মাত্র বারো ঘণ্টার তফাতে দুর্ঘটনায় পড়ল দেশের দুই দ্রুতগামী ট্রেন। মঙ্গলবার আগুন লাগে হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসে। বুধবার ভোরে ছুটন্ত হাওড়া-নয়াদিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেস থেকে খুলে পড়ল যন্ত্রাংশ। হতাহতের খবর নেই। তবে দু’টি ক্ষেত্রেই প্রাথমিক রিপোর্টে রেলের গাফিলতির কথা উঠে এসেছে।
বুধবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে বরাকর স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরে ঘটে বিপত্তি। হাওড়ার দিকে দ্রুতগতিতে ছুটছিল দুরন্ত। হঠাৎই বিকট শব্দ তুলে ট্রেনটি ঝাঁকুনি দিতে শুরু করে। ঘুমে আচ্ছন্ন যাত্রীরা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন। কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউই। বিপদ বুঝে কামরার এক অ্যাটেনড্যান্ট ট্রেনের চেন টানেন। ওই অবস্থাতেই বেশ কিছুটা এগিয়ে থেমে যায় ট্রেন। |
চেন টেনে ট্রেন থামিয়েছিলেন নরেন সাহা। ছবি: শৈলেন সরকার। |
রেলের কর্মী ও অফিসারেরা নেমে দেখেন, ধুলোয় চারদিক ঢেকে গিয়েছে। একাধিক কামরার ব্রেক গিয়ার লিভার, এয়ার প্রেসার চেম্বার ও ভ্যাকুয়াম সিলিন্ডার খুলে লাইনের উপরে পড়ে গিয়েছে। মেরামতি সেরে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে ট্রেনটি ফের রওনা দেয়। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ঘটনাস্থলে বিক্ষোভও দেখান। কেন এমন হল, সেটা জানতে রেল বোর্ড তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের চোখে-মুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ। যাত্রীরা জানান, ট্রেন বরাকর নদের সেতুতে ওঠার পরেই ঝাঁকুনি শুরু হয়। রানাঘাটের বাসিন্দা অসীম বিশ্বাস বলেন, “রাস্তার একাধিক জায়গায় ট্রেনটা ঝাঁকুনি দিচ্ছিল। তখনও বুঝিনি এই বিপত্তি হবে।” খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রেলের আধিকারিকেরা। ট্রেনের দশা দেখে তাঁরা কার্যত শিউরে উঠেছেন। তাঁদের অনুমান, দ্রুতগতিতে ছোটার সময়ে প্রথমে একটি কামরার তলা থেকে ব্রেক লিভার খুলে পড়ে। সেটি পরের কামরার নীচে আটকে যাওয়ায় সেখান থেকেও একাধিক যন্ত্রাংশ খুলে যায়। তার পরে তৃতীয় ও চতুর্থ কামরার তলা থেকেও একই কারণে ভেঙে পড়ে অনেক যন্ত্রপাতি। রেলকর্তাদের মতে, বড়-বড় লোহার পাইপ খুলে চাকায় আটকে গেলে ট্রেন বেলাইন হতে পারত। সে ক্ষেত্রে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা ছিল।
সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ ট্রেনটি ফের হাওড়ার দিকে রওনা করানো হয় গতি কমিয়ে। অভিযোগ, অত ক্ষণ ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলেও সামান্য পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়নি। দুর্ঘটনার জন্য রেলের গাফিলতিকেই দায়ী করেন যাত্রীরা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই বিপত্তি বলে মনে করছেন রেলকর্তাদের একাংশ। আসানসোলের এডিআরএম অনিল কুমার শুক্লও মেনে নেন, “মনে হচ্ছে, কিছু ত্রুটি ছিল।” |