ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল
বিশ্রামাগার-শৌচাগার নেই, দুর্ভোগ রোগীর পরিজনদের
গে ছিল মহকুমা হাসপাতাল। সম্প্রতি ‘সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে’ উন্নীত হয়েছে। কিন্তু ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে পরিকাঠামো না থাকায় ন্যূনতম পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন রোগীর পরিজনেরা।
১৯৭৫ সালে চালু হওয়া ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ২৭০টি শয্যা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ জন রোগীর বাড়ির লোকজন হাসপাতাল চত্ত্বরে থাকেন। হাসপাতালে বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি থাকলে এই সংখ্যা আরও বাড়ে। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭০০-৮০০ রোগী আসেন। ফলে সবসময়ই হাসপাতাল চত্ত্বরে রোগীর আত্মীয়দের ভিড় থাকে। হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীর বাড়ি দূরে হওয়ায় তাঁদের পরিজনেরা অনেকে হাসপাতাল চত্বরেই রাত কাটান। কিন্তু হাসপাতাল চত্ত্বরে কোনও বিশ্রামাগার না থাকায় রোদে-জলে সমস্যায় পড়েন তাঁরা। দাসপুরের কাটান-নিমতলার বসিন্দা হলধর কাণ্ডারের কথায়, “গত বছর বর্ষাকালে এক দিন রাত দেড়টা নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে আমার দিদিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন বৃষ্টি পড়ছিল। হাসপাতালে বিশ্রমাগার না থাকায় রোগীর আত্মীয়েরা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বৃষ্টির জল ছিটকে তাঁদের আধভেজা অবস্থা।”
বিশ্রামাগার নেই, তাই রোগীর পরিজনদের আশ্রয় খোলা আকাশের নীচেই।—নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালের বাইরে নেই কোনও শৌচাগারও। হাসপাতালের ভিতরে থাকা শৌচাগারগুলিরও ভয়ানক অবস্থা। কোনও শৌচাগারের দরজা নেই। আবার কোনও শৌচাগারে নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে ঢোকা দুষ্কর। তাছাড়াও রাতের অন্ধকার নামতেই হাসপাতাল চত্ত্বরে অচেনা লোকের আনাগোনা বাড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক নার্স ও চিকিৎসকেরা বলেন, “হাসপাতালের পরিবেশ দিনে দিনে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। হাসপাতালের ভিতরে রাতে অনেকে মদ্যপ অবস্থায় ঢুকে পড়ে। আমরা তাঁদের হাসপাতালের বাইরে বের করে দিই। রাতে রোগীর পরিবারের লোকেরা খুব কষ্টে থাকেন। বিশেষ করে মহিলাদের দুর্ভোগ বেশি হয়।” ঘাটালের বাসিন্দা পুলক মণ্ডল বলেন, “কিছুদিন আগে আমার মা ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি ছিলেন। আমি রাতে হাসপাতালের বাইরে থাকতাম। হাসপাতাল চত্ত্বরে জুয়া থেকে মদের আসর সবই বসে। বিশেষ করে আইশোলেসন ওয়ার্ড এবং হাসপাতালের পিছনে পুকুর পাড়ে ও নার্সদের আবাসনের কাছাকাছি ওই সমস্ত কাজগুলি বেশি করে হয়।” হাসপাতালের সুপার অনুরাধা দেব বলেন, “মাঝে-মধ্যে নানা অশালীন কাজের খবর পাই। তবে কেউ কোনও দিন এনিয়ে অভিযোগ করেননি। তবে আমি উদ্যোগী হয়ে হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীদের রাতে কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশও অনেকসময় হাসপাতালে এসে ঘুরে যায়।” হাসপাতাল চালুর পর তিন দশকের বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে। একাধিকবার রোগীর পরিবারের লোকেরা হাসপাতাল সুপারের কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য আবেদনও জানিয়েছেন। হাসপাতালের নিজস্ব জমি থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে রোগী কল্যাণ সমিতি, সমস্যা মেটাতে কেউই উদ্যোগী হয়নি।
হাসপাতালে কোনও ক্যান্টিনও না থাকায় রোগীর পরিজনদের খাওয়ার জন্য বাইরে যেতে হয়। শুধু তাই নয়, সমস্যা রয়েছে পানীয় জলেরও। কড়া নজরদারির অভাবে হাসপাতাল চত্ত্বরে থাকা পানীয় জলের ট্যাপ থেকে জল নিয়ে গাড়ি ধোয়ার কাজ হয়। অথচ,সাধারণ মানুষ থেকে রোগীর পরিজনেরা পানীয় জল পান না বলে অভিযোগ। হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর পরিজনের কথায়, “কবে আমার রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব, তাই ভাবছি। আমার আত্মীয়ের ছুটির দিনের দিকে তাকিয়েই কোনওরকমে দিনগুলো কাটিয়ে দিচ্ছি।”
হাসপাতালের সুপার বলেন, “পানীয় জলের অপচয় বন্ধের জন্য আমি বহুবার ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু জলের অপচয় পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। তবে শৌচাগার, বিশ্রামাগারের সঙ্গে ক্যান্টিন তৈরির জন্যও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” ঘাটালের বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব শঙ্কর দোলই বলেন, “চলতি বছরের মধ্যেই এইসব
সমস্যার সমাধান করা হবে। রাতে নজরদারি বাড়ানোর ব্যবস্থাও করছি। প্রয়োজন হলে আমার বিধায়ক তহবিলের টাকা থেকে পরিকাঠামো উন্নয়নে সাহায্য করব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.