পিচঢালা চকচকে রাস্তা। কিন্তু মান্ধাতার আমলের দুই সেতু শান্তি কেড়েছে শান্তিনিকেতনগামী যাত্রীদের। বর্ধমান-সিউড়ি রোডে ভাতারে বড়ার চৌমাথার কাছে ওই দুই রুগ্ণ সেতুতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সেই জট এড়াতে যে ঘুরপথ ধরতে হচ্ছে, তা খানাখন্দে ভরা। ফলে, শান্তিনিকেতন বা বোলপুর যাত্রা কার্যত বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যটকদের কাছে।
সেতু দু’টি সংস্কার শুরু করেছে পূর্ত দফতর। দিন কয়েকের মধ্যে সেগুলি অস্থায়ী ভাবে খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়া খারাপ রাস্তাটি কবে সারানো হবে, নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি বর্ধমান জেলা পরিষদ। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “জেলার কোন রাস্তার কী অবস্থা, সব তথ্য নেই। ওই রাস্তাটি সারানোর পরিকল্পনা আপাতত নেই। তবে খোঁজ নেওয়া হবে। তেমন পরিস্থিতি হলে সারানো হবে।” |
এই রাস্তা দিয়েই চলছে যাতায়াত। ছবি: উদিত সিংহ। |
বোলপুর বা শান্তিনিকেতন যেতে আগে পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় হয়ে ইলামবাজার রোড ধরতেন পর্যটকেরা। কিন্তু সেই রাস্তাও বেশ খারাপ। কাঁকসা ও ইলামবাজারের মাঝে রাস্তা থেকে পিচ উঠে পাথর বেরিয়ে গিয়েছে। ফলে, শান্তিনিকেতন বা বোলপুর যেতে বর্ধমান-সিউড়ি ভায়া গুসকরা রাস্তাই ভরসা। কিন্তু সেই পথে ঘুম কেড়েছে ভাতারের দু’টি সেতু। কয়েক মাস আগে সেতু দু’টির কিছু অংশ ভেঙে বড়-বড় গর্ত তৈরি হয়। ভেঙে পড়ে গার্ডওয়াল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তখন কিছু দিন যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে জোড়াতালি দিয়ে সেতু দু’টি মেরামত করা হয়। কিন্তু সরু সেতু দু’টি দিয়ে এক সঙ্গে একাধিক গাড়ি যেতে পারে না। ফলে, সব সময়েই সেতুর দু’পাশে গাড়ির লম্বা লাইন। এই যানজট এড়াতে বাস, ট্রাক-সহ নানা গাড়ি বড়ার চৌমাথা থেকে বামুনিয়া, কামারপাড়া, মান্দারবাটি, শিলাকোট ইত্যাদি গ্রামের ভিতরের রাস্তা দিয়ে ওরগ্রামে ফের বর্ধমান-সিউড়ি রাস্তা ধরছে। শুধু বীরভূম নয়, বর্ধমান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গুসকরা যেতেও এই পথই ভরসা। সে জন্য ৮-১০ কিলোমিটার বাড়তি ঘুরতে হচ্ছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, গাড়ির চাপ বাড়ায় এই রাস্তাও বেহাল হয়ে পড়েছে। গাড়ির ধুলোয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় করঞ্জি গ্রামের স্বপন মেটে বলেন, ‘‘বর্ধমান-সিউড়ি রোডের সংস্কার হয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু ওই দু’টি সেতুর তখন সংস্কার হয়নি। ভারী ট্রাক উঠলেই সেতু ভেঙে পড়বে বলে ভয় হয়।” ঘোলদা গ্রামের সাবির মণ্ডলের অভিযোগ, “সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় যানজট হচ্ছে। রাতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে লুঠপাটও ঘটছে। তাই সেতুর কাছে পুলিশ ক্যাম্প বসেছে।” শিলাকোট গ্রামের অনিল মুদি জানান, সেতু দু’টি সারানোর দাবিতে বিক্ষোভ-অবরোধও হয়েছে। কিন্তু ফল হয়নি।
সমস্যায় পড়েন বীরভূম থেকে বর্ধমান বা কলকাতাগামী যাত্রীরাও। বোলপুরের অ্যাম্বুল্যান্স চালক পিয়ার শেখের কথায়, “রোগী নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে যাওয়ার সময় সেতুর কাছে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়, অথবা গ্রামের খারাপ রাস্তা ধরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে হয়।” পর্যটকদের অনেকের অভিযোগ, গ্রামের রাস্তাটিতে নানা জায়গায় গাড়ি আটকে এলাকার উন্নয়ন বা পুজোর জন্য চাঁদা আদায় করছেন কিছু গ্রামবাসী। অভিযোগ না হওয়ায় অবশ্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “মাস ছয়েক আগে এনএইচ ২-বি বিভাগ ও পূর্ত দফতরকে জানিয়েছি, এই সেতু সারানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এনএইচ ২-বি বিভাগ যখন সিউড়ি রোডের সংস্কার করেছে, সেতু দু’টির কাজও তাদেরই করতে হবে। এই মর্মে আমরা তাদের চিঠিও পাঠিয়েছি।”
বর্ধমান পূর্ত দফতরের এনএইচ ২-বি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ সিংহ বলেন, “ওই সেতুগুলি সংস্কার বা নতুন করে তৈরি আমাদের কাজের তালিকায় ছিল না। তবে সেচ বিভাগ বলায় কাজ শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, ২৭ ও ১১ মিটার দীর্ঘ দু’টি সেতু সম্পূর্ণ তৈরি করতে দু’বছর লাগবে। খরচ হবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সেতু ও তার দু’পাশের রাস্তা অস্থায়ী ভাবে খুলে দেওয়া হলে দুর্ভোগ কমবে, আশ্বাস রাজেশবাবুর। |