ভরা মাঘেই দক্ষিণবঙ্গ থেকে ফেরার পথ ধরেছিল শীত। ঘরে ঘরে ধীরে ধীরে বাক্সবন্দি হতে শুরু করেছিল লেপ-কম্বল-সোয়েটার-মাফলার। বিকেলের পর থেকে দখিনা বাতাস জানান দিচ্ছিল বসন্তের আগাম হাজিরা। কিন্তু আচমকা হাওয়া-বদলের জেরে বদলে গেল আবহাওয়ার বার্তাও। হাওয়া অফিস বুধবার জানায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে ফের দক্ষিণবঙ্গে উত্তুরে হাওয়া বইবে। নামতে থাকবে রাতের তাপমাত্রাও। অর্থাৎ বিদায়ের পথে এগিয়েও ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শীত। এটাই তার নতুন ভেল্কি!
এ বছর প্রথম থেকেই শীতের পথে পথে পাথর ছড়ানো। একের পর এক উচ্চচাপ বলয় আর ঘূর্ণাবর্তের দাপটে আটকে যাচ্ছিল উত্তুরে হাওয়ার পথ। ফলে শীতের দাপট সে-ভাবে মালুমই হয়নি। মাথা তোলার চেষ্টা করছিল শীত। তার সেই চেষ্টার দৌলতেই মিলছিল ঠান্ডার আমেজ।
মাঘের মাঝামাঝি দক্ষিণবঙ্গের বায়ুমণ্ডলে দখিনা বাতাস ঢুকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিল উত্তুরে হাওয়াকে। আবহবিদেরা বলছেন, আবহাওয়ার খেয়ালিপনায় উত্তুরে হাওয়াই দূরে সরিয়ে দেবে দখিনা বাতাসকে। কিন্তু ফিরতি ইনিংসে উত্তুরে হাওয়ার ব্যাটে কতটা দাপট দেখা যাবে, আবহবিদরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
ফেরার পথ ধরেও ঘুরে দাঁড়ানো, আবহাওয়ার এই খেয়ালিপনা অবশ্য নতুন নয়। গত বছর বর্ষার ক্ষেত্রেও এই ভেল্কি দেখা গিয়েছিল। হাওয়া অফিস বর্ষার বিদায় ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও দক্ষিণবঙ্গের পিছু ছাড়েনি বৃষ্টি। অক্টোবরের শেষে দক্ষিণবঙ্গে বানভাসি বৃষ্টি নামিয়েছিল একটি নিম্নচাপ। তার পরেও বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় বর্ষাকে দীর্ঘায়িত করেছিল। ফিরতি ইনিংসে শীতও দীর্ঘায়িত হবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেই বঙ্গোপসাগরের চরিত্র বদলেছে। তার জেরেই বর্ষা দীর্ঘায়িত হয়েছিল। কিন্তু বিদায় নেওয়ার পরেও উত্তুরে হাওয়ার এ ভাবে ফিরে আসার কারণটা কী?
আবহবিদেরা জানান, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ঘনঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তৈরি হচ্ছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান পেরিয়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে কাশ্মীরে। তার ফলে এখনও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত জুড়ে চলছে শীতের দাপট। হরিয়ানা, পঞ্জাবের কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহও চলছে। অর্থাৎ ওই সব জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বা তারও বেশি নীচে নেমে গিয়েছে। কিন্তু দিন সাতেক আগে উত্তর ভারতে তৈরি হওয়া একটি উচ্চচাপ বলয় প্রাচীর তুলে দাঁড়ানোয় সেই ঠান্ডা হাওয়া দক্ষিণবঙ্গে আসতে পারছিল না। এ দিকে দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঢুকে পড়েছিল দখিনা বাতাস। বাড়ছিল জলীয় বাষ্পও।
এ দিন আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বায়ুমণ্ডলের আচমকা পরিবর্তনে উচ্চচাপ বলয়টি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার ফলেই উত্তুরে হাওয়ার রাস্তা ফের খুলে গিয়েছে। এ বার উত্তর ভারতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়া সরাসরি বয়ে আসবে দক্ষিণবঙ্গে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “উত্তর ভারত থেকে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকবে। তার ফলে দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও কমবে। দুর্বল হয়ে পড়বে দখিনা বাতাস।” ফিরবে শীত।
শীত ফিরে এলেও দক্ষিণবঙ্গে এখনই কনকনে ঠান্ডার কথা নিশ্চিত ভাবে বলছেন না আবহবিজ্ঞানীরা। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা কমতে থাকবে বলে জানান তাঁরা। এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি। আজ, বৃহস্পতিবার তা ১৬-১৭ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকতে পারে। বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো রাজ্যের পশ্চিম অঞ্চলের জেলায় রাতের তাপমাত্রা কলকাতার থেকে কিছুটা কম থাকবে বলেই হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। |