সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই-কে ডাকার দাবিতে সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরব। মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যত আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। গ্রেফতারের প্রায় এক বছর পরেও তিনি মনে করছেন, রাজ্য সরকার যে-তদন্ত করছে, তা ঠিক ভাবেই চলছে। সারদা কাণ্ড নিয়ে গঠিত শ্যামলকুমার সেন কমিশন থেকে বেরিয়ে সুদীপ্ত বুধবার ফের তাঁর এই মত জানান।
এ দিন কমিশনের বাইরে সুদীপ্তের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি সিবিআই তদন্ত চান?
সারদা-প্রধানের জবাব, “আমি সাধারণ মানুষ। আমাকে ওই সব প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না। যে-তদন্ত চলছে, সেটা ঠিকই হচ্ছে।” |
সারদা কমিশন থেকে বেরিয়ে আসছেন সুদীপ্ত সেন। ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে ওই তছরুপ নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে সুদীপ্তের সই করা একটি চিঠি কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরে জমা পড়ে। পরে অবশ্য সুদীপ্ত দাবি করেন, ওই চিঠি তিনি লেখেননি।
এ দিন কমিশনে সারদার ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড ওয়াইড (বিডব্লিউডব্লিউ)-এর অধীনে থাকা চারটি চ্যানেলের বৈধ লাইসেন্স আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সারদার আইনজীবী সমীর দাস বলেন, “সুদীপ্ত কমিশনের সামনে বলেছেন, তিনি ওই সব সংবাদমাধ্যমে ৮৬ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। অথচ ওই সব চ্যানেল এখনও কী ভাবে চলছে, কারা চালাচ্ছে, তা তিনি জানেন না। এমনকী এ ব্যাপারে তাঁর কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি।” যদিও তারা চ্যানেলের কর্মচারী ফোরামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুদীপ্ত যা বলেছেন, তা ঠিক নয়।
বেলা ১২টায় শুরু হয় কমিশনের জেরা পর্ব। কমিশনের চেয়ারম্যান এবং অন্য দুই সদস্য অম্লান বসু ও যোগেশ চট্টোপাধ্যায় হাজির ছিলেন। শ্যামলবাবু জানান, বৈধ লাইসেন্সের প্রশ্নে ওই চ্যানেলের আপলিঙ্কিং ও ডাউন লিঙ্কিংয়ের কাজে যুক্ত সংস্থার এক পদস্থ কর্তা অনুপ ভাটিয়াকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ভাটিয়া কমিশনে জানান, ২০১৩ সালের ২ জুন পর্যন্ত চ্যানেলের অনুমোদন ছিল। তার পরেও চ্যানেল চলছে কী করে, কমিশন তা জানতে চায়। ভাটিয়া জানান, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক বন্ধ করার নির্দেশ না-দিলে তাঁরা লিঙ্কিংয়ের কাজ করে যাবেন।
তারা চ্যানেলের কর্মীদের পক্ষ থেকে এ দিন কমিশনে জানানো হয়, ওই চ্যানেল বিক্রি করা হলে বর্তমান কর্মীদের ছাঁটাই করা হবে না বলে শর্ত দিতে হবে। কমিশন সূত্রের খবর, সুদীপ্ত কর্মীদের দাবি মেনে নিয়েছেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু জানান, আগামী কয়েক দিনে সারদার পরিচালনাধীন বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের আট জনকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। কাল, শুক্রবার অসমের প্রাক্তন সাংসদ মাতঙ্গ সিংহকে কমিশনে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি হাজির থাকবেন মনোরঞ্জনা সিংহ। সুদীপ্ত ইতিমধ্যেই কমিশনে জানিয়েছেন, ওই দু’জনকে তিনি যথাক্রমে ২৮ এবং ২৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। |