মাটি পরীক্ষা থেকে গরম পিঠের টানে ঢল উৎসবে
বাস, ছোট লরি, মোটর চালিত ভ্যান থেকে মোটরবাইক, রিক্সা, সাইকেল। জাতীয় সড়কের ধারে সব দাঁড়িয়ে সার বেঁধে। পানাগড়ের কাছে বিরুডিহা লালবাবা ময়দানের সামনে এই ছবিতেই পরিষ্কার, কেমন জমে উঠেছে মাটি উৎসব।
মাটি উৎসব ঠিক কী, প্রথম বছরে বুঝে উঠতেই সময় লেগেছিল অনেকের। দ্বিতীয় বছরে অবশ্য সে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আর নেই। তাই প্রথম দিন থেকেই মানুষের ঢল এই উৎসবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপচে পড়েছিল ভিড়। শনি ও রবিবার আসবেন বলে ঠিক করেছিলেন অনেকে। কিন্তু বাধ সাধে বৃষ্টি। সোমবার তাই কাজের দিন হলেও দলে দলে উৎসব প্রাঙ্গণে আসেন মানুষজন। বর্ধমানের নানা এলাকা তো বটেই, পাশ্ববর্তী পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া জেলা থেকেও এসেছিলেন অনেকে।
বৃষ্টি থামতেই পানাগড়ের বিরুডিহায় ভিড় জমছে মাটি উৎসবে। পসরা
সাজিয়ে বসছেন শিল্পীরা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।
দুপুরে উদ্যান পালন দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনাচক্রেও ভিড় ছিল দেখার মতো। সরকারি আধিকারিকেরা সেখানে জানান, প্রচলিত চাষে লাভ তেমন না হলেও ফল চাষে লাভ আছে। তাঁদের যুক্তি, ধানের দাম পাওয়া যায় না বলে শোনা যায়। কিন্তু আম, লিচু, আনারসের দাম পাওয়া যায় না, এমন হয় না। কারণ, ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। তুলনায় উৎপাদন কম। ১৯৯৬ সালে এই দফতরকে কৃষি দফতর থেকে স্বতন্ত্র করে দেওয়া হয়েছে। আগ্রহী চাষিরা পরামর্শ-সহ অন্য নানা সহযোগিতা পাবেন দফতরের তরফ থেকে।
বীরভূমের মহম্মদবাজার থেকে এসেছিলেন টিবু কিসকু। তিনি জানান, গত বছর এসে জেনেছিলেন, এই উৎসবে কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখা হয়। এ বার সঙ্গে পলিথিনের প্যাকেটে নিজের জমির মাটি কিছুটা এনেছিলেন। মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রের আধিকারিকের কাছে নাম-ধাম লিখিয়ে নমুনা জমা দিয়ে চলে যান আলোচনা শুনতে। তিনি বলেন, “ফল চাষ করার কথা সে ভাবে কখনও ভাবিনি। কী কী ফল চাষ করা যায়, ফিরে গিয়ে উদ্যান পালন দফতরে যোগাযোগ করে জানব।” মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রের কর্মীরা জানান, দৈনিক ৬০ জন করে চাষি মাটি পরীক্ষা করানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আউশগ্রামের লক্ষ্মীরানি ঘোষ, কাঁকসার আমলাজোড়ার বিজন ঘোষেরা জানান, তাঁরাও মাটির নমুনা জমা দিয়েছেন পরীক্ষার জন্য।
মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশেই বিস্তীর্ণ জায়গায় হাতে-কলমে ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (আইপিএম), বিনা কর্ষণে চাষ, ‘শ্রী’, ‘ড্রাম সিডিং’ পদ্ধতির চাষ আগ্রহীদের দেখানোর ব্যবস্থা করেছে কৃষি দফতর। দফতরের কর্মী-আধিকারিকেরা জানান, আইপিএম নিয়ে উৎসাহ ভালই। স্থানীয় বিদবিহার এলাকার গৌতম বসু, রতন মণ্ডলেরা ‘ফেরোমেন ফাঁদ’, ‘আলোক ফাঁদ’ বা একই সঙ্গে ভুট্টা ও সরষে চাষের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সবিস্তারে জেনে নিচ্ছিলেন। সহ-কৃষি অধিকর্তা মিলন মণ্ডল বলেন, “মাত্রাছাড়া কীটনাশক ব্যবহারে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুরীতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শামুক, কেঁচো হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শরীরেও পরোক্ষ ভাবে সেই কীটনাশকের প্রভাব পড়ছে। তাই প্রাকৃতিক কিছু দিয়েই পোকা নিয়ন্ত্রণ করায় জোর দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের উৎসাহ দেখে ভাল লাগছে।”
ভিড় জমছে নানা স্টলে। মাটি উৎসবে সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
কৃষিজ বিপণন দফতরের স্টলে তেল বের করার যন্ত্র, মশলা পেষাই যন্ত্র ইত্যাদির প্রদর্শন হচ্ছে। ‘জল ভরো জল ধরো’ প্রকল্পের পুকুর খোঁড়া হয়েছে গত বারের মতোই। সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে পুকুরের জলতল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। মৎস্য দফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের মাছচাষের ছবি-সহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন দফতর আলাদা করে বিশাল জায়গা জুড়ে স্টল বানিয়েছে। সেখানে সব জেলার বিশেষ হস্তশিল্প নিয়ে স্টল রয়েছে। ‘আনন্দধারা’র স্টলে প্রদর্শিত হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে গড়া শিল্পকর্ম। এই সমস্ত স্টলে অবশ্য তেমন ভিড় নজরে আসেনি। তবে খাদ্য সরবরাহ দফতরের স্টলে কচুরি-আলুর দম, মিষ্টি খেতে রীতিমতো লাইন। পাশেই পিঠে-পুলির স্টলে হাতেগরম পিঠের স্বাদ পেতে ভিড় করেছিলেন অনেকেই। সেখানে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকেও সস্ত্রীক দেখা যায়। গত বারের মতোই দক্ষিণ ২৪ পরগনার মছলন্দপুর থেকে এসেছেন সুনীতা দাস। নিজের হাতে পিঠে গড়ে খাওয়াচ্ছেন আগ্রহীদের। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের স্টলে নাগেট বা সসেজ খাওয়ার ভিড় ছিল দেখার মতো। নাগেট মুখে বর্ধমানের ছোটনীলপুরের তোতা ঘোষ বলেন, “রথ দেখা-কলা বেচা দুই-ই হচ্ছে।”
স্টল ঘোরা, বিভিন্ন শিল্পকর্মের মধ্য থেকে পছন্দের জিনিস কেনা, রসনা পরিতৃপ্তি সেরে যাওয়ার আগে সবাই এক বার থামছেন মূল মঞ্চের সামনে। কারণ, প্রতি দিন বিকেলে সেখানে হচ্ছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সোমবার নদিয়ার বাউল গান, মালদহের গম্ভীরা, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝুমুর, মুর্শিদাবাদের রাইবেঁশে নাচ উপভোগ করেন উৎসবে আসা মানুষজন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.