হলদিয়া তেল শোধনাগারে সম্প্রসারণের অঙ্গ হিসেবে এ রাজ্যে ‘ডিলেড কোকার প্লান্ট’ নির্মাণে আরও তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি)। পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের পরে যা সরকারি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বলে দাবি করেছেন শিল্প দফতরের কর্তারা।
দফতর সূত্রের খবর, পরিচালন পর্ষদের পরবর্তী বৈঠকে শোধনাগারে সম্প্রসারণের অঙ্গ হিসাবে ‘ডিলেড কোকার’ কারখানায় লগ্নির অনুমতি দিতে চলেছে আইওসি। সে ক্ষেত্রে তারা শোধনাগারের পাশেই ৮৫ একর জমিতে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আরও একটি কারখানা গড়বে। যেখানে শোধনাগারের বর্জ্য ফার্নেস অয়েল, বিটুমিন থেকে তৈরি হবে কোক, ডিজেল, কেরোসিন তেল। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লাভের মুখ দেখবে হলদিয়া তেল শোধনাগার দাবি আইওসি কর্তাদের।
আইওসি’র হলদিয়া শোধনাগারের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (ইডি) এ সি মিশ্র বলেন, “প্রস্তুতি শেষ। আশা করছি, অতি দ্রুত নতুন কারখানায় বিনিয়োগের অনুমতি দেবে পরিচালন পর্ষদ।” হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর কথায়: “পরিবেশ মন্ত্রক হলদিয়া নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তার জেরে কারখানার কাজ শুরু করা যায়নি। আইওসি কর্তৃপক্ষ যে ভাবে দ্রুত প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে নামছেন, তা রাজ্যের জন্য সুখবর। হলদিয়ায় আরও তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলে রাজ্যেরই উপকার হবে।” রাজ্যের লগ্নি আকর্ষণের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে, আশাবাদী শুভেন্দুবাবু।
নতুন কারখানাটির গুরুত্ব কতটা?
আইওসি-র এক কর্তা জানান, শোধনাগারে এখন বছরে ৭৫ লক্ষ টন পরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয়। শোধনাগারের বর্জ্য হিসেবে উৎপন্ন হয় ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিন। কিন্তু বাজারে এখন এই দুই পণ্যের চাহিদা কম। দামও কম। ফলে বাজার না থাকায় হলদিয়া শোধনাগারে উৎপাদিত ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিনের কিছুটা নষ্ট করে দিতে হয়। ওই কর্তার কথায়, “বছর কয়েক আগেই আরও একটি থার্মাল ক্র্যাকিং ইউনিট (চলতি কথায় কোকার প্ল্যান্ট) বসিয়ে বর্জ্য ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিন থেকে কোক-ডিজেল-কেরোসিন তেল উৎপাদনের কথা ভাবা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তাবিত কোকার কারখানায় উৎপাদনের ২০% হবে কোক আর ৮০% হবে কেরোসিন-ডিজেল।” এতে এক দিকে যেমন শোধনাগারের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে, অন্য দিকে, কম চাহিদার ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিনের জায়গায় বেশি চাহিদার কোক-কেরোসিন-ডিজেল উৎপাদন করে পূর্বাঞ্চলের বাজার আরও বেশি ধরা যাবে বলে কর্তাদের দাবি।
নতুন কারখানায় কোন পণ্য কী পরিমাণে উৎপাদন হবে? হলদিয়া শোধনাগারের ইডি জানান, পরিচালন পর্ষদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আইওসি সূত্রের খবর: ১৯৭৫-এ যখন প্রকল্পের সূচনা হয়, তখন শোধনাগারে বছরে মাত্র ২৫ লক্ষ টন তেল শোধনের ক্ষমতা ছিল। ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে বছরে ৭৫ লক্ষ টন হয়েছে। তবু লাভের মুখ দেখেনি শোধনাগার। কর্তাদের আশা, কোকার কারখানা গড়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ালেই প্রকল্পটি আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।
আইওসি সূত্রের খবর, বর্তমানে হলদিয়ায় শোধনাগারটির পাশেই কোকার কারখানার জমি বাছা হয়েছে। বন্ধ হওয়া হলদিয়া সার কারখানার বাড়তি জমি থেকে ৮৫ একর আইওসি-কে দিয়েছেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই জমিতে কারখানা গড়তে চেয়ে ২০০৮-এ পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র চেয়েছিল তারা। ২০০৯-এর মার্চে পরিবেশ মন্ত্রক এই প্রকল্পের ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু দুনিয়া জুড়ে আর্থিক মন্দা-পরিস্থিতি বিচার করে আইওসি তখন নতুন বিনিয়োগে তৎপর হয়নি।
আর এর মধ্যেই হলদিয়ায় নতুন কারখানা গড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিবেশ মন্ত্রক। আইওসি-র এক কর্তার কথায়, “এক সময় মনে হয়েছিল, আর হয়তো কোকার কারখানা দিনের আলো দেখবে না। কিন্তু পরিবেশ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর নতুন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” পরিচালন পর্ষদের যে স্বাধীন ডিরেক্টররা হলদিয়ায় তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, এখন তাঁরাও আশার আলো দেখছেন বলে জানান আইওসি-র এক কর্তা। সেই কারণেই প্রকল্পটির খুঁটিনাটি দেখতে আইওসি-র চেয়ারম্যান সামনের মাসে হলদিয়ায় আসতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরিচালন পর্ষদ অনুমোদন দিলে ৩৬ মাসের মধ্যে প্রস্তাবিত কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা যাবে। |