জল পরীক্ষার নতুন ১৩টি কেন্দ্র জেলায়
পানীয় জলে দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করতে পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন তেরোটি জল পরীক্ষাগার তৈরি হবে।
জেলায় এখন ১০টি জল পরীক্ষাগার রয়েছে। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরে সবমিলিয়ে ২৯টি ব্লক রয়েছে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিলে সমস্যা তৈরি হয়। প্রতি ব্লকে জলের পরীক্ষাগার না থাকায় সেই এলাকার জলের নমুনা পরীক্ষা করতেই দু’-তিন দিন সময় গড়িয়ে যায়। ফলে জল আদৌ দূষিত কি না, বা দূষিত হলেও তার পরিমাণ কতটা, তা গ্রামবাসীরা দ্রুত জানতে পারেন না। নতুন ১৩টি জল পরীক্ষাগার তৈরি হলে জেলায় পরীক্ষাগারের সংখ্যা বেড়ে হবে ২৩টি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সুদীপ সেন বলেন, “১০টি জল পরীক্ষাগার রয়েছে। নতুন করে আরও ১৩টি তৈরি হবে। ইতিমধ্যে রাজ্য থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মিলেছে। কাজও শুরু হয়েছে। প্রতি ব্লকে অন্তত একটি করে জল পরীক্ষাগার যাতে থাকে, আগামী দিনে সেই চেষ্টা করা হবে।”
ওই দফতর সূত্রে খবর, এখন জেলায় যে ১০টি জল পরীক্ষাগার রয়েছে, তারমধ্যে মাত্র ৩টি সরাসরি দফতর দেখভাল করে। বাকি ৭টি দেখভাল করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তবে, নতুন করে যে ১৩টি তৈরি হবে, তার সবক’টিই সরাসরি দফতর দেখভাল করবে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে খবর, ঘাটাল, খড়্গপুর এবং মেদিনীপুরের পরীক্ষাগার সরাসরি দফতর দেখভাল করে। অন্য দিকে, যে ৭টি পরীক্ষাগার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দেখভাল করে, সেগুলো হল ডেবরা, ঝাড়গ্রাম, সবং, কেশপুর, মেদিনীপুর সদর, নারায়ণগড় ও দাসপুর ১ ব্লক।
ঘাটালের জল পরীক্ষাগারটি দীর্ঘদিন ধরে পরিকাঠামোগত সমস্যায় ধুঁকছিল। দফতরের অবশ্য দাবি, এখন সেই সমস্যা মিটেছে। পরীক্ষাগারটি চালু রয়েছে। নতুন করে যে ১৩টি জল পরীক্ষাগার তৈরির অনুমোদন মিলেছে, সেগুলো হবে গড়বেতা ৩, জামবনি, বিনপুর ১ (লালগড়), বিনপুর ২ (বেলপাহাড়ি), গোপীবল্লভপুর ১, গোপীবল্লভপুর ২, দাঁতন ১, দাঁতন ২, গড়বেতা ১, চন্দ্রকোনা ২, ডেবরা, কেশিয়াড়ি এবং সবং ব্লকে। এরমধ্যে ৭টি পরীক্ষাগার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বাকি ৬টির কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “মাঝে-মধ্যেই নানা কারণে জল পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। তাই এলাকার কাছাকাছি জল পরীক্ষাগার থাকলে সব দিক থেকে সুবিধে হয়। দ্রুত পরীক্ষা করে জানা যাবে, ওই জল ব্যবহারের উপযুক্ত কি না।” তিনি বলেন, “জল দূষিত হলে অনেক সময়ই শোধন করতে হয়। প্রতি ব্লকে একটি করে পরীক্ষাগার থাকলে দ্রুত জলের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট মিলবে। তখন রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা সম্ভব হবে। নতুন ১৩টি পরীক্ষাগার তৈরি হলে সমস্যা অনেকটা মিটবে। তবে বাকি ব্লকেও জল পরীক্ষাগার তৈরি করা উচিত।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে মাঝে-মধ্যে জলবাহিত রোগ দেখা দেয়। ডায়েরিয়ার প্রকোপ ছড়ায়। প্রায় সময়ই দেখা যায়, যে এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ ছড়িয়েছে, সেই এলাকার জল পরিস্রুত নয়। পরিস্থিতি ঠিক কেমন? গত অগস্টে টানা বৃষ্টির জেরে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল। কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তখন প্রায় ৪ হাজার মানুষ সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রায় ১ হাজার জন অজানা জ্বরে আক্রান্ত হন। অনেকে টাইফয়েডেও আক্রান্ত হন। পরবর্তী সময়ও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় মেডিক্যাল টিম। দেখা যায়, দূষিত জল থেকেই কিছু রোগ ছড়িয়েছে। কোথাও গ্রামবাসী কুয়োর জল পান করেন। কোথাও বা পুকুরের জল। পাশাপাশি, জেলার সব এলাকার জল যে পরিস্রুত নয়, তারও প্রমাণ মেলে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “তখন যে সব এলাকায় ডায়েরিয়া ছড়িয়েছিল, সেই সব এলাকার জলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী সময় যখন রিপোর্ট আসে, তখন দেখা যায়, যে সংখ্যক এলাকা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, তার ৮০ ভাগ এলাকার জলই পরিস্রুত নয়। পান করার অনুপযুক্ত!” তিনি বলেন, “সাধারণত, ১০০ মিলিলিটার জলে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যদি ১০ বা তার কম হয়, তবেই সেই জল পান করার উপযুক্ত বলে ধরা হয়। অথচ, রিপোর্ট অনুযায়ী, দেখা যায় ৮০ ভাগ এলাকায় ১০০ মিলিমিটার জলে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ২০০ বা তার বেশি!” এমন পরিস্থিতি হলে তখন জল শোধন করতে হয়।
দফতরের আশা, নতুন জল পরীক্ষাগার তৈরি হলে জেলায় জলবাহিত রোগের প্রকোপ অনেক দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.