চাপান-উতোরের পর্ব সেরে করে কাটোয়ার এনটিপিসি’র প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমির বন্দোবস্ত করতে সময় গড়িয়েছে প্রায় আড়াই বছর। তবে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে কাটোয়ার জমি ও কয়লার সংস্থানের কথা ঘোষিত হওয়ার পরে প্রশাসন আর সময় নষ্ট করতে নারাজ। সরকারি সূত্রের খবর, মঙ্গলবারই দিল্লিতে এনটিপিসি-সদরে গিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্তের কথা জানান এক প্রতিনিধি। রাজ্যের দাবি, জমি ও কয়লা হাতে পেলে ৪৮ মাসের মধ্যে (২০১৮-’১৯ সাল) কাটোয়ার প্রকল্পটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
রাজ্যের এই ইতিবাচক ও সক্রিয় উদ্যোগ দেখে প্রকল্পের নির্মাণকারীও খুশি। এনটিপিসি-র এক কর্তা জানান, এ জাতীয় প্রকল্প গড়তে বছর চারেক লাগে। কাটোয়া প্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত সময়সীমা বলার মতো পরিস্থিতি আসেনি। “কেননা ওখানে জমি-কয়লার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত পেতে হবে। আরও প্রায় ৫০ একর জমি কিনতে হবে।” যুক্তি এনটিপিসি’র এক কর্তার। ওই কাজেও তাঁরা সরকারের সাহায্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এ মাসেই এনটিপিসি পরিচালন পর্ষদের বৈঠক বসতে চলেছে। আশা করা হচ্ছে, সেখানেই রাজ্যের প্রস্তাব খতিয়ে দেখে পর্ষদ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে।
নবান্নের খবর: কাটোয়ায় প্রকল্প-এলাকায় এনটিপিসি-কে যে সরকারি জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা তৈরিই রয়েছে। তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, অর্থাৎ কয়লার সংস্থানও রাজ্য সরকার করবে। এক মুখপাত্র জানান, চার বছরের মধ্যে কাটোয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্য। ঠিক হয়েছে, কাটোয়া প্রকল্পে প্রয়োজনীয় কয়লার জোগান আসবে বীরভূমের ডেউচা-পাঁচামি খনি থেকে, যেখানে উত্তোলন শুরুর প্রস্তুতি চলছে।
কিন্তু যদি কোনও কারণে ডেউচার খনিতে কয়লা উৎপাদন শুরু হতে দেরি হয়? তা হলে তো লক্ষ্যমাত্রা ধাক্কা খাবে! সরকারি সূত্রের দাবি, তেমন সম্ভাবনা মাথায় রেখে বিকল্পের পথও ভেবে রাখা হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থির হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কাটোয়ায় উৎপাদন চালু রাখতে জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে অন্তত দু’বছর কয়লা জোগাতে হবে। যার জন্য কোল ইন্ডিয়ার পাশাপাশি নিগমের নিজস্ব খনি থেকে কয়লা নেওয়া হতে পারে। আবার ঝাড়খণ্ডে পাচোয়াড়া নামে নিগমের যে নতুন খনিতে উত্তোলন শুরু হয়েছে, সেখান থেকেও কাটোয়া-প্রকল্পের জন্য কিছুটা কয়লা মিলতে পারে।
বস্তুত কাটোয়া প্রকল্প থেকে বেশি বিদ্যুৎ পাওয়াই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বেচা-কেনার বিষয়ে ২০১০-এর ডিসেম্বরে এনটিপিসি-র সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের চুক্তি হয়েছিল। তাতে ঠিক হয়েছিল, কাটোয়ায় উৎপাদিত ৫০% বিদ্যুৎ নিগমকে দেওয়া হবে। রাজ্য চুক্তিটি সংশোধন করতে চায়। তারা এখন অন্তত ৮৫% বিদ্যুৎ কিনে নিতে চাইছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাবটি অনুমোদনও পেয়েছে। সরকারের যুক্তি, জমি-কয়লার ব্যবস্থা যখন রাজ্যই করে দিচ্ছে, তখন বেশি বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গেরই প্রাপ্য।
কাটোয়ার ১৩২০ মেগাওয়াটের সিংহভাগ বিদ্যুৎ রাজ্যের হাতে থাকলে ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লেও মোকাবিলা করতে সমস্যা হবে না বলে সরকারি মহল মনে করছে। |