ইন্টারনেটের রমরমার যুগে পাঠক ধরে রাখতে হলে রাখতে হবে সময়োপযোগী বই। বাড়াতে হবে পড়ুয়াদের জন্য বই ও পত্র-পত্রিকার সংখ্যা। গত কয়েক বছর ধরে জেলার গ্রন্থাগারগুলিতে কমতে থাকা পাঠকদের ফিরিয়ে আনতে এই ধরনের কিছু পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন অনেক পাঠক। সম্প্রতি কালনায় এক আলোচনাসভায় উঠে এল এমনই সব মত।
আলমারিতে থরে থরে বই সাজানো থাকলেও বেশির ভাগ সময়েই ফাঁকা থাকছে চেয়ার। জেলার বিভিন্ন গ্রন্থাগারে ঢুকলেই এই ছবি চোখে পড়ছে। এই অবস্থার বদল ঘটানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছে জেলা গ্রন্থাগার বিভাগ। কালনা মহকুমা গ্রন্থাগারে জেলার গ্রন্থাগারগুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা গ্রন্থাগারিক সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, ইটচুনা কলেজের অধ্যক্ষ তথা জেলার ‘লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি’-র সদস্য শ্রীকান্ত বসু ও মহকুমার বিভিন্ন গ্রন্থাগারিকেরা। সেখানে গ্রন্থাগার সর্ম্পকে নানা বিষয়ে আলোচনার মধ্যেই উঠে এল বেশ কিছু মত।
মন্তেশ্বরের পিপলন রামকৃষ্ণ পাঠাগারের সদস্য তথা জেলার প্রাক্তন পরিবহণ আধিকারিক ধনঞ্জয় সামন্ত বলেন, “গ্রন্থাগারে গল্পের বইয়ের পাশাপাশি স্কুল কলেজের পাঠ্যবই ও চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বই রাখতে হবে। গ্রামের অনেক গরিব ছাত্রছাত্রীরই এই বইগুলি কেনার ক্ষমতা নেই।” স্কুলশিক্ষিকা কাবেরী সেন গ্রন্থাগারে সমৃদ্ধ শিশু বিভাগ চালুর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “এর ফলে খুদেদের সঙ্গে তাঁদের অভিভাবকেরাও গ্রন্থাগারে আসবেন। ফলে পাঠক বাড়বে।” পাঠক কমে যাওয়ার গ্রন্থাগারে সব রকমের খবরের কাগজ না রাখাকে দায়ী করেন কালনার একটি গ্রন্থাগারের সদস্য রাহুল গুপ্ত। তাঁর দাবি, “অনেকেই খবরের কাগজ পড়ার জন্য গ্রন্থাগারে আসেন। কিন্তু এখন গ্রন্থাগারগুলিতে সব খবরের কাগজ পাওয়া যায় না। পাঠক কমে যাওয়ার এটাও একটা কারণ।” মন্তেশ্বরের এক গ্রন্থাগারিক গদাধর ঘোষ বলেন, “অনেক সময়ে পাঠকের কাছে যে বইগুলির চাহিদা থাকে সেগুলিই পাওয়া যায় না।” আধুনিক নানা বিষয়ের উপরে বইপত্র গ্রন্থাগারে পাওয়া গেলে নতুন প্রজন্মের পাঠকেরা যাতায়াত শুরু করবেন বলে অনেকে মনে করেন। উপস্থিত আলোচকদের কেউ কেউ পরামর্শ দেন, স্কুলগুলি যদি ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগার ব্যবহারের উপরে নম্বর ধার্য করে তাহলেও ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগারমুখী করা সম্ভব।
জেলা গ্রন্থাগারিক সুমন্তবাবু বলেন, “নিজের এলাকার গ্রন্থাগারটি কোথায় অবস্থিত সেটা অনেক মানুষই জানেন না। জেলার বিভিন্ন গ্রন্থাগারকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিচালন সমিতি ও কর্মীদের আরও উদ্যোগী হতে হবে।” জেলার গ্রন্থাগারগুলি যদি সঠিক সময়ে তাঁদের পরিকল্পনাগুলি জমা দেয় তাহলে অর্থ বরাদ্দে সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দিয়ে তিনি জানান, আগামী দু’বছরের মধ্যে জেলার সব গ্রন্থাগারে কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়া হবে। |