চায়ের পেয়ালায় তুফান তোলার সুযোগ। সেই সঙ্গে টক -ঝাল -মিষ্টি নরেন্দ্র মোদী। ভিডিও কনফারেন্স -এর দৌলতে ডিজিটাল পর্দায় নমো, আর এ পারে তাঁকে প্রশ্ন করতে উদগ্রীব জনতা জনার্দন। আগ্রহের রসদ কম ছিল না। কিন্তু বুধবার গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও জেলায় জেলায় মোদীর সঙ্গে ‘চায়ে পে চর্চা’ উতরোল কেমন? বিজেপি নেতৃত্বের দাবিতে, ‘অসাধারণ।” তবে আসানসোল, কাঁকিনাড়া, খাতড়ায় যাঁরা চায়ের সঙ্গে মোদীকে দেখলেন, তাঁরা বলছেন, “টিভির থেকে ফারাক আর কী হল? মোদীর সঙ্গে সরাসরি কথাই তো বলা গেল না ! ” |
বর্ধমানের ছোটনীলপুরে চলছে ‘চায়ে পে চর্চা’। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ। |
জনজীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব বাড়ছে। প্রচারের মাধ্যমে অন্তর্জাল -দুনিয়ার (ইন্টারনেট ) দাপট এখন আকাশছোঁয়া। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জনসংযোগের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টায় এখনও কোনও দলই পিছিয়ে নেই। সেই যুক্তিতেই কি প্রচারের এই কৌশল নিতে হল? বিজেপি -র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের জবাব, “এটা প্রচারের কৌশল বলে আমরা মনে করি না। সাধারণ মানুষ যাঁকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছেন, তাঁকে যাতে মানুষ ভোটের আগেই যাচাই করে নিতে পারেন, সে দিকে তাকিয়েই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।” |
খাতড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
ব্যবস্থাটা কী? মোদী আড্ডা দেবেন সুদূর গুজরাতের চায়ের দোকানে। নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সেই আড্ডায় যোগ দিতে পারবে। প্রশ্ন করতে পারবে বিজেপি -র এই অন্যতম শীর্ষ নেতাকে। দেশের যে ৩০০টি শহরে এই কনফারেন্স হল, সেই তালিকায় নাম ছিল আসানসোল, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, খড়্গপুরের মতো অনেক জায়গারই। তাই অনুষ্ঠান ঘিরে প্রত্যাশার পারাও উঠছিল।
সম্প্রচার শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৫টায়। বিকেল ৪টে থেকেই খাতড়ার পাম্পমোড়ে মল্লিক টি স্টলের সামনে ভিড় জমছিল। শুরু হয়েছিল উসখুসানি। কখন দেখা যাবে মোদীকে ! সন্ধ্যা ৬টার পরে আমদাবাদের টি স্টলে মোদীর কনভয় ঢুকতেই হাততালির ঝড়। বিজেপি -র নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, “ওরে চা দে।” খাতড়ার বড় মেটেলা গ্রামের উত্তম প্রামাণিক, দাঁড়শোল গ্রামের অজয় সর্দার বললেন, “একটা চায়ের দোকান বসে মোদীর মতো নেতা আমাদের মতো লোকের প্রশ্নের উত্তর দেবেন জানতে পেরেই ছুটে এসেছি।” কিন্তু উৎসাহ আর বাস্তবে ফারাক থেকে গিয়েছে। বরাগড় গ্রামের অনাথ মণ্ডল, কাঁকরাদাঁড়া গ্রামের বাদলচন্দ্র মল্লিকের আক্ষেপ, “ভেবেছিলাম, মোদীর কাছে একটা করে প্রশ্ন রাখব। যোগাযোগই করতে পারলাম না ! ” |
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘চায়ে পে চর্চা’। আসানসোলে জমল ভিড়। —নিজস্ব চিত্র। |
আসানসোলে আবার অন্য দৃশ্য। শহরের হাটন রোড, দুর্গামন্দির ও স্টেশন রোডের ১৩ নম্বর এলাকায় ভিডিও কনফারেন্স -এর আয়োজন হয়েছিল। মোদী পর্দায় আসতেই নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে প্রশ্ন করলেন কেউ কেউ। শহরের প্রশান্ত চক্রবর্তী বললেন, ‘‘আপনি প্রধানমন্ত্রী হলে কালো টাকা উদ্ধার হবে কি?’’ দীপক প্রসাদের জিজ্ঞাস্য, ‘‘দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার চরমে। আপনি প্রধানমন্ত্রী হলে কি এই দুর্ভোগ ঘুচবে?’’ প্রশ্নগুলো গেল, কিন্তু উত্তর এল না।
নেতাকে প্রশ্ন করতে পারেনি দুর্গাপুরও। ইস্পাত নগরীর বি -জোনের চণ্ডীদাস বাজারে বাসস্ট্যান্ডের পাশে এবং এ -জোনের আশিস মার্কেটের চত্বরে স্ক্রিন টাঙিয়ে অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু মানুষজন এসেছেন। এক ঝলক অনুষ্ঠান দেখছেন। এক কাপ চা খেয়ে চলে গিয়েছেন। অনুষ্ঠানের দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা বিজেপি কর্মী সুনীল সিংহ জানালেন, এ দিন ক্যামেরা -র অভাবে যোগাযোগ প্রক্রিয়া গড়া যায়নি। তবে তাঁর আশ্বাস, “দিন কয়েক পরেই এমন অনুষ্ঠান আবার হবে। সে দিন সব ব্যবস্থা থাকবে।” |
দুর্গাপুরে ফাঁকাই থেকে গেল বেশ কিছু চেয়ার। বুধবারের নিজস্ব চিত্র। |
উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে রাস্তার ধারে দু’টি এলসিডি টিভি বসিয়ে, চায়ের স্টল বানিয়ে এক টাকার বিনিময়ে চা কিনে মোদীর কথা শুনতে পথচারীদের অনুরোধ করেন বিজেপি -র নেতারা।
খড়্গপুরেও চার জায়গায় মোদী -চর্চার আয়োজন ছিল এ দিন। উদ্যোক্তা যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, খড়্গপুর আইআইটি -তে তাদের কিছু সদস্য রয়েছেন। ছোট ট্যাংরা এলাকায় আইআইটি পড়ুয়াদের ভিড়টা ছিল বেশি। সেখানে হাজির আইআইটি -র ছাত্র চন্দন কুমার বলেন, “কর্মসংস্থান, ভারতীয় সেনার ক্ষমতা বৃদ্ধি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ — এই তিন দাবি আমাদের। নরেন্দ্র মোদী সেই দাবি পূরণ করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে।” তবে এখানে ভিড় পঞ্চাশও পেরোয়নি।
নেতা সামনে নেই। রয়েছেন টিভির পর্দায়। কোথাও তাঁকে প্রশ্ন করে জবাব মেলেনি। কোথাও প্রশ্ন করা যায়নি। অনেকে তো অনুষ্ঠানের সম্প্রচার দেখেই কাটিয়েছেন। তা হলে টিভি সম্প্রচারের সঙ্গে এ দিনের আয়োজনের ফারাক আর কী হল? |
নরেন্দ্র মোদীর প্রচারে সিউড়ির ইন্দিরাচকে চা খাওয়ানোর
আয়োজন করেন বিজেপি সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র। |
রাজ্য বিজেপি -র সহ -সভাপতি সুভাষ সরকার বললেন, “অনুষ্ঠান দেখতে যা লোক এসেছেন দেখলাম, তাতে আমরা খুশি।” খুশি জনতাও। খাতড়ায় এক বৃদ্ধ বলেই ফেললেন, “অনুষ্ঠানে এসে বিনা পয়সায় দু -দু’কাপ চা খেলাম।” আর চায়ের দোকানদার মালিক সুব্রত মল্লিক বলছেন, “অন্য দিন বিকেলে ৫০ কাপ চা বিক্রি হয়। এ দিন ৩০০ কাপেরও বেশি বিক্রি হয়েছে। এটা কম হল?” |