আপনাদের ভাষা শিখব, প্রতিশ্রুতি মমতার
ওঁদের কাছে বুধবারের সকালটা ছিল ভীষণ ব্যস্ততার। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিয়েই মালবাজারে ছুটেছিলেন বাতাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ঝুমি নাগাসিয়া, বিমলা হেমব্রমরা। একই ভাবে ওদলাবাড়ির থেকে ভাটু ওঁরাও, শঙ্কর খেড়িয়ারাও মালবাজারে পৌঁছে গিয়েছিলেন সকাল ৯টার মধ্যেই। উদ্দেশ্য আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সভায় যোগ দেওয়া। কিন্তু সেই সভা যে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের আর দশটা সভার মতো হবে না, তা ওঁরা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি। মালবাজারে পৌঁছে রাস্তার চারদিকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখতে পান ওঁরা। আবার বারবার কানে আসছিল ‘সানগি দাই’-এর কথা। যে ‘সানগি দাই’-কে তাঁরা পুজো করেন। সেই সিনগি দাইয়ের নামও মালবাজারে আসার পর বেশ কয়েকবার তাঁরা শুনেছিলেন। তাই কী হতে চলেছে তা আঁচ করতে উদগ্রীব ছিলেন সকলেই।
পা ধুইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বরণ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
মালবাজারের ক্যালটেক্স মোড় লাগোয়া সেনাবাহিনীর ময়দানে যখন মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছন, তখন ঘড়িতে সময় দুটো দশ। ভিড়ের মধ্যে মিশে রয়েছেন ঝুমি, ভাটুদের মতো দূর -দূরান্ত থেকে আসা কুড়ি হাজারেরও বেশি আদিবাসী মানুষ। এর পরে সভা মঞ্চ থেকে ঘোষণা হল ‘সানগি দাই’ সম্মান দেওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। তিরধনুকের স্মারক যখন অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সর্বভারতীয় সভাপতি সোমজি ভাই দামোর মুখ্যমন্ত্রীকে তুলে দিচ্ছেন, তখন যেন ওঁদের ঘোর কাটছে না।
মূর্তি নদী পেরিয়ে মালবাজারের পথে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী যখন বললেন, “আমি আপনাদের ভাষা জানি না। ধীরে ধীরে শিখে নেব।” তখন হর্ষধ্বনি হল। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করলেন সাদ্রি ভাষায়। সাদ্রিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের নিজস্ব ভঙ্গী ‘জয় জোহার’ বলতেই হাততালিতে ভেসে যায় সভাস্থল। মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁদের ধন্যবাদ জানাবেন তা কল্পনাও করতে পারেননি ওঁরা। মুখ্যমন্ত্রী যখন দু’বার বললেন, “কী মোর ওপর ভরসা হাইক তো (মানে আমার উপরে ভরসা আছে তো ) ?” তখন ওঁরাও উত্তরে সমস্বরে চিৎকার করে ‘হাইক হাইক’ বলে উঠলেন।
মুখ্যমন্ত্রী টানা ৪৫ মিনিট পর যখন থামলেন তখন ঝুমি বললেন, “যে সানগি দাই বলছিলেন যে সিনগি দাইয়ের স্মৃতিতে আজও আমরা মাথাতে তিনটি দাগ আঁকি। ১২ বছরে একবার করে শিকার খেলতে যাই। মুখ্যমন্ত্রী সাদ্রী ভাষাকে মর্যাদা দিলে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতে ছাপার অক্ষরেও সাদ্রী -কুরুক ভাষায় পড়তে পারবেন।” ওয়াশাবাড়ির অনিল মুন্ডা বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে চা বাগানের ভেতর তাদের জমির অধিকার দেবেন তা শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না।” কুমলাই চা বাগানের ষাটোর্ধ্ব ধিমলা মারান্ডি বললেন, “এ ধরনের কথা তো আগে কোনও নেতার মুখে তো শুনিনি।”
মালবাজারের অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারক প্রদান
আদিবাসী বিকাশ পরিষদের। ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
বুধবার মালবাজারের এই অনুষ্ঠানে দূর -দূরান্ত থেকে গাড়িতে ঠাসাঠাসি হয়ে সকলে এসেছিলেন। সকলেই যে আদিবাসী, তা নয়। যেমন, বাগরাকোট থেকে সারা ভারত নেপালি তপশিলী জাতি সংগঠনের ডুয়ার্স শাখার সদস্যরা এসেছিলেন। সংগঠনের সম্পাদক সার্কু দর্জি তাঁদের সমাজের আর্থ সামাজিক উন্নতির দাবিতে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। গজলডোবার মেচ সম্প্রদায়ের সুবিন শৈব যেমন বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী গজলডোবায় পর্যটন কেন্দ্র শুরু করলে আমাদের ছেলেমেদের কাজের অভাব হবে না। সেই আশাতেই এখন দিন গুনছি।”
মুখ্যমন্ত্রী বুধবার মালবাজারের সেনা ময়দান থেকে ৩৪টি সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং ১৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বেশ কিছু দফতরে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রদানও করেন তিনি।

শিলান্যাস

• মালবাজার, ফালাকাটা , জলপাইগুড়িতে মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল
• জলপাইগুড়িতে পাঁচটি
• মডেল স্কুল
• ময়নাগুড়ির পদমতী ১ ও পদমতী ২ এলাকায় তিস্তার বাঁধ নির্মান
• খুকসিয়া, মধুবনী, মৌলানি, রাঙামাটি কালচিনি , গারুচিরা, বীরপাড়া মাদারিহাটে পর্যটন উদ্যান • মেটেলির টিয়াবনে যুব আবাস, মাটি ও জলপরীক্ষা কেন্দ্র
• মোহিতনগরে প্রাণী স্বাস্থ্যপ্রকল্প কেন্দ্র
• জলপাইগুড়িতে সংখ্যালঘু ভবন তৈরি
• মুজনাইতে জল ধরো জল ভরো প্রকল্প
উদ্বোধন

• জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ ভবন
• স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মার্কেট কমপ্লেক্স
• বাবু জগজীবন রাম ছাত্রী আবাস
• ময়নাগুড়ি গ্রামীন হাট
• ১০টি কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাষ যন্ত্র প্রতিস্থাপন
সুবিধা প্রদান

• আমার ফসল আমার গাড়ি প্রকল্পে ভ্যান রিক্সা
• কৃষি দফতরের পাম্প সেট ও কৃষি সরঞ্জাম প্রদান
• প্রশাসনের তরফে তপসিলি উপজাতি ছাত্রীদের সাইকেল বিলি
• কন্যাশ্রী -র চেক বিলি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.