রেললাইনের পাশে এক যুবকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ এক দম্পতিকে গ্রেফতার করল।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দম্পতির নাম উত্তম দাস ও তাপসী দাস। তাঁদের বাড়ি কেতুগ্রাম থানার বেণীনগর গ্রামে। সোমবার কাটোয়ার এসিজেএম আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ওই দম্পতিকে চার দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের দাবি, তদন্তে তারা জানতে পেরেছে, শনিবার রাতে ওই দম্পতি ও নিহত যুবক এক জায়গাতেই ছিল। ধৃত দম্পতি জেরার মুখে সমস্ত ঘটনায় স্বীকার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে বেণীনগর ও ধান্দলসা গ্রামের মাঝে কাটোয়া-আমোদপুর ব্রডগেজ লাইনের কাছে খেতজমি থেকে লক্ষ্মণ দত্ত (২৮) নামে এক ব্যক্তির গলার নলি কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। মৃতদেহের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। দেহ উদ্ধারের পরে, গত কাল দুপুরে মৃতের ভাই গৌর দত্ত কেতুগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, শনিবার বিকালে তাঁর দাদা, লক্ষ্মণ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তারপরে সারা রাত বাড়ি ফেরেনি। রবিবার সকালে স্থানীয় অরুণ গোস্বামীর জমিতে তাঁরা লক্ষণের মৃতদেহ দেখতে পান।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, লক্ষ্মণের সঙ্গে পাশের বেণীনগর গ্রামের এক তরুণীর প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক ছিল। গত শুক্রবার ওই তরুণীর বাড়ির লোকেরা তাঁদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। এরপরে লক্ষ্মণকে তরুণীর পরিবারের লোকেরা তাঁদের বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন এবং তাঁদের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারপরেও শনিবার ওই তরুণীর বাবা-মা যখন কলকাতার একটি হাসপাতালে এক আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন তখন লক্ষ্মণ তরুণীর বাড়িতে যান। তখন সেখানে ওই তরুণীর দিদি ও জামাইবাবু ছিলেন। পুলিশের দাবি, তাঁদের কাছে ওই তরুণী জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা একসঙ্গে তেলেভাজা দিয়ে মুড়ি খান। তারপর রাতের দিকে দিদি-জামাইবাবু লক্ষ্মণকে তাঁদের মাটির বাড়ির দোতলায় নিয়ে যায়। এরপরে রাতে তাঁর দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে লক্ষ্মণের বচসা হয়। ধস্তাধস্তির আওয়াজও পাওয়া যায়। পুলিশের দাবি, এরপরে রবিবার ওই তরুণী উপরে গিয়ে ঘরে রক্ত পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানিয়েছেন। পুলিশের আরও দাবি, ওই তরুণী তাঁদের জানিয়েছেন, কেন রক্ত পড়ে রয়েছে সে কথা জিজ্ঞাসা করার পরে তাঁর দিদি কোনও উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে রক্ত পুছে দেয়। তবে, ঘর থেকে লক্ষ্মণবাবুর দেহ রেললাইনের পাশে গেল কী করে সেই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহটি যেখানে উদ্ধার হয়, তার খুব কাছেই ওই তরুণীর দিদি-জামাইবাবুর বাড়ি। সেই কারণে পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওই দম্পতির উপরে। কেতুগ্রাম থানার আই সি আব্দুল গফ্ফর বলেন, “কী কারণে এই খুন সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ধৃতদের আরও জেরা করে খুনের কারণ জানার চেষ্টা করা হবে।” |