দেওয়াল ঘেঁষা গুলির চিহ্ন দেখল এসআইটি
কোন জানলা দিয়ে গুলি করা হয়েছিল, ওই সময় ঘরের মধ্যে কে কী ভাবে ছিলেন পাড়ুইয়ে নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের পরিবারের কাছ থেকে ওই দিনের ঘটনার কথা শুনলেন এডিজি (সিআইডি) রামফল পওয়ার।
পাড়ুই-কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠিত হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বীরভূমের পাড়ুই থানার বাঁধনবগ্রামে নিহতের বাড়িতে পৌঁছন পাঁচ সদস্যের বিশেষ দলের দুই সদস্য এডিজি (সিআইডি) এবং আইজি (সিআইডি) নীরজ সিংহ। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে নিহতের স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ এবং পুত্রবধূ শিবানী ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। গত বছর ২১ জুলাই রাতে ঠিক কী কী ঘটেছিল, তা জেনে নিজেরা নোট নেন। দেওয়াল ঘেঁষে যাওয়া গুলির চিহ্ন, রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা নিহতের রক্তের দাগ দেখেন তাঁরা। ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করেছে কি না, সে বিষয় নিয়েও পরিবারের সদস্যদের কথা বলে তদন্তকারী দল। জিজ্ঞাসাবাদ করার ফাঁকে এডিজি (সিআইডি) এবং আইজি (সিআইডি) বাড়ির দোতলার ছাদে গিয়ে আশপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেন।
রবিবার নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে এডিজি (সিআইডি) রামফল পওয়ার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
চারদিকের অবস্থান সম্পর্কে খুঁটিয়ে তথ্য জেনে নেন। রাত সাতটা পর্যন্ত চলে জিজ্ঞাসাবাদ-পর্ব।
রামফল এবং নীরজ সিংহ আসার আগেই অবশ্য প্রথম দফায় এ দিন দুপুর পৌনে ১টা থেকে পৌনে ২টোর কিছু বেশি সময় পর্যন্ত বিশেষ তদন্তকারী দলের আরও দুই সদস্য, ডিএসপি (সিআইডি) শঙ্কর ভট্টাচার্য এবং ঘটনার তদন্তকারী সিআইডি অফিসার তীর্থঙ্কর সান্যাল ভিডিওগ্রাফারকে নিয়ে খুনের ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী সরস্বতীদেবী ও শিবানীদেবীর বক্তব্য শোনেন। নিহতের জামাই অনুপ পালের বক্তব্যও রেকর্ড করা হয়। বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ ফের ওই বাড়িতে যান তাঁরা। এ বার নিহতের নাতি তন্ময় ঘোষ, জামাই চঞ্চল মণ্ডল, ওই গ্রামের যে বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ সাগরবাবুকে বোলপুর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই বুদ্ধদেব পালের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ আসেন এডিজি (সিআইডি) এবং আইজি (সিআইডি)। তাঁরা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিহতের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন এবং গোটা বাড়ি ঘুরে দেখেন। সমস্ত বিষয় টানা ভিডিও রেকর্ডিং করেন তদন্তকারীরা। রেকর্ডিং করা হয় নিহতের ছেলে হৃদয় ঘোষের বক্তব্যও। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ সম্পর্কেও জানতে চান ওই দুই তদন্তকারী। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বর্তমান তদন্তকারী দলের সঙ্গে ছিলেন বীরভূম জেলা গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার প্রশান্ত নন্দী এবং আর এক সিআইডি অফিসার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই দু’জন আগের তদন্তকারী দলের সদস্য ছিলেন।
এ দিন এসআইটি-র সদস্যদের কাছে ভিডিও ক্যামেরার সামনে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে অনেকটা স্বস্তির ছাপ দেখা গিয়েছে নিহতের পরিবারে। তদন্তকারী দলের সব সদস্য চলে যাওয়ার পরে সাগরবাবুর স্ত্রী ও পুত্রবধূ বলেন, “এঁদের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের ভরসা পাচ্ছি।”
নিহত সাগর ঘোষের পরিবারের করা এফআইআরে প্রথম নাম যাঁর, সেই জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ঘিরে বিতর্ক এ দিনও থামেনি। মুখ্যমন্ত্রীর পরে নাম না করে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে এক দলীয় সভায় নির্দল প্রার্থীদের (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) উপরে হামলা চালানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন অনুব্রত। তার পরেই পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়। খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগরচন্দ্র। শনিবার দুর্গাপুরে তৃণমূলের যুব, যুবা ও ছাত্রদের নিয়ে এক কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেষ্ট (অনুব্রত) ভাল সংগঠক। কেউ কেউ ওঁর পিছনে লাগে। এক জন ভাল সংগঠকের জন্য শেষ শক্তি পর্যন্ত থাকব।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক বাধে। সমালোচনায় সরব হন বিরোধীরা।
অনুব্রতর ওই বিতর্কিত মন্তব্যের প্রসঙ্গ সরাসরি না টেনেও রবিবার কলকাতায় আইএনটিটিইউসি-র এক অনুষ্ঠানে ফিরহাদ বলেন, “এক জন যদি ভাল সংগঠক হয়, তাঁর পাশে গোটা দলেরই দাঁড়ানো উচিত। কারণ, এক জন মুখে কী বলল, সেটা আইনে প্রমাণ করা যায় না। মুখে কিছু বলা মানেই অপরাধ করা নয়। এ কথা বলার মানে, কর্মীদের উজ্জীবিত করা।” এ ব্যাপারে হৃদয়বাবুর প্রতিক্রিয়া, “কে কী বলল, জানি না। আমাদের আশা, এ বার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। আর দোষীরা শাস্তি পাবেই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.