সেনা-পেনশনের ময়দানে রাহুলের টেক্কা মোদীকে

১৭ ফেব্রুয়ারি
ক্ষমতায় এলে তিনি করে দেখাবেন, হরিয়ানায় প্রাক্তন সেনাকর্মীদের সম্মেলনে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিন দিন আগে তাঁদেরই প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে রাহুল গাঁধী জানান, সেনাবাহিনীতে ‘এক পদ এক পেনশন’ নীতি চালু করার দাবিতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। আর আজ সংসদে পেশ করা অন্তর্বর্তী বাজেটে সেই দাবি মেনে নিল কেন্দ্রীয় সরকার। বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ঘোষণা করলেন, সম পদে সম মেয়াদ কাজ করে অবসর নেওয়া সেনাকর্মীরা একই পেনশন পাবেন ২০১৪-১৫ আর্থিক বছর থেকে।
সেনাবাহিনীর পেনশন নিয়ে দাবিদাওয়া দীর্ঘদিনের। কিন্তু এ নিয়ে ক্ষোভ অনেকটাই বেড়ে যায় ২০০৬-এ ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার পরে। দেখা যায় পদে একই মেয়াদ কাজ করেও দু’জন দু’রকম পেনশন পাচ্ছেন। যেমন, ২০০৩-এ অবসর নেওয়া এক জন কর্নেল যদি পেনশন পান ২৬,১৫০ টাকা, তবে ২০০৬-এ অবসর নেওয়ায় আর এক জন পাচ্ছেন ৩৪ হাজার টাকা। এ বার থেকে সেই বৈষম্য দূর হবে। এ জন্য চলতি অর্থবর্ষেই ৫০০ কোটি টাকা রাখা হবে প্রতিরক্ষা পেনশন খাতে।
সন্দেহ নেই ভোটের বাজারে বর্তমান ও প্রাক্তন সেনাকর্মীদের মন জয়ের দৌড়ে মোদীকে টেক্কা দেওয়ারই চেষ্টা এটা। তবু ভোটের মুখ চেয়েই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হয়েছে বিজেপি-কেও। রাহুলের নামোল্লেখ এড়িয়ে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী আজ শ্লেষের সঙ্গে বলেছেন, “দেরিতে হলেও অবশেষে শুভবুদ্ধি হল ইউপিএ মন্ত্রীদের।”
২০০৬ সালের আগে অবসর নেওয়া সেনাকর্মীরা অবশ্য অবিচারের অভিযোগ তুলেছেন। কারণ তাঁরা চেয়েছিলেন এই নীতি ২০০৬ থেকে কার্যকর করা হোক। এটা ঘটনা যে, ভোটের মুখে অন্তর্বর্তী বাজেটে খুব বেশি জনমোহিনী পদক্ষেপের সুযোগ ছিল না চিদম্বরমের। তার মধ্যেও রাহুলের তৎপরতায় বাজেটের সিলমোহর পড়ায় প্রত্যক্ষ ভাবেই সেনাবাহিনীর ৩০ লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হবেন। এর মধ্যে সেনাকর্মীদের বিধবা স্ত্রীরাও রয়েছেন।
প্রত্যেক পরিবারকে ৯টির বদলে ১২টি ভর্তুকির গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তও হয়েছিল প্রায় এই ভাবেই, রাহুল প্রকাশ্যে সেই দাবি জানানোর পর। তারই পুনরাবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “বাজেট বক্তৃতা অনেক দিন আগেই লেখা হয়ে যায়। কংগ্রেস সহ-সভাপতি যদি তা আগাম আঁচ করে ফেলতে পারেন, তা হলে তাঁকে অভিনন্দন।”
চিদম্বরম এ কথা বললেও রাহুল কিন্তু সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে সরব হয়েছেন এ দিনই। দশ জনপথে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি বলেছেন, “এটা সেনাবাহিনীর অনেক দিনের দাবি ছিল। এই সিদ্ধান্ত তাঁদের মনোবল বাড়াবে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা রাহুলের এই কৌশলের পিছনে দু’টি উদ্দেশ্য দেখতে পাচ্ছেন। প্রথমটি হল, ভোটের ময়দানে মোদীকে টক্কর দেওয়া। প্রাক্তন সেনাপ্রধান বিজয়কুমার সিংহকে পাশে রেখে হরিয়ানায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের বিশাল সম্মেলনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মোদী। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পেনশন-বৈষম্য দূর করার। সেই দাবি মেনে নিয়ে রাহুল তথা কংগ্রেস কার্যত বিজেপি-র মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে চাইল। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশ থেকে প্রচুর মানুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, এই সব রাজ্যে রাজনৈতিক সুফল মিলবে এর।
দ্বিতীয় কারণটি বৃহত্তর। রাহুল দেখাতে চাইছেন তাঁর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও দূরদৃষ্টি রয়েছে। রয়েছে সুশাসন দেওয়ার ক্ষমতা। দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনিও। রাহুল তথা কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে এই সব গুণের অভাবের কথাই সময় সময় বলে থাকেন মোদী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.