জঙ্গিরা কলকাতা হাইকোর্টকেও নিশানা করেছে এবং যখন-তখন হানা দিতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেয়ে নড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশ। উচ্চ আদালতে সুরক্ষা-ব্যূহ নিশ্ছিদ্র করতে বায়োমেট্রিক কার্ড, লোহার বেড়া থেকে শুরু করে ‘চলমান পথ’ তৈরি এবং গাড়ি রাখার জায়গা সরানোর কথা ভাবা হয়েছে।
হাইকোর্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে মঙ্গলবারেই সেখানে এক দফা বৈঠক হয়। ঠিক হয়েছে, সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রথম পর্যায়ে কর্মীদের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার ‘বায়োমেট্রিক সিস্টেম কার্ড’ চালু করা হবে। এই কার্ড সঙ্গে নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়ালে নিজে থেকেই সেটি খুলে যাবে। কর্মীদের জন্য এই কার্ডের ব্যবস্থা করে ফল মিললে আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও চালু করার কথা ভাবা হবে।
দিল্লির নর্থ ব্লক থেকে সম্প্রতি রাজ্যকে জানানো হয়েছে, যে-কোনও সময়ে কলকাতা হাইকোর্টে বড় ধরনের জঙ্গি হানা ঘটতে পারে। পুলিশের এক কর্তা জানান, বছর তিনেক আগে দিল্লি হাইকোর্টে বিস্ফোরণের পরে এক বার এই ধরনের সকর্তবার্তা পাঠায় দিল্লি। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে সেই সময় নিরাপত্তার খামতিগুলি চিহ্নিত করা হয়। এ বারেও দিল্লির বার্তা পেয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানেই নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। তার মধ্যে আছে:
• অবিলম্বে কর্মীদের জন্য বায়োমেট্রিক কার্ড চালু করা।
• হাইকোর্টের তিনটি ভবনে যাতায়াতের রাস্তাকে যুক্ত করার জন্য একটি ‘চলমান পথ’ তৈরি। এর শিলান্যাস হয়ে গিয়েছে। এখন কাজটা দ্রুত শেষ করার তৎপরতা চলছে।
• হাইকোর্টের পূর্ব দিকে এখনই লোহার বেড়া লাগানো। পরে বেড়া দেওয়া হবে সব দিকেই।
• হাইকোর্টে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেখানকার গাড়ি রাখার জায়গাটিই সব চেয়ে বড় চিন্তার বিষয় বলে মনে করে পুলিশ। এই বিষয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, ইদানীং জঙ্গি হানায় প্রায়ই গাড়ি-বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাই আপাতত ঠিক হয়েছে, হাইকোর্টের সামনে সূর্য সেনের মূর্তি ও ফোয়ারা ঘিরে যে-আইল্যান্ড রয়েছে, তার বৃত্ত কিছুটা কমিয়ে ফেলা হবে। এতে হাইকোর্ট ঘিরে গাড়ির বহর কমবে এবং তাতে সুবিধা হবে নজরদারির। কমবে যানজটও।
এটা সাময়িক বন্দোবস্ত। পুলিশ কিন্তু হাইকোর্টের গাড়ি পার্কিং নিয়ে স্থায়ী সমাধান চায়। তাদের বক্তব্য, যেখানে ৫০০ গাড়ি রাখাও সম্ভব নয়, সেখানে দৈনিক ১২০০ থেকে ১৫০০ গাড়ি আদালত-চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশের প্রস্তাব, কিরণশঙ্কর রায় রোডে নব মহাকরণের উল্টো দিকে জেসপ ভবনে আগে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের অফিস ছিল। কয়েক মাস আগে সেই অফিস উঠে গিয়েছে সল্টলেকে। পঞ্চায়েত দফতরের সেই ফাঁকা বাড়িতে বহুতল পার্কোম্যাট তৈরি করে হাইকোর্টের গাড়ি রাখা যেতে পারে। নিরাপত্তা নিয়ে আদালত এবং পুলিশ-কর্তৃপক্ষের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি আরও একটি বৈঠক হবে। |