প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে পাঁচশো রানের বোঝা ঘাড়ে চাপা সত্বেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের বোলার ও ব্যাটসম্যানরা যে ভাবে লড়াইয়ে ফিরেছিল, তাতে দ্বিতীয় টেস্ট প্রচুর আশা নিয়ে শুরু করতে পারে ভারত। ইডেন পার্কে শেষ দিকে ভারত যে রকম ছন্দে ফিরে এসেছিল, তা যদি বেসিন রিজার্ভেও বজায় থাকে, তা হলে হয়তো অন্য ভারতকে দেখা যেতে পারে। সেই আশার কথাই বলছি।
এমন এক দুঃস্বপ্নের সফরের দুঃসহ স্মৃতি কিছুটা হলেও ভোলা যাবে, যদি এই টেস্টে ভারত জিতে সিরিজটা ড্র রাখতে পারে। এর ফলে ভারতীয় দলের তরুণরা ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে নিজেদের মধ্যে হয়তো একটা বোঝাপড়াও তৈরি করে নিতে পারবে। ২০১২-য় এই দুই দেশ সফরের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও যে ভুলতে পারিনি অনেকে।
বিদেশ সফরের কী জ্বালা, তা নিশ্চয়ই এরা এত দিনে বুঝে গিয়েছে। বোলাররা প্রচুর রান দেওয়ার ফলে যে চাপে ব্যাটসম্যানদের মারা যাওয়ার উপক্রম হবে, আগ্রাসি স্লিপ কর্ডন সাজিয়ে বিপক্ষের বোলাররা যে ফুঁসতে ফুঁসতে বল করতে আসবে, এ সব না বোঝার কিছু নেই। ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভারত অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। এই পিছিয়ে পড়াটাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে পড়ে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের বোলারদের নিজেদের শোধরানো ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। রস টেলর, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ও কেন উইলিয়ামসনের উপর নিউজিল্যান্ড বেশিই ভরসা করে। মিডল অর্ডারই হল ওদের ব্যাটিংয়ের হৃদয়। ভারতকে এই জায়গাটাতেই আঘাত করতে হবে এবং তা প্রথম ইনিংসেই।
এ ছাড়াও ওপেনারদের কাছ থেকেও আরও ভাল পারফরম্যান্স চাই। শিখর ধবন মনে হচ্ছে পায়ের তলায় মাটি পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু মুরলী বিজয়ের সঙ্গ দরকার ওর। অকল্যান্ডে অবশ্য বিজয় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করেছে বলে মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে ও নিজের জমিটা তৈরি করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। রাহানে ও রোহিতদেরও পূজারা, কোহলিদের অনুসরণ করার সময় এসে গিয়েছে। আসলে শুরুটা যে ভাবে বিফলে যাচ্ছে, এটাই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। মনঃসংযোগ ও শট বাছাই, এগুলো তো আর কাউকে গুলে খাইয়ে দেওয়া যায় না। এটা ভিতর থেকে আসে। সাপোর্ট স্টাফরা যতটা সাহায্য করতে পারেন, ততটা হয়তো করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগুলো তো মাঠে করে দেখাতে হয় ক্রিকেটারদেরই।
ওয়েলিংটনে ভারত প্রায় পঞ্চাশ বছর কোনও টেস্ট জিততে পারেনি। বেসিন রিজার্ভে ছ’বারের সফরে মাত্র একবার ভারত ড্র করতে পেরেছে। এবং সেটা গতবারেই, ২০০৯-এ। এ বারের দলটা কিন্তু একেবারে আলাদা। সহবাগ, গম্ভীররা যেমন আর ওপেনার নয়, তেমন মিডল অর্ডারেও ব্যাট করতে আসবে না তেন্ডুলকর, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণরা। এ বারের নিউজিল্যান্ড আবার আগের বারের থেকে ভাল জায়গায়। সুতরাং এ বার আর ফাঁকি দেওয়ার কোনও জায়গাই নেই। সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পালা এ বার। |