শোরুম থেকে নামী কোম্পানির ল্যাপটপ কিনেছিলেন বিমা কোম্পানির এজেন্ট অপরাজিতা ঘোষ। কিছু দিন যেতে না যেতেই সেটি বিগড়ে যায়। দু’বার সারিয়ে দিয়েও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের সেটি খারাপ হয়ে যায়। আর সেটি সারিয়ে দেননি শোরুম কর্তৃপক্ষ। বদলেও দেননি। ফলে সেটি বিকল অবস্থাতেই পড়ে থাকে। এমনই অভিযোগ নিয়ে হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চাঁপদানির বাসিন্দা অপরাজিতাদেবী। আদালত চন্দননগরের ওই শোরুম কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ-সহ ল্যাপটপের পুরো টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে।
অপরাজিতাদেবী জানান, কাজের সুবিধার জন্য ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর চন্দননগরের বড়বাজারে জিটি রোড-সংলগ্ন একটি শোরুম থেকে তিনি একটি ল্যাপটপ কেনেন ৩০ হাজার ২০২ টাকা দিয়ে। এক মাসের মধ্যেই সেটি খারাপ হয়ে যায়। শোরুম কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হলে তাঁরা ল্যাপটপটি সারিয়ে দেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সেটি ফের বিকল হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বারও সেটি সারিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ল্যাপটপ যে কোম্পানির, তাদের সার্ভিস সেন্টার থেকে না সারিয়ে অন্য জায়গা থেকে ল্যাপটপটি সারানো হয়। অপরাজিতাদেবীর স্বামী শ্যামল ঘোষ বলেন, “বিষয়টি শোরুমে জানানোয় আমাদের বলা হয়, ফের সমস্যা হলে নিশ্চয়ই তাঁরা দেখবেন।” যদিও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের সেটি খারাপ হয়ে যায়। ঘোষ দম্পতি জানান, আর সেটি সারিয়ে দেওয়া হয়নি। ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে ছিল ল্যাপটপ। সেটি বদলে দিতে বললে তা-ও শোনেনি ওই শোরুম কর্তৃপক্ষ।
তখন অপরাজিতাদেবী নিজেই ল্যাপটপের কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তাঁর দাবি, “ওই কোম্পানি থেকে জানানো হয়, ল্যাপটপটি ভারতে সারানো যাবে না। কেবলমাত্র আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য অথবা ইউরোপে এটা সারানো যেতে পারে।” তিনি বলেন, “তখন ফের শোরুম কর্তৃপক্ষকে বলি। কিন্তু ওরা আমাদের কথায় কানই দেয়নি। অত দামের ল্যাপটপটা নতুন অবস্থাতেই খারাপ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।” তখন তিনি ক্রেতা বিষয়ক দফতরের হুগলি আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করেন। সেখানে শোরুম সংস্থা জানায়, বিকল ল্যাপটপটি নিয়ে তাঁরা ২০ হাজার টাকা দিতে প্রস্তুত। যদিও, যে দাম দিয়ে ল্যাপটপটি কেনা তার থেকে কম টাকা নিতে রাজি হননি ওই দম্পতি।
এর পরেই চন্দননগরের ওই শোরুম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন অপরাজিতাদেবী। শোরুম কর্তৃপক্ষ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁরা জানান, ল্যাপটপটি নেওয়ার সময় ওই ক্রেতার কোনও অভিযোগ ছিল না ওই ক্রেতার। ল্যাপটপটি দেখে সন্তুষ্ট হয়েই সেটি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
আদালতের প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী অবশ্য ঘটনাক্রম শুনে এবং নথিপত্র খতিয়ে দেখে পরিস্কার জানিয়ে দেন, ক্রেতার সুরক্ষায় শোরুম কর্তৃপক্ষের আরও সচেষ্ট হওয়া উচিত ছিল। তা না করে তাঁরা কর্তৃব্যে গাফিলতি করেছেন। যার ফলে অনেক টাকা খরচ করে যন্ত্রটি কিনলেও কার্যত ঠকে গিয়েছেন ওই ক্রেতা। এতে এক দিকে তাঁর যেমন আর্থিক ক্ষতি এবং হয়রানি হয়েছে, উদ্বেগ বেড়েছে, তেমনি কাজেরও ক্ষতি হয়েছে। আদালতের বক্তব্য, ওই শোরুমের তরফে বিকল ল্যাপটপটি সারানোর চেষ্টা হলেও আদতে বেশিদিন তা টেঁকেনি। বহুবার সেটি সারানোর ব্যাপারে অভিযোগকারিনী আবেদন-নিবেদন করলেও তা শোনা হয়নি। উল্টে যে ভাবে সারাই করা হয়েছে, তা ‘লোক দেখানো’ বলে মনে হয়েছে আদালতের।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে আদালতের নির্দেশ ল্যাপটপটির দাম বাবদ শোরুম কর্তৃপক্ষকে ৩০ হাজার ২০২ টাকা এবং আর্থিক ক্ষতি, হয়রানি, মানসিক উদ্বেগের জন্য আরও ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ওই মহিলাকে। এ ছাড়াও, তাঁর মামলা চালানোর খরচ বাবদ আরও ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে ৫৫ হাজার ২০২ টাকা এক মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় পুরো টাকার উপর ৯ শতাংশ সুদ গুণতে হবে।
শোরুমের মালিক অরিজিৎ চক্রবর্তীর বলেন, “ওঁরা ল্যাপটপের ব্যাপার ভাল বোঝেন না। বিক্রি করার পরে আমরা সেটা ফরম্যাট করে দিয়েছিলাম। ওঁরা সেটা খারাপ হওয়া বলে ধরে নেন। এক বার কি-বোর্ড খারাপ হওয়ায় তা সারিয়ে দিই। কিন্তু এরপর থেকে ল্যাপটপ আর হাতেই পাইনি। ফলে যন্ত্রটার কি হয়েছে, সেটাই জানা নেই আমাদের।” আদালতের রায়ের ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “উপযুক্ত কর দিয়ে সততা বজায় রেখেই আমরা ব্যবসা করি। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করব।” |
হুগলিতে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় |
• ল্যাপটপের দাম বাবদ ৩০ হাজার ২০২ টাকা দিতে হবে।
• আর্থিক ক্ষতি, হয়রানি, মানসিক উদ্বেগের জন্য আরও ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
• মামলা চালানোর খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে।
• এক মাসের মধ্যে টাকা না মেটালে ৯ শতাংশ সুদ গুণতে হবে। |
|