বঙ্গে না জমলেও চায়ে মজেছে বিজেপি

হাতে দুধ চা - গ্লাস। তাতে চুমুক দিয়ে বললেন, “আমার আর একটা চা চাই। আপনাদেরও নিশ্চয়ই !
চায়ের দোকানে বসে নিছক আড্ডা। পাড়ার মোড়ের চেনা ছবি। কিন্তু বারে মজলিশে খোদ নরেন্দ্র মোদী। প্রযুক্তির হাত ধরে পৌঁছে গেলেন দেশের এক হাজার শহরে। নিজে আমদাবাদের ফুটপাতে এক চায়ের দোকানে বসে সরাসরি কথোপকথন হাজারো মানুষের সঙ্গে। ভোট পর্যন্ত প্রতি পাঁচ দিনে এমনই আড্ডা দেবেন তিনি। লক্ষ্য, দু’কোটি মানুষের কাছে পৌঁছনো। মোদী যার নাম দিয়েছেন ‘ফুটপাথ সংসদ’।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিধানসভা বসাতে চান স্টেডিয়ামে। আর মোদী তাঁকে টেক্কা দিয়েই ফুটপাথে সংসদ বসালেন ! ছোটবেলায় তাঁর চা বেচার কাহিনি ভোট মরসুমে প্রায় প্রতি সভাতেই শোনান মোদী। তাঁর অনগ্রসর শ্রেণির তাসটিও ব্যবহার করেন সুকৌশলে। কিন্তু তা শুনে কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার যেই না বললেন, “কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল তো দূর অস্ত, বড় জোর মোদীর জন্য দিল্লিতে চায়ের দোকানের একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারি ! ” তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে গোটা দেশে ‘চায়ের আড্ডার’ এক বড়সড় কর্মসূচি হাতে নিয়ে ফেললেন মোদী। আনুষ্ঠানিক ভাবে যার সূচনা হল বুধবার।
মুম্বইয়ে রাস্তার ধারে বিজেপি - চায়ের আড্ডা।
গরম চা আর টিভি - পর্দায় নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
অনেকে মনে করেন, ছোট বেলায় যে মোদী চা বিক্রি করতেন, তা আর অজানা নয়। কিন্তু তা - বলে ফুটপাথে বসে চা -চক্র নিয়ে এত মাতামাতি করারই বা কী আছে? কেজরিওয়ালের অতি -জনমুখী পদক্ষেপের মতোই মোদীর প্রচার কৌশলও কি অনেকের বিরক্তি উৎপাদন করতে পারে? মোদী -ঘনিষ্ঠ নেতাদের দাবি, ‘না’। কারণ, মোদী চায়ের আড্ডায় মূলত সেই কথাগুলিই বলেছেন, যা তিনি মূলত বিভিন্ন জনসভাতেও বলেন। কিন্তু এই অভিনব বিপণন কায়দায় তিনি পৌঁছে যেতে পারছেন একেবারে তৃণমূল স্তরের মানুষের কাছে। জনসভায় মানুষ সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন না। এখানে মনের কথা বলতে পারছেন। যতই তা নিয়ন্ত্রিত থাকুক না কেন !
তার উপরে মোদীর এত দিনের যে কর্পোরেট ভাবমূর্তি ছিল, তার বাইরে বেরিয়ে বিজেপি - প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী এখন চা -চক্রকে সামনে রেখে গরিব -গুর্বো মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন প্রতীকী হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব কম নয় বলেই বিজেপি নেতৃত্বের মত। আর চা এমনই পানীয়, যা গরিব থেকে মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত সকলকেই এক সূত্রে গাঁথে। মোদী তাই নিজেই বলেছেন, “বাড়িতে কেউ এলেই জিজ্ঞেস করা হয়, চা খাবেন?”
প্রচারের অভিনব কৌশল হলেও কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি ‘চায় পে চর্চা নমো কে সাথ।’ বহু মানুষ মোদীর কাছে প্রশ্ন করার জন্য মুখিয়ে থাকলেও ধৈর্য হারিয়ে বাড়িমুখো হয়েছেন। যেমন, বিকেল চারটে থেকে উৎসাহীরা জড়ো হতে শুরু করেছিলেন বিজেপি - রাজ্য দফতরের কাছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ মুরলী ধর লেনের সংযোগস্থলে অশোক টি স্টলের সামনে। বসানো হয় দু’টো টিভি। কিন্তু মোদীর ‘শো’ আরম্ভ হয় ৬টার পরে। অনুষ্ঠানের গতিপ্রকৃতি দেখে তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না, কখন আমদাবাদে মোদীর সঙ্গে যোগাযোগ হবে। ধোঁয়াশায় ছিলেন সদর দফতরের পাশের ওই দোকানে বসে থাকা বিজেপি - প্রবীণ নেতা তপন শিকদারও। তাই সাড়ে ৬টার পর সামনের ভিড় হাল্কা হতে শুরু করে।
কলকাতায় যে দোকানকে ঘিরে বিজেপি - এই অভিনব প্রচারের ব্যবস্থা, তার মালিক কিন্তু বেজায় খুশি। তিনি অশোক সিংহ। মোদীকে কী প্রশ্ন করতে চান? অশোকবাবুর জবাব, “অত বড় লোককে আমার কোনও প্রশ্ন করা ঠিক নয় ! শুধু বলব, আমরা তো চা বিক্রি করে ছেলেকে কলেজে পড়াচ্ছি। ওর একটা চাকরির ব্যবস্থা হলে ভাল হয়।” প্রায় একশো বছর আগে অশোকবাবুর ঠাকুরদা মহাবীর সিংহ এই চায়ের দোকান চালু করেছিলেন। কিন্তু অশোকবাবু বা তাঁর স্ত্রী পুষ্পদেবী চান না, তাঁদের ছেলে করণ আর চা বিক্রি করুক। সিটি কলেজের ছাত্র করণ নিজেও চান স্নাতক হয়ে বাবা -মাকে সুখে রাখতে। তবে তাঁর চায়ের দোকানের ছবি, তাঁদের কথা দেশের মানুষ দেখতে শুনতে পাবে বলে অশোকবাবু বিজেপি - রাজ্য নেতৃত্বের কাছে কৃতজ্ঞ। আর কৃতজ্ঞতার মূল্য হিসেবে তিনি বিজেপি - নেতা -কর্মীদের তিন টাকার বদলে দু’টাকায় চা খাইয়েছেন !
প্রচারের এই অভিনব কৌশল কেন নিতে হল? বিজেপি - রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, “এটা প্রচারের কৌশল বলে আমরা মনে করি না। সাধারণ মানুষ যাঁকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছেন, তাঁকে যাতে মানুষ ভোটের আগেই যাচাই করে নিতে পারেন, সে দিকে তাকিয়েই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সারা দেশেই আপাতত এই চা -চক্র চলবে। বঙ্গে প্রথম দিন তেমন সফল না -হলেও মোদীর এই নতুন মডেলের পরীক্ষা চিন্তায় ফেলেছে বিরোধীদের। লালুপ্রসাদ যাদবের মতো নেতাকেও বলতে হচ্ছে, “আমিও ছোটবেলায় চা বেচতাম দাদার সঙ্গে। কিন্তু মোদী কী করে চা বেচতে পারেন, যিনি দাঙ্গায় রক্ত বেচেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.