প্ল্যাটফর্মের ডিসপ্লে বোর্ডগুলো অন্ধকার। কোন ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে তা জানতে যাত্রীদের ভরসা শুধু ঘোষণা। কিন্তু ভিড়ে ঠাসা প্ল্যাটফর্মে হাজার হট্টগোলের মধ্যে তা শুনতে না পেলেই ট্রেন মিস্। তার উপর ঘোষণাও অনেক সময়ে অস্পষ্ট ভাবে হওয়ায় তা ঠিক মতো শোনা যায় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ফলে ডিসপ্লে বোর্ডের ন্যূনতম পরিষেবাটুকুও এখন পাচ্ছেন না দমদম স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করা কয়েক হাজার নিত্যযাত্রী।
সোমবার সন্ধ্যায় দমদম স্টেশনে পৌঁছে শোনা গেল, মাইকে আপ নৈহাটি লোকালের ঘোষণা হচ্ছে। কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসবে তা ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনোর জন্য যাত্রীদের মধ্যে কার্যত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। কেউ আন্ডারপাস দিয়ে ছুটলেন। কেউ আবার ওই ট্রেনের ঘোষণা শোনার জন্যই দাঁড়িয়েছিলেন ওভারব্রিজে। ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তারাও ওভারব্রিজ দিয়ে দৌড়লেন প্ল্যাটফর্মের দিকে। কেউ কেউ পৌঁছলেন। কেউ পারলেন না। ভিড়ের মধ্যে ওভারব্রিজ দিয়ে দৌড়তে গিয়ে সিঁড়িতে পড়ে গেলেন এক মহিলা।
দমদম স্টেশন দিয়ে ঢোকার মুখে মেট্রো স্টেশনের ধার ঘেঁষে রয়েছে দু’টি বড় ডিসপ্লে বোর্ড। এই ডিসপ্লে বোর্ডের একটু বাঁ দিকে আন্ডারপাসে ঢোকার মুখে রয়েছে আরও দু’টি ডিসপ্লে বোর্ড। এ ছাড়া দমদম স্টেশনের পাঁচটি প্ল্যাটফর্মেই রয়েছে ডিসপ্লে বোর্ড। ওই বোর্ডে কোন ট্রেন ক’টার সময়ে কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে তা লেখা থাকে। যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই এই বোর্ডগুলো অন্ধকার। |
রেল পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের কারণে স্টেশনে এখন প্রায়শ যাত্রী বিক্ষোভ হচ্ছে। দিন কয়েক আগেই দমদম স্টেশনে রেল পরিষেবা নিয়ে যাত্রী বিক্ষোভ, অবরোধও হয়। যে সব পরিষেবার অভাবের অভিযোগে অবরোধ হয় তার মধ্যে একটি ছিল ডিসপ্লে বোর্ড খারাপ থাকা। নিত্যযাত্রীরা জানালেন, এত বার যাত্রী বিক্ষোভ সত্ত্বেও রেলকর্তারা উদাসীন। বিক্ষোভের পরে কেটেছে অনেক দিন তবুও বোর্ড ঠিক করার কোনও লক্ষণই নেই।
দমদম স্টেশন দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন অরিন্দম ঘোষ। তিনি বললেন,“অন্তত প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সামনের ডিসপ্লে বোর্ড দু’টো কেন ঠিক করেন না কর্তৃপক্ষ? আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে যেটুকু বুঝতে পারি সেই মতো প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু সব সময়ে অনুমান ঠিক হয় না।” অন্য এক নিত্যযাত্রী মিতালি দাস বলেন, “অনেক সময়ে ট্রেন আসার আগে শেষ মুহূর্তে ঘোষণা করা হয়। তার পরে ট্রেন ধরার জন্য খুব কম সময় থাকে। পড়িমড়ি করে ছুটেও ট্রেন পাওয়া যায় না। এক বার ট্রেন মিস করলে ফের পরের ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।”
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, দমদমের মতো বড় স্টেশনে সব জায়গা থেকে ঠিক মতো ঘোষণা শোনাও যায় না। বিশেষ করে আন্ডারপাসের মধ্যে দিয়ে যখন যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মের দিকে যান তখন ঘোষণা ভাল করে শোনা যায় না। এক নিত্যযাত্রীর দাবি, “দমদম রেল স্টেশন লাগোয়া দমদম মেট্রোর ডিসপ্লে বোর্ড সব সময়ে ঠিক থাকে। কিন্তু মেট্রোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি যাত্রী রেল স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। তা হলে এখানকার ডিসপ্লে বোর্ডগুলো ঠিক থাকবে না কেন?”
তবে ডিসপ্লে বোর্ড বেশ কয়েক মাস ধরে খারাপ হয়ে থাকার কথা স্বীকার করেছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলেন, “শিয়ালদহ শাখায় দমদম খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। ডিসপ্লে বোর্ড ঠিক থাকা জরুরি। এগুলি দ্রুত সারানো হবে।” দমদম স্টেশনের এক আধিকারিক বলেন, “বেঙ্গালুরুর এক সংস্থার সঙ্গে ওই ডিসপ্লে বোর্ডগুলি চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। ওই সংস্থার কর্মীদের সারানোর জন্য বলা হয়েছে।” |