দিনের পর দিন যাত্রীদের সঙ্গে বচসা ও তাঁদের মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত হচ্ছেন শহরের অটোচালকেরা। তাঁদের মনের ভাবগতিক শোধরাতে প্রতি রবিবার এলাকাভিত্তিক কর্মশালার আয়োজন করেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু ঠিক তার পর দিন, সোমবারই শুরু হল এক নতুন ধরনের জুলুম। যাত্রী পেটানোর ঘটনায় অভিযুক্ত অটোচালকের জামিনের দাবিতে অটো চালানোই বন্ধ করে দিলেন চালকেরা।
শনিবার টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে খুচরো নিয়ে বচসার জেরে অমল মজুমদার নামে এক যাত্রীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন এক অটোচালক। অভিযোগ পেয়ে রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ অভিযুক্ত চালক সাগর কর্মকারকে গ্রেফতার করে। রবিবার তাঁকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠায় আদালত। এর পরেই সাগর কেন জামিন পেলেন না, এই অভিযোগ তুলে সোমবার সকাল দশটা থেকে ওই রুটে অটো চলাচল বন্ধ করে দিলেন চালকেরা। যার জেরে অফিসের ব্যস্ত সময়ে রীতিমতো নাজেহাল হলেন নিত্যযাত্রীরা। |
এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ অফিস যাওয়ার জন্য শ্রীকলোনির বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অনির্বাণ ভৌমিক। অটো না পেয়ে শেষে বাসে চেপেই টালিগঞ্জ পৌঁছন তিনি। রোজই এই রুটের অটোয় চেপে নেতাজিনগর থেকে টালিগঞ্জ যান মীরা সান্যাল। তাঁর কথায়, “এ ভাবে সমস্যার সমাধান হয় না। যাত্রী এবং চালকদের মধ্যে কোথাও বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে। তা দূর করতে হবে।”
আচমকা অটো বন্ধ করে দেওয়ায় ওই অটোচালকদের উপরে ক্ষুব্ধ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। চালকদের পাল্টা হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, “রুট বন্ধ রাখলেই চালককে জেল থেকে ছাড়ানো যাবে না। আইনের উপরে ভরসা রাখতে হবে। লাগাতার রুট বন্ধ রাখার কথা যাঁরা বলছেন, তাঁদের পারমিট বাতিলের কথাটাও মনে রাখতে হবে।”
শহর জুড়ে অটোর দৌরাত্ম্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। কখনও চালকের মারে মাথা ফেটেছে তরুণীর। কখনও অটোর ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে প্রৌঢ়ের। এই অবস্থার সামাল দিতে এলাকাভিত্তিক কর্মশালার আয়োজন করছে পুলিশ। তাতে আইনের পাঠ যেমন দেওয়া হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক দাওয়াইও। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন টালিগঞ্জের অটোচালকেরা। লালবাজারের এক ট্রাফিক-কর্তার অবশ্য বক্তব্য, “কর্মশালা এলাকাভিত্তিক হচ্ছে। ফলে এক জায়গার কর্মশালা অন্য জায়গায় প্রভাব ফেলবে, এটা ভেবে নেওয়া ভুল।” কিন্তু এক জন অভিযুক্তকে ছাড়াতে কেন অটো বন্ধ করে দিলেন টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটের চালকেরা?
তাঁদের দাবি, শনিবারের ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ ট্রাফিক পুলিশের কাছে রয়েছে। সেই ফুটেজের সাহায্য নিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হচ্ছে না। পাশাপাশি, ভুল শোধরানোরও সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তাঁরা। এক অটোচালকের কথায়, “কেউ ভুল করলে তাঁকে সুযোগ দেওয়া উচিত। সাগর তা পায়নি।” এ দিন দুপুরে টালিগঞ্জ ট্রাফিক গার্ডে সিসিটিভির ফুটেজ দেখানোর দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কয়েক জন অটোচালক। কিন্ত পুলিশ তাঁদের জানিয়ে দেয়, এ ভাবে সিসিটিভির ফুটেজ দেখানো যায় না। কেউ ফুটেজ দেখতে চাইলে তাঁকে আইন মেনে আবেদন জানাতে হবে। |