুইং বোলার বা ফাস্ট বোলার অনেক পাওয়া যায়, আছেও। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ভয় কাঁপিয়ে দেওয়া এ রকম বোলার কমই আসে। আসলে ব্যাটসম্যানদের মনে এই ত্রাস সঞ্চার করাও একটা শিল্প। যেটা অনেক পরিশ্রম, অনেক চর্চা করে আয়ত্ত করতে হয়। ব্যাটসম্যানকে ‘হিট’ করাটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে মিচ। এ রকম বোলার তৈরি করার পিছনে অনেক দিনের একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার। যেখানে নির্বাচক থেকে কোচিং স্টাফ সবার ভূমিকা থাকতে হবে।
একটা ঘটনার কথা বেশ মনে আছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটা ট্যুর ম্যাচে আমি খেলেছিলাম ইন্ডিয়া ‘এ’-র হয়ে, যেখানে মুনাফ পটেলের অভিষেক হয়েছিল। মুনাফ সেই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছাড়ছিল। কিউয়িদের কারও হেলমেটে, কারও বুকে গিয়ে লেগেছিল ওর বল। যা দেখে প্রচুর আনন্দ পেয়েছিলাম সবাই। ভারতের কোনও বোলার এ ভাবে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে উঠলে তা ভাল লাগারই কথা। কিন্তু মুনাফ এখন কোথায়?
সমস্যাটা হচ্ছে, আমাদের বোলিংয়ে যেখানে ধারাবাহিকতারই অভাব থাকছে বেশিরভাগ সময়, সেখানে একজন বোলারকে এ ভাবে তৈরি করার চেষ্টাটা বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়। মুনাফের পেসটা ছিল, কিন্তু লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে গিয়ে সেটা নষ্ট হয়ে গেল।
সোজা কথাটা হল, টেস্ট জিততে হলে কুড়ি উইকেট নিতেই হবে। আর সে জন্য দরকার স্ট্র্যাটেজি ও প্রস্তুতি। যেখানে ব্যাটসম্যানদের ভয় দেখানোটাও স্ট্র্যাটেজির একটা অঙ্গ। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দলে যেটা হয়, এক একজন বোলারকে এক এক রকমের ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দেওয়া থাকে। বোলারদের শক্তি-দুর্বলতা অনুযায়ী এই দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। ভারতীয় দলে এটারই বড় অভাব। কে রান আটকাবে, কে উইকেট নেবে, কে বাউন্সার দেবে, কে সুইং করানোর চেষ্টা করাবে বেশি, এগুলো বোলারদের আগে থেকে জানা থাকলে তাদের সুবিধা হয়। কিন্তু আমি যতদূর দেখে এসেছি, ভারতীয় ক্রিকেটে প্রচলিত প্রথা হল, কাউকে আলাদা করে কিছু বলা হয় না। ধরেই নেওয়া হয়, সবাই সব কাজ জানে।
এই ভারতীয় দলটায় জাহির সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার। আমি জানি না, বাকিদের নিয়ে জাহির বা কোচ আলাদা কোনও গেমপ্ল্যান করছে কি না। করলেও কিন্তু মাঠে সেটার নিয়মিত প্রয়োগ হচ্ছে না।
রবিবার শামি-ইশান্তরা ম্যাকালামদের বিরুদ্ধে ভয় ধরানো বোলিং না করলেও, বেসিকটা ঠিকঠাকই রেখেছে। ম্যাকালামের দুটো ক্যাচ না পড়লে ম্যাচটা হয়তো এ দিনই শেষ হয়ে যেত। |
|
|
|
|
|