আদালত থেকে জেলখানায় ফেরার সময়ে পুলিশের চোখে ধুলো ছিটিয়ে পলাতক ছয় বিচারাধীন বন্দির দু’জনকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করল বর্ধমান থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম দীপঙ্কর সরকার ও রাজা দাস। দীপঙ্করের বাড়ি চুঁচুড়া থানার ব্যান্ডেলের কেউটা নেতাজি পার্ক ২-এ। অপর জন বরাহনগর থানার সতীশ সেন নগরের বাসিন্দা।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “এই দু’জনকে বর্ধমানের শিয়ালডাঙা বাজারের কাছে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয় মানুষ পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করে। তাদের হেফাজত থেকে গুলি ভরা একটি পাইপগান ও একটি চপার উদ্ধার করা হয়েছে।” |
চুঁচুড়া থেকে পালানো দুই বন্দি। —নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ সুপার জানান, গত ১০ ফেব্রুয়রি চুঁচুড়া আদালত থেকে জেলে ফেরার সময়ে ছ’জন বিচারাধীন বন্দি পুলিশের প্রহরীদের চোখে ধুলো ছিটিয়ে ও তাদের মারধর করে পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে তিন জনকে ইতিমধ্যে হুগলির পুলিশ ধরেছে। বাকি তিন জনের মধ্যে দু’জনকে বর্ধমান থানার পুলিশ গ্রেফতার করল। এই দু’জন ২০১২ সালে হুগলির পোলবা থানায় ডাকাতি করতে গিয়ে খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্ত। তাদের জেল হেফাজতে রেখেই বিচার শুরু হয়েছিল।
পুলিশ সুপার জানান, এই দু’জন দাগি দুষ্কৃতী। পুলিশের হেফাজত থেকে তারা ছক কষেই পালিয়েছিল। এই দুই অভিযুক্তকে সোমবার বর্ধমানের সিজেএম আদালত তোলে পুলিশ। পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করা হবে, বর্ধমানে তারা কেন এসেছিল। স্থানীয় কেউ তাদের আশ্রয় দিয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। এ ব্যাপারে হুগলি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছে।
চুঁচুড়ার ঘটনার পরে বর্ধমানে বিচারাধীন বন্দিদের নিয়ে যাওয়া-আসার ব্যাপারে বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্নে পুলিশ সুপার এ দিন বলেন, “হাতকড়া পরিয়ে অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম আর নেই। তবে চার পাশে পুলিশ রেখে ‘রিং রাউন্ড’ পদ্ধতিতে অভিযুক্তদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাতে সহজে কারও পক্ষে পালানো সম্ভব হয় না।” এরই পাশাপাশি অভিযুক্তদের জেল থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার কাজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কিন্তু বর্ধমান আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিজন ভ্যানের ভিতরে বসে অভিযুক্তদের খেতে দেখা যায়। এই কাজে পুলিশ কী করে অনুমতি দেয়? খাবারের সঙ্গেই তো লঙ্কা গুঁড়ো হাতে আসতে পারে অভিযুক্তদের কাছে। এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, “মানবিক কারণেই পুলিশ বিচারাধীন বন্দিদের কিছু খাবার দিতে দেয় বাড়ির লোকজনকে। তবে আমরা ওই খাবার পরীক্ষা করে দেখব। এমনকী, যে ভ্যানে করে বন্দিদের আদালতে আনা-নেওয়া হয়, সেগুলিও পরীক্ষা করে দেখা হবে, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালানোর চক্রান্ত করে কোনও যন্ত্রাংশ ঢিলে করে রাখা হয়েছে কি না, তা দেখতে।” |