|
|
|
|
না থেকেও বাজেট জুড়ে মোদীর ছায়া
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি
১৭ ফেব্রুয়ারি |
নামটাই শুধু উচ্চারিত হল না। চিদম্বরমের বাজেটের ছত্রে ছত্রে ভেসে উঠল নরেন্দ্র মোদীর ছায়া। আক্রমণ কখনও সরাসরি। কখনও ভরা কটাক্ষে।
ক’দিন আগে চেন্নাইয়ের জনসভায় চিদম্বরমকে কটাক্ষ করে মোদী বলেছিলেন, “অর্থমন্ত্রী হার্ভার্ডে গিয়েছেন। সেখানকার অর্থনীতিবিদ হয়েও দেশের অর্থনীতির এই হাল! আর আমি এক ছাপোষা স্কুলে পড়ে, চা বেচে, হার্ভার্ডের দরজায় না পৌঁছেও জানি অর্থনীতিকে কী ভাবে চালাতে হয়। হার্ভার্ড নয়, প্রয়োজন ‘হার্ড ওয়ার্ক’ (কঠোর পরিশ্রম)।” সেই কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে আজ বাজেট বক্তৃতায় চিদম্বরম বললেন, “কঠোর পরিশ্রমের মূল্যটা কী, তা আমি জানি। আমার মা ও হার্ভার্ডই আমাকে কঠোর পরিশ্রমের মূল্য শিখিয়েছে।”
এখানেই শেষ নয়। এ দিন নাম না করে মোদীর পাশাপাশি পরোক্ষে যেন বিঁধেছেন অরবিন্দ কেজরীবালকেও। তবে মোদীর দিকেই ছিল মূল নিশানা। জঁ দ্রেজ ও অমর্ত্য সেনের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনমোহিনী নীতি নির্ভরতা, সংখ্যাগুরুর আধিপত্য বা ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা এর কোনওটাই প্রশাসনের বিকল্প পথ হতে পারে না। আমি নিশ্চিত, ভারতের মানুষ এমন কারও হাতেই (কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্ন) দায়িত্ব অর্পণ করবে, যিনি সাম্যের রাজদণ্ড ধারণ করতে পারেন।” চিদম্বরমের লক্ষ্য যে মোদীই, তা বিলক্ষণ বুঝেছেন বিজেপি নেতারা।
চিদম্বরম ও মোদীর এই তরজা নতুন নয়। ক’দিন আগেই মোদীকে কটাক্ষ করে চিদম্বরম বলেছিলেন, মোদীর অর্থনীতির জ্ঞান ডাকটিকিটের পিছনে লেখা যায়! মোদী তার জবাবও দিয়েছিলেন। গত শনিবারই ‘মোদীনমিকস’ বলে এক বইতে মোদী তাঁর বিকল্প অর্থনীতি তুলে ধরেছেন। এই অবস্থায় লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ বাজেটকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করে চিদম্বরম যেন চাইছিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে একটি মোক্ষম জবাব দিতে। বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি যে অর্থনীতির রাশ টেনে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন, শেষ বাজেটে তা প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা করেছেন।
মোদী যেমন কথায় কথায় অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানার সাফল্যের সঙ্গে ইউপিএ-র ব্যর্থতা তুলে ধরেন, তেমনই আজ চিদম্বরম শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে কৃষি-গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে গত দশ বছরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরলেন। বিমা বিল, পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থা আটকে রাখার জন্য পরোক্ষে দুষলেন বিজেপিকেই। সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব নিয়ে মোদী ও তাঁর দলের নেতাদের লাগাতার আক্রমণকে উড়িয়ে দাবি করলেন, ওই তত্ত্বে তিনি মোটেই বিশ্বাস করেন না।
এত আক্রমণের পরে কী করেই বা চুপ করে বসে থাকতে পারেন নরেন্দ্র মোদী? সন্ধ্যায় দশটা টুইট করে পাল্টা আক্রমণে নেমেছেন তিনি। চিদম্বরমের কঠোর পরিশ্রমের দাবিকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, “অর্থমন্ত্রী নিজের পিঠ চাপড়াচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে যুবকদের রোজগার নেই।
অর্থমন্ত্রীর দাবি, ২৯৬টি প্রকল্প এখন না কি মঞ্জুর হয়েছে। এত দিন কেন আটকে থাকল? এটি নীতিপঙ্গুত্ব ছাড়া আর কী? কালো টাকা উদ্ধারে শুধু বুলি আওড়াচ্ছেন। উদ্ধার তো হয়নি। ৩৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকিও পরের সরকারের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন।” এখানেই না থেমে চিদম্বরমকে বিঁধে মোদী বলেন, “এত কঠোর পরিশ্রম করেও শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের হাতে বিচারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হল অর্থমন্ত্রীকে! জনতাই এ বার বিচার করুক, অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী আদৌ কঠোর পরিশ্রম করেছেন কি না!”
বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা মোদীর প্রচার-কৌশল রচনার অন্যতম রূপকার অরুণ জেটলি বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, “ভর্তুকি পরের সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে অঙ্কের কারসাজি করেছেন অর্থমন্ত্রী। যাতে আর্থিক ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে দেখানো যায়। আর যে কৃষির সাফল্য চিদম্বরম দাবি করছেন, সেগুলি তো গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যের কারণেই। অথচ বাজেটে রাজ্যগুলিই নিজেদের প্রাপ্য পায়নি। বাজেট পেশ করে চিদম্বরম আজ স্বস্তি পেতে পারেন। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরির সঙ্কট বাড়ালেন।” |
|
|
|
|
|