মহিলাদের উপরে নির্যাতন রুখতে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জেলায় মহিলা থানা চালু করেছেন। হুগলিতে চুঁচুড়ার পরে দিন দশেক আগে শ্রীরামপুরেও চালু হয় মহিলা থানা। কিন্তু চুঁচুড়ার মতোই জেলার দ্বিতীয় মহিলা থানাতেও উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না করেই তা চালু করা হল বলে জেলা পুলিশ মহলেরই একাংশেরই ক্ষোভ রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীরামপুরে নতুন মহিলা থানায় মাত্র এক জন সাব-ইনস্পেক্টর অফিসার-ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন। এএসআই এক জন এবং কনস্টেবলের সংখ্যা ৬। গাড়ি মাত্র একটি। ফলে, এই পরিকাঠমোয় কী ভাবে পুরোদস্তুর একটা থানা চলতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, “কোনও ঘটনায় শুধু কাগজ-কলমেই নয়, সরেজমিন তদন্ত করতে হয়। অনেক ছুটোছুটি করতে হয়। তল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্তকে ধরতে হয়। আবার অভিযুক্ত বা নির্যাতিতকে হাসপাতাল বা আদালতে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু নিয়মিত এত কাজের তুলনায় মহিলা পুলিশের সংখ্যা নিতান্তই অল্প।” অন্য এক অফিসারের কথায়, “পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিভিক পুলিশের মেয়েদের কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের দিয়ে তো আর তদন্তের কাজ করানো সম্ভব নয়!”
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে আগে মহিলাদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি দেখত পুলিশের ‘মহিলা সেল’। তবে, তাদের মামলা করার ক্ষমতা ছিল না। অভিযোগ পেলে ওই সেলের অফিসাররা নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট থানাকে বিষয়টি দেখার সুপারিশ করতেন। ২০০৮ সালে রাজ্যে বাম শাসনের শেষ দিকে ‘মৈত্রেয়ী’ নামে পৃথক একটি সেল খোলা হয়। কিন্তু কয়েক বছর চলার পরে ওই সেল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ২০১২ সালে রাজ্যে প্রথম দফায় রাজ্যে ১০টি মহিলা থানা তৈরি হয়। দিন কয়েক আগে আরও ১০টি মহিলা থানা তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। মহিলা থানাগুলি অন্য থানার মতোই সমান্তরাল ভাবে কাজ করছে। তবে, তারা শুধু মহিলা সংক্রান্ত বিষয়েই তদন্ত করছে। অনেক সময় মহিলারা পুরুষ পুলিশ অফিসারদের কাছে নিজেদের কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেন। সেই কারণেই মহিলা থানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মানছেন পুলিশ অফিসাররা।
পুলিশ গেজেটে বলা হয়েছে, মহিলা থানার দায়িত্বে থাকবেন ইনস্পেক্টর পযমর্যাদার অফিসার। তাঁর অধীনে থাকবেন চার জন এসআই এবং ১১ জন কনস্টেবল। কিন্তু দু’বছর আগে চালু হওয়া চুঁচুড়ার মহিলা থানাতেই সেই পরিকাঠামো এখনও চালু করা যায়নি। সেখানেই পুলিশকর্মীর সংখ্যা কম। গাড়িও নেই। প্রয়োজন অনুসারে পুলিশ লাইন থেকে গাড়ি নেন মহিলা পুলিশকর্মীরা।
স্বভাবতই জেলা পুলিশের একাংশের প্রশ্ন, চুঁচুড়ার মহিলা থানার পরিকাঠামোর যখন এই হাল, তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করেই শ্রীরামপুরে কেন এ ভাবে মহিলা থানা চালু করা হল? কিন্তু একই সঙ্গে দু’জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন হলেও গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া ওখানকার মহিলা পুলিশকর্মীদের গতি নেই। শ্রীরামপুরের মহিলা থানায় গত কয়েক দিনে কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে, রাতে ‘ডিউটি’ বণ্টনের ক্ষেত্রে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের। এক পুলিশকর্মীর অনুযোগ, এক জন অফিসার ছুটি নিলে বা অসুস্থ হলে তাঁর জায়গা ভরাট করার মতো কেউ নেই। যে ভাবে প্রতিদিন মহিলা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ আসছে, তাতে মহিলা পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো না হলে এই ধরনের থানার উদ্দেশ্য মাটি হবে বলে পুলিশেরই ধারণা।
পুলিশ জানায়, গোটা জেলায় এক জনও ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার মহিলা অফিসার নেই। সাব-ইনস্পেক্টর মাত্র চার জন। এর মধ্যে দু’জন জেলা গোয়েন্দা বিভাগে (ডিআইবি) রয়েছেন। ফলে, এখনই যে মহিলা থানাগুলিতে নতুন করে নিয়োগ না হলে সমস্যা মিটবে না তা স্পষ্ট।
পুলিশের এক কর্তার আশ্বাস, “মহিলা থানা দু’টিতে পরিকাঠামোর যে অভাব রয়েছে, এটা ঘটনা। ধীরে ধীরে সমস্যা মেটানো হবে।”
|