সচেতনতা, পুলিশি উদ্যোগে কমছে দুর্ঘটনায় মৃত্যু-হার
ক দশকে সংখ্যাটা কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়েছে ২০১৩। কলকাতা পুলিশের হিসেব বলছে, গত বছর মূল কলকাতা এলাকায় পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৩৪ জনের। সংখ্যার বিচারে যা এক দশকের মধ্যে সব থেকে কম। সোমবার কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ বলেন, “পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমার জন্য ট্রাফিক পুলিশের কর্মী-অফিসারদের অবদান যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাধারণ মানুষের অবদানও।”
কলকাতা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। দুর্ঘটনাও নিত্যদিনের সঙ্গী। তার মধ্যেও মৃত্যুর সংখ্যা কমা স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জীবিত করেছে পুলিশকর্তাদের। তাঁরা বলছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে কড়া আইন যেমন জরুরি, তেমন জনমানসে সচেতনতাও প্রয়োজন। অনেক সময়েই দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পেরোতে গিয়ে কিংবা চলন্ত বাস থেকে ওঠা-নামা করার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকারও বলেন, “শুধু আইন কড়া করলেই হবে না। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে।” সচেতনতা বাড়াতে ছাত্রছাত্রীদের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে পুলিশ। তার বিজয়ীকে কাল, বুধবার এক দিনের ডিসি (ট্রাফিক) হিসেবে দেখা যাবে। “ব্যাপারটা নেহাতই প্রতীকী।”বলছেন এক ট্রাফিক-কর্তা।
আইন ভাঙার ‘আইন’ আছে! ট্রাফিক নিরাপত্তা সপ্তাহের শহরে। সোমবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
লালবাজারের একাংশ বলছে, পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার এত কমার পিছনে আইনের কড়াকড়ি ও সচেতনতা বৃদ্ধি যেমন রয়েছে, তেমনই ট্রাফিক বিভাগের পরিকাঠামোও দায়ী। আগে দুর্ঘটনা ঘটলে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেকটা সময় নষ্ট হত। ফলে চিকিৎসার সময়ও কম মিলত। এখন পুলিশের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে অনেক আহত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। “এর ফলে অনেক সময়েই গুরুতর আহত ব্যক্তিরও প্রাণ বাঁচানো যাচ্ছে।”মন্তব্য এক ট্রাফিক-কর্তার। পরিসংখ্যানও বলছে, ২০১১ সাল থেকেই ধাপে ধাপে পথ দুর্ঘটনায় মৃতের হার কমেছে শহরে।
যদিও এই পরিসংখ্যানে কলকাতা পুলিশের সংযোজিত এলাকাকে (যাদবপুর ও বেহালা ডিভিশন) ধরেননি পুলিশকর্তারা। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমেছে ওই এলাকাতেও। লালবাজার পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ সালে ওই দু’টি এলাকায় পথ-দুর্ঘটনায় ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গত বছর মারা গিয়েছেন ৯৩ জন।
পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, শহরের নাগরিকেরা এখনও অনেকেই পথ-নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন নন। সচেতনতা বাড়লে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার আরও কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা। একই সুর শোনা গিয়েছে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের গলায়। তিনি বলেন, “পুলিশ শুধু নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করলে লাভ হবে না। পথচারীদেরও নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিধি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।”
দুর্ঘটনার ফাঁদে
সাল মৃত
• ২০১১
• ২০১২
• ২০১৩
৩৭৫
৩৬২
৩৩৪
* শহর কলকাতায়
সূত্র: ট্রাফিক পুলিশ
পথচারীদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে পুলিশ কমিশনারের কথাতেও। বছর কয়েক আগে ব্রিটেনের লিড্সে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন, ৪ জন সার্জেন্ট এবং ১০-১২ জন কনস্টেবল মিলে একটা বড় শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা সামলাচ্ছেন। কমিশনারের কথায়, “উন্নত সিগন্যাল প্রযুক্তির পাশাপাশি সেখানকার মানুষও যথেষ্ট সচেতন।” এখানে ট্রাফিক পুলিশের কাজ অনেক কঠিন বলেই সুরজিৎবাবু মনে করেন।
কলকাতার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে বাহবাই দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বেহালার বাড়ি থেকে প্রায়ই কলকাতা বিমানবন্দরে যেতে হয়। যে ভাবে কলকাতা পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে, তা সত্যি দেখার মতো।” অন্য শহরে যানজট নিয়েও সৌরভের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি জানান, মুম্বইয়ের চেম্বুর থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছতে যানজটে ফেঁসেছিলেন। এক ঘণ্টার পথ যেতে সময় লেগেছিল তিন ঘণ্টা। আর এক অতিথি জুন মাল্য বলেন, “পুলিশ যে ভাবে উৎসব-অনুষ্ঠানে ট্রাফিক সামলায়, তা সত্যিই নজিরবিহীন।”
যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) জানান, আগামী এক সপ্তাহ ধরে পথ নিরাপত্তা নিয়ে নানা অনুষ্ঠান চলবে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিভিন্ন গাড়ির প্রদর্শনীও হবে। ঘুরবে পুলিশের ট্যাবলো ও মোবাইল ভ্যান। এ দিনের অনুষ্ঠানে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের ‘থিম সং’ গেয়ে শোনান ঋক বসু।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.