দুই লোকশিল্পীকে সঙ্গীত সম্মান
গ্রামবাংলার লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা। দল গড়েছেন সাঁওতালি নাচের, ঝুমুর গানের। এই কাজে আরও উৎসাহ দিতে সঙ্গীত সম্মানে ওঁদের সম্মানিত করল রাজ্য সরকার। গত সোমবার কলকাতায় বাংলা সঙ্গীত মেলার অনুষ্ঠানে পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই শিল্পী শ্রীমৎ সোরেন ও পানমণি বেসরার হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শ্রীমৎ সোরেনের বাড়ি ঝাড়গ্রামের সুভাষপল্লিতে। ধামসা-মাদল বাজান। সাঁওতালি নৃত্যের দলও রয়েছে। সব মিলিয়ে ২২ জন রয়েছে এই দলে। সকলেই নিয়মিত সংস্কৃতি-চর্চা করেন। পেশায় রেলকর্মী শ্রীমৎ বলছিলেন, “লোকশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার আনন্দই আলাদা। এক সময় গ্রামবাংলার আরও অনেকে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লোক-সংস্কৃতিকে বাঁচাতেই হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই দল গঠন করি।” ইতিমধ্যে কলকাতায় গিয়ে রাজ্য সরকারের নানা অনুষ্ঠানে সাঁওতালি নৃত্য পরিবেশন করেছেন শ্রীমৎ ও তাঁর সম্প্রদায়। ঝাড়গ্রামের শিল্পীর কথায়, “রাজ্য সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সরকার যদি এ ভাবে শিল্পীদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে আমাদের মতো অনেকেই উৎসাহিত হবেন।”
পরিচয়পত্র হাতে পানমণি।—নিজস্ব চিত্র।
পানমণি বেসরার বাড়ি মেদিনীপুরের মুন্সীপাটনায়। ঝুমুর নৃত্য করেন। তাঁর ঝুমুর নৃত্যের একটি দলও রয়েছে। সব মিলিয়ে ১২ জন রয়েছে এই দলে। বাবা রাধেশ্যাম বেসরা সংস্কৃতি-চর্চা করতেন। পানমণি বলছিলেন, “বাবা গান-বাজনা ভালবাসতেন। তিনি চাইতেন, আমিও যেন গান-বাজনা করি। বাবার অনুপ্রেরণাতেই সংস্কৃতি-চর্চা শুরু করি।” মেদিনীপুরের এই শিল্পী এবং তাঁর সম্প্রদায়ও ইতিমধ্যে কলকাতায় গিয়ে রাজ্য সরকারের নানা অনুষ্ঠানে ঝুমুর নৃত্য পরিবেশন করেছেন। পানমণির কথায়, “লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। রাজ্য সরকার এ ভাবে পাশে দাঁড়াতে শিল্পীরাও উৎসাহিত হবেন। এই সম্মান আগামী দিনের প্রেরণা। লোকশিল্পের প্রসারে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।” জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কৌশিক নন্দী বলেন, “এটা আমাদের কাছে সত্যিই গর্বের।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৩ হাজার লোকশিল্পী রয়েছে। লোকশিল্পকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপও করেছে রাজ্য সরকার। শিল্পীদের পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাসে শিল্পীদের ৭৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। অন্য দিকে, লোকশিল্পীদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের প্রচারের কাজে ব্যবহারও করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার ৩৭০ জন শিল্পীকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের প্রচার করবে, প্রাথমিক ভাবে এমন ৩৫ দলকে চিহ্ণিত করা হয়েছে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলছেন, “রাজ্য সরকার সব সময়ই শিল্পীদের পাশে রয়েছে। লোকশিল্পের প্রসারে ইতিমধ্যে শিল্পীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এ বার শিল্পীরা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকার প্রকল্পের প্রচারে লোকশিল্পীদের কাজে লাগানো হচ্ছে। সমস্ত শিল্পীই যাতে পরিচয়পত্র পেতে পারেন, ভাতার সুবিধে পেতে পারেন, তার চেষ্টা চলছে।”
শ্রীমৎ, পানমণিরা বলছেন, “পরিচয়পত্রটাও সরকারের একটা স্বীকৃতি। সরকার এ ভাবে পাশে দাঁড়ালে আমাদের মতো অনেকেই উপকৃত হবেন। লোকশিল্পও বাঁচবে।”
লোকশিল্পের সঙ্গেই যে জড়িয়ে রয়েছে গ্রামবাংলার লালমাটির গন্ধ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.