কথা ছিল পৌষ মেলার পরে পরেই ‘লালপুল’ সম্প্রসারণের কাজ শুরু হবে। মাস চারেক আগে পৌষ উৎসবও শেষ হয়ে গিয়েছে। দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে বসন্ত উৎসব। স্বাভাবিক ভাবেই অন্য উৎসব-অনুষ্ঠানের মতোই বসন্ত উৎসবেও বীরভূমে বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম হবে। কিন্তু পূর্ব রেলের সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকা বোলপুরের রেলসেতু ‘লালপুল’ সম্প্রসারণের কাজ এখন বিশবাঁও জলে। তাই আপাতত বোলপুর শহরের নিত্য যানজটের চিত্র বদলাচ্ছে না, ধরেই নিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। যত দ্রুত সম্ভব এই জটের ফাঁস থেকে মুক্ত করতে এলাকার বাসিন্দা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সংগঠনগুলি অবিলম্বে লালপুল সম্প্রসারণের কাজ শুরু করার দাবি তুলেছেন।
বোলপুরে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ, সঙ্কীর্ণ রেলসেতু লালপুল। এই সেতুর অবস্থা নিয়ে মাস কয়েক আগে রেলের আধিকারিক এবং পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা হয়েছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। চিফ ইঞ্জিনিয়র দীপঙ্কর দাশগুপ্ত এলাকায় এসে সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন ওই সঙ্কীর্ণ সেতু লালপুলের অবস্থা। তৃণমূল পরিচালিত বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের সঙ্গে বারে বারে দীর্ঘ আলোচনার পর শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার পরে ওই সেতুর সম্প্রসারণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন। |
যানজটের মূলে। সঙ্কীর্ণ রেলসেতুর ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
বোলপুর থেকে আশপাশের একাধিক জেলায় যাওয়ার জন্য ওই সঙ্কীর্ণ রেলসেতু ‘লালপুল’ ব্যাবহার করেন নিত্যযাত্রী, পড়ুয়া এবং বাসিন্দারা। সঙ্কীর্ণ এই সেতু সম্প্রসারণের দাবি দীর্ঘদিনের। রাজ্যে পালা বদলের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বদল হয়েছে রেলের মন্ত্রীত্বও। লালপুর সম্প্রসারণের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার আবেদন করেছেন মন্ত্রী আমলা থেকে শুরু করে খোদ রেলমন্ত্রীর কাছেও। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, বিরোধী শিবির থেকে শুরু করে এলাকার বহু অরাজনৈতিক সংগঠনও বারে বারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, রেল দফতরেও সমস্যার সমাধান চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। এই সেতু সম্প্রসারণের জন্য অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র-সহ অর্থ বরাদ্দও হয়েছে। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে এই কাজ আজও শুরু হইনি।
রেল ও তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জুলাই এবং সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়র দীপঙ্কর দাশগুপ্ত এবং অন্য আধিকারিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত। প্রায় ১৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে লালপুল সম্প্রসারণের জন্য সিদ্ধান্ত হয়। পথ চলতি জনসাধারণের জন্য দু-দিকে দু’টি ফুট ব্রিজের পরিকল্পনা-সহ সম্প্রসারণের কাজ অবিলম্বে শুরু করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পুজো ও মেলাকে সামনে রেখে। পৌষ মেলা শেষ হওয়ার পর কাজ শুরু হবে বলে জানানো পুরসভা ও রেলের তরফে। সিপিএমএর বোলপুর জোনাল কমিটি সম্পাদক উৎপল রুদ্রের অভিযোগ, “পরিষ্কার ভাঁওতা ছাড়া কিছু নয়। কেন্দ্র কী রাজ্য সরকার সকলেই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে কোথায়? অবিলম্বে এই লালপুর সম্প্রসারণে বাধা কোথায় খুঁজে বের করে কাজ শুরু করা হোক।” বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য সিপিআই নেতা কৃষ্ণপদ সিংহরায় বলেন, “এ বিষয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। এই এলাকার অনেক নাগরিক ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এবং সমষ্টিগতভাবে একাধিকবার রেল দফতরে আর্জি জানিয়েছেন। ওই সঙ্কীর্ণ সেতু সম্প্রসারণ হলে শহরের ওই অঞ্চলের যানজটের সমস্যা অনেকটা মিটবে। কিন্তু কী কারনে অহেতুক দেরি হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। পুরসভা এবং রেল কর্তৃপক্ষ আরও উদ্যোগী হয়ে এই সমস্যা মেটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিক।”
বোলপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা এবং এআইসিসি’র সদস্য চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লালপুলের সম্প্রসারণের কাজ বর্তমানে কোন জায়গায় রয়েছে, সে বিষয় জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। দিন কয়েক আগে বরাদ্দ-সহ সব বিষয়গুলি নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে ওরা লালপুল সম্প্রসারণ এবং রেলের বেশ কিছু বিশেষ পরিষেবা সম্পর্কিত একাধিক বিষয় জানিয়েছেন। কিন্তু কেন অহেতুক দেরি হচ্ছে সে বিষয় নিয়ে কথা বলব।” রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে আঞ্চলিক রেলের পরিষেবা ব্যাবহারকারী সদস্যদের ১১৯তম বৈঠক আছে। সুশোভনবাবু জানান, বোলপুর স্টেশনে বয়স্কদের জন্য বৈদুতিন সিঁড়ি, রেল পরিষেবা সংক্রান্ত ২৪ ঘণ্টা তথ্য সরবরাহ, কবিগুরু এক্সপ্রেসের সময় পরিবর্তন, গণদেবতায় অতিরিক্ত কামরার ব্যাবস্থা-সহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে। সেখানে লালপুলের কাজ দ্রুত শুরু করার আর্জি জানানো হবে। পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “শীঘ্রই রেলসেতু লালপুলের সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে রেলকে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি।” |