পরিকল্পনা হয়েছিল বছর ছয়েক আগে। সেই মতো কাজের বরাতও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু করেনি বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা। আর উদ্যোগী হয়নি এডিডিএ-ও। ফলে, এখনও বাস্তবায়িত হয়নি কৃত্তিম পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ। ফের এই কেন্দ্র তৈরির ব্যাপারে তৎপরতার দাবি তুলে সরব হয়েছেন মহকুমার পর্বতারোহীরা।
আসানসোল মহকুমার নানা এলাকায় পর্বতারোহীদের বেশ কিছু ক্লাব রয়েছে। শীতের মরসুমে ক্লাবগুলি পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন শুরু করে দেয়। মূলত পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী বা বেরো পাহাড়েই মাস তিনেক ধরে চলে এই প্রশিক্ষণ। প্রতি বছর শিল্পাঞ্চলের কয়েক হাজার ছেলে-মেয়ে তাতে যোগ দেয়। ফেব্রুয়ারিতে প্রশিক্ষণ পর্ব গুটিয়ে ফেলতে হয়। কারণ এই সময় থেকে পাহাড়ের উত্তাপ বড়তে থাকায় আর চড়া যায় না। আসানসোলের পর্বতারোহণ প্রশিক্ষক তুষার সরকার বলেন, “পাহাড়ে চাপা খুব সহজ কাজ নয়। পদে পদে ঝুঁকি থাকে। এ জন্য গোটা বছর ধরে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তিন মাসের প্রশিক্ষণ মোটেই যথেষ্ট নয়।” তুষারবাবু জানান, শিল্পাঞ্চলের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে পর্বতারোহণে উৎসাহ বাড়ছে। তাই গোটা বছর ধরে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। |
প্রশিক্ষণে ভরসা পুরুলিয়ার পাহাড়। |
আসানসোলে এই চাহিদার কথা ভেবে কয়েক বছর আগে মহকুমার দশটি পর্বতারোহী ক্লাব জোটবদ্ধ হয়। সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়। তার আহ্বায়ক চিন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এডিডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আসানসোলে একটি কৃত্তিম পর্বতারোহণ কেন্দ্র গড়ার আবেদন করি ২০০৮ সালে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে এডিডিএ একটি বেসরকারি সংস্থাকে সেটি তৈরির বরাতও দেয়। কিন্তু কী কারণে সেটি তৈরি হল না জানি না।” চিন্ময়বাবু জানান, প্রতি বছর হাজারখানেক ছেলে-মেয়ে পাহাড়ে চাপার প্রশিক্ষণ নেন। আসানসোলে কেন্দ্রটি তৈরি হলে গোটা বছর ধরে প্রশিক্ষণ পেতে পারতেন তাঁরা। ‘ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন’-এর সদস্য সুমন্ত তালুকদারের দাবি, কৃত্তিম পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হলে সব চেয়ে বেশি লাভবান হবেন প্রশিক্ষকেরা। কারণ, প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদেরও অনুশীলনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বাড়ানো দরকার। গরমে পাহাড়ে চাপা না যাওয়ায় এই অনুশীলনের সুযোগ থাকে না। কৃত্তিম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হলে নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ পাবেন তাঁরা। ফের এই কৃত্তিম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তৈরিতে উদ্যোগী হতে এডিডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন পর্বতারোহীরা।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল স্টেডিয়াম লাগোয়া অঞ্চলে এই কৃত্তিম পর্বতারোহণ কেন্দ্রটি ২০০৮ সালে তৈরির পরিকল্পনা করেন কর্তৃপক্ষ। এ জন্য খরচ ধরা হয় প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। ঠিক ছিল, এখানে একটি কৃত্তিম পাহাড়ের দেওয়াল, একটি অফিস ভবন, পাহাড়ে চাপার বিভিন্ন কায়দা ছবির মাধ্যমে দেখানোর জন্য একটি ভিডিও কক্ষ, প্রশিক্ষণ নিতে আসা ছেলেমেয়েদের পোশাক পাল্টানোর জায়গা ইত্যাদি তৈরি হবে। এ জন্য এডিডিএ-র তরফে একটি দরপত্রও ডাকা হয়। একাধিক সংস্থা আবেদনপত্র জম দেয়। ২০০৮ সালের ১৪ জুলাই বরাত পায় কলকাতার একটি সংস্থা। কিন্তু এর পরেও কাজটি শুরু হয়নি। এডিডিএ-র এক আধিকারিক জানান, তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সংস্থাটি কাজ শুরু না করায় তাদের সে বছর ৫ নভেম্বর চিঠি দিয়ে কাজের বরাত বাতিলের কথা জানানো হয়। কিন্তু তার পরে আর কাউকে কাজের বরাত দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি এ সবের কিছুই জানি না। কেন কাজটি আটকে রয়েছে, তা খোঁজ নিতে হবে।” |