গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ভরদুপুরে গুলি করে খুন করা হল এক মহিলাকে। বুধবার দুপুর সওয়া তিনটে নাগাদ শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ভক্তিনগর থানার হাতিয়াডাঙা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম রিনা ঘোষ (৩৫) ওরফে রুনু। তাঁর মাথা ফুঁড়ে গুলি গাড়ির ছাদ ফুটো করে দিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, রিনাদেবী রেলের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর স্বামী পীযূষ ঘোষের বালিপাথর সরবরাহের ব্যবসা রয়েছে। পাশাপাশি জমি কেনাবেচা এবং অন্য ব্যবসার সঙ্গেও ওই দম্পতি জড়িত। পীযূষবাবুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন বলেন, “অবৈধ সম্পর্ক জনিত কারণে অথবা ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে ওই খুন হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ওই বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে পীযূষবাবুর সঙ্গে শেষবার কথা হওয়ার সময়ে রিনাদেবী জানিয়েছিলেন, তিনি নিউ জলপাইগুড়ি এলাকায় রয়েছেন। |
|
|
শিলিগুড়িতে এই গাড়ির মধ্যেই খুন হন রিনা ঘোষ (ছবি ডান দিকে)। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
|
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতিয়াডাঙা এলাকায় এই পরিবার এসেছে মাস তিনেক আগে। এর আগে পীযূষবাবু শিলিগুড়িতে হিলকার্ট রোডের উপরে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই দম্পতির কোনও সন্তান নেই। তাঁদের একতলা বাড়ির চাল টিনের। রিনাদেবীকে সম্প্রতি সদ্য কেনা ওই গাড়িটি চালিয়ে ঘোরাফেরা করতে এলাকার অনেকেই দেখেছেন। তবে গাড়িটি তাঁর নিজের কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিনও তিনি গাড়িটি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। আচমকাই একটি কালো রঙের মোটরবাইক পিছন থেকে এসে কানকাটা মোড়ের কাছে তাঁর গাড়ির ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে। রিনাদেবীর গাড়িও তখন ওই মোড়ের মুখে আস্তে হয়ে গিয়েছিল। তিনিও গাড়ি থামিয়ে দেন। তাঁর গাড়ির জানলার কাচ নামানো ছিল। সেই সময়েই এক দুষ্কৃতী তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। তাঁর ডান কপালের ধারে লাগে গুলিটি। তবে কী ঘটেছে, তা এলাকার মানুষ বোঝার আগেই দুষ্কৃতীরা বাইপাস ধরে উধাও হয়ে যায়। |
বুধবার দুপুরে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় শিলিগুড়ির ভক্তিনগরের
হাতিয়াডাঙায় গুলিতে খুন হন রিনা ঘোষ। তাঁর বাড়িতে পুলিশ প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র। |
আশপাশের মানুষ এরপরে গিয়ে দেখেন, তার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন রিনাদেবী। শিলিগুড়ি হাসপাতালে আনার পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এলাকার বাসিন্দাদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে দুষ্কৃতীরা গুলি ছুড়লেও তেমন শব্দ হয়নি। যে বন্দুক থেকে গুলি করা হয়েছে, তাতে দুষ্কৃতীরা ‘সাইলেন্সর’ ব্যবহার করে থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন উত্তরবঙ্গেই। এ দিন দুপুরে মালবাজারে একটি অনুষ্ঠান সেরে তিনি বিকেলে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে সুকনা বনবাংলোয় পৌঁছন। মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সেরে শিলিগুড়িতে ফিরে রিনাদেবীদের বাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মৃতার দেওর এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। গৌতমবাবু বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কে বা কারা এই ঘটনায় জড়িত খতিয়ে দেখে অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের ধরতে বলা হয়েছে।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, “ভয়ঙ্কর ঘটনা।
দিনে দুপুরে এক জন মহিলাকে এভাবে দুষ্কৃতীরা খুন করল! ভাবাই যায় না। শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা একেবারেই নেই।” |