গত বছর ডেঙ্গিতে শিলিগুড়ি এবং সংলগ্ন অঞ্চলে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে তাই আগাম সতর্কতা নিতে চায় রাজ্য। গত বছর নানা জেলায় ডেঙ্গির কোথায় কী পরিস্থিতি ছিল এবং ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা ঠিক করতে পুরসভা, জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে পর্যালোচনা-মূলক বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যকে চারটি জোনে ভাগ করে পর্যালোচনা মূলক বৈঠক হচ্ছে। সুডা-র অধিকর্তা, পুর দফতরে প্রধান সচিবদের সামনে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক, পুরসভার কর্তৃপক্ষকে নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরে এবং গত মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। ১৭ ফেব্রুয়ারি হাওড়ায় এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি কল্যাণীতে একই বৈঠক হবে সংশ্লিষ্ট জোনের জেলাগুলিকে নিয়ে। পর্যালোচনা-মূলক বৈঠকগুলির পরেই কোথায় কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেই মতো পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
বুধবার শিলিগুড়িতে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “গত ২৯ জানুয়ারি নবান্নতে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আগাম সতর্ক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এ জন্য জেলাগুলিকে চারটি জোনে ভাগ করে ‘ডেঙ্গি রিভিউ’ বৈঠক হচ্ছে। এর পর যে এলাকাগুলি ‘হাইরিস্ক জোন’, সেগুলিকে নিয়ে আলাদা ভাবে বসা হবে। কোথায় কী ব্যবস্থা নিতে হবে তার পরেই নির্দেশ দেওয়া হবে।” ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কেননা শহর, লাগোয়া এলাকায় যে সমস্ত নির্মাণ কাজ চলে সেখানে পড়ে থাকা ভাঙা কৌটা, নারকেলের মালা, পাত্রে জমে থাকা জল ডেঙ্গি মশার আঁতুর ঘর। নির্মাণ কাজের জায়গাগুলিতে যাতে এ ভাবে জল জমে না-থাকে, বাড়িতে কোনও পাত্রে যাতে জল জমে না-থাকে সে ব্যাপারে বাসিন্দদের সতর্ক করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে পূরসভাগুলিকেই। সে কারণে সুডা-র আধিকারিক, পুর দফতরের সচিবরাও থাকছেন বৈঠকগুলিতে। শিলিগুড়িতে ৬ জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক, উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২, শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র, ডেপুটি মেয়র, অন্য পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ার ম্যান ছিলেন। গত বার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ি পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই কী ভাবে সমন্বয় রেখে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ করা যায় তা নিয়ে এ দিন বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে ডেঙ্গি চিহ্নিত করতে ম্যাক-এলাইজা রক্ত পরীক্ষার জন্য বিশেষ যন্ত্র চাওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আগাম সতর্কতায় ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার যন্ত্র পুরসভার থাকলে রোগ প্রতিরোধের কাজে সুবিধা হবে। সে জন্য আবেদন করা হয়েছে। তা ছাড়া শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গির জন্য এক বিশেষ ওয়ার্ড বা ১০টি করে শয্যা রাখার কথাও জানানো হয়েছে।” শিলিগুড়ি হাসপাতালে ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার জন্য একটি যন্ত্র দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি আছে। কোচবিহারে প্রত্যন্ত গ্রামের জন্য জেলা হাসপাতালে এই আধুনিক যন্ত্র দিলে ভাল হয় বলে চিকিৎসকদের একাংশের মত। সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রের অভাব থাকায় নার্সিংহোমগুলি ৪-৫ গুণ বেশি টাকা নেয় বলে অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বৈঠকে পুরসভাগুলির তরফে আর্জি জানানো হয়েছে। |