দু’মাস সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব স্থগিত থাকার পরে কয়েক দিন আগে থেকে ফের শুরু হয়েছে কেতুগ্রামে ট্রেন তেকে নামিয়ে ধর্ষণের মামলা। সোমবার অবশ্য এই মামলার সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় শুনানি হয়নি। তবে এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী, কাটোয়া-আমোদপুর ছোট রেলের সহকারী চালক কালোসোনা ঘোষ গত শুক্রবার আদালতে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা এক মহিলা যাত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ছিল। বেশ কিছুক্ষণ পরে ওই মহিলা ট্রেনের কামরায় উঠে আসেন। তার পরে ট্রেন কাটোয়ার উদ্দেশে রওনা হয়।
মামলার সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই বক্তব্যটি আদালতের কাছে খুবই মনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আমার হয়।”
২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কাটোয়ামুখি আমোদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ লাইনের (এখন ব্রডগেজের কাজ চলছে) পাচুন্দি ও গোমাই স্টেশনের মাঝে ট্রেন আটকে এক দল দুষ্কৃতী লুঠপাট চালায়। সেই সময় কানের দুল দিতে অস্বীকার করায় মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিধবা মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ওই মহিলা ও তাঁর মেয়ে কাটোয়া উপ-সংশোধনাগারে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেন। তার পরে আদালতেও বিচারকের সামনে আসামির কাঠগড়ায় থাকা রেজাউল মির্জা, নয়ন শেখ ও ফরিদ শেখকে অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়ে চিহ্নিত করেন। এই মামলায় অন্য অভিযুক্তেরা হল স্বপন শেখ, কায়েশ শেখ, নুল মহম্মদ, সেন্টু শেখ ও কালাম শেখ। তাদের মধ্যে রেজাউল, নয়ন ও সেন্টু জেল হেফাজতে রয়েছেন। কায়েশ শেখকে এখনও পুলিশ ধরতে পারেনি। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ফরিদ ও কালামের। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।
কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে পরেশচন্দ্র কর্মকারের এজলাসে এই মামলার তৃতীয় পর্বের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। পুলিশ জানায়, প্রথম দু’পর্বে যে সব সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি, তাঁদের ফের আদালত ডেকেছে। এই পর্বে তাঁরাই সাক্ষ্য দেবেন। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই পর্বের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথম দিন সাক্ষ্য দেন অম্বলগ্রাম স্টেশনের কেবিনম্যান (এখন অগ্রদ্বীপ স্টেশনে রয়েছেন) সুজিত রাম। আইনজীবীদের থেকে জানা গিয়েছে, ওই কেবিনম্যান জানান, অম্বলগ্রাম স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে বেশ কিছু লোক জানায়, ‘ট্রেনে ছিনতাই, ডাকাতি ও ঘটনাস্থলে ধর্ষণ হয়েছে। এক জন অভিযোগ বইতে অভিযোগ লিপিবদ্ধও করেন।’ নিয়মমাফিক তিনি অজয় কেবিনের স্টেশন মাস্টারকে বিষয়টি জানান। শুক্রবার সাক্ষ্য দেন ওই ট্রেনের সহকারী চালক কালোসোনা ঘোষ। তিনি আদালতে জানান, দুষ্কৃতীরা এক মহিলা যাত্রীকে জোর করে ট্রেন থেকে নামায়, তার বেশ কিছুক্ষণ পরে ওই মহিলা ট্রেনে ফিরে আসেন। তবে এই ঘটনা তাঁদের এফআইআরে লেখা ছিল না বলে জানান তিনি। ওই ট্রেনের গার্ড ও চালকেরা কাটোয়া রেলপুলিশের কাছে ট্রেনে লুঠপাটের ঘটনা জানিয়ে এফআইআর করেছিলেন। অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেরার সময় কালোসোনাবাবু অবশ্য ওই মহিলার নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি।”
বৃহস্পতিবার ওই ট্রেনের চালক মানিক প্রধান আদালতে সাক্ষ্য দেন। আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনের দুই চালক ছিনতাইয়ের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা ট্রেনের গার্ডের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরেছিল। গার্ড ওই দুষ্কৃতীদের কথা মতো ওয়াকিটকিতে ট্রেন থেকে একটি শিশু পড়ে গিয়েছে বলে ট্রেন থামানোর নির্দেশ দেন। ট্রেন থামানোর পরে শিশুটিকে দেখতে তাঁরা ট্রেন থেকে নামেন। গার্ডের কামরার কাছে যেতেই চালক মানিক প্রধানের মাথাতেও দু’তিন জন দুষ্কৃতী পিস্তল ধরে। তার পরে তাঁদের ওয়াকিটকি, টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। যাত্রীদের কাছ থেকে লুঠপাট করে দুষ্কৃতীরা।
আজ, মঙ্গলবার ওই ট্রেনের যাত্রী, বীরভূমের লাভপুরের বেনেপাড়ার বাসিন্দা বাণী সূত্রধর ও রাজু সূত্রধরের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা। |