নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মিশায়েল শুমাখার। যে কারণে তাঁকে কোমা থেকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়াও ব্যাহত। এই দাবি জার্মান দৈনিক বিল্ড-এর। কাগজে লেখা হয়েছে, দীর্ঘ দেড় মাস কৃত্রিম কোমায় থাকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই গত সপ্তাহ থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে রেসিং কিংবদন্তির। অ্যান্টিবায়োটিক অসুধের সাহায্যে তাঁর চিকিৎসা চলছে। সংক্রমণ কতটা তীব্র এবং রোগীর জন্য কতটা বিপজ্জনক, খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকেরা।
ফ্রান্সে যে গ্রেনোবল হাসপাতালে শুমাখারের চিকিৎসার চলছে, সেখান থেকে অবশ্য জার্মান দৈনিকের এই খবরে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। শুমাখারের মুখপাত্র সাবাইন খেম বলেছেন, “যা লেখা হয়েছে, সবটাই জল্পনা। আর জল্পনা নিয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করি না।”
খেম-এর বিরক্তির কারণ আছে। গত বৃহস্পতিবার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে রটেছিল শুমাখার মৃত। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিতে বাধ্য হন যে, শুমাখার বেঁচে আছেন। কিন্তু তার পর থেকেই তাঁর সম্ভাব্য শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞকে ধরে নানা লেখালেখি চলছে। ফ্রাঙ্কফুর্টের নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ আন্দ্রিয়াস পিঙ্গল এক পত্রিকাকে জানান, কোমায় রোগী ঢোক গিলতে পারে না। তাই মুখের লালা ফুসফুসে গিয়ে জমে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হয়। পিঙ্গলের কথায়, “মিশায়েলের মতো যে সব রোগী এত দিন কোমায় থাকে তাদের ৩০-৫০ শতাংশ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা থাকে।” |
অন্য দিকে, সাত বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে কোমা থেকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়ায় চিকিৎসকদের সাহায্য করতে শুমাখারের স্ত্রী কোরিনা প্রতিদিন নিয়ম করে স্বামীর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যাচ্ছেন। শুমাখারের ভাই ও প্রাক্তন ফর্মুলা ওয়ান তারকা র্যাল্ফ, ফেরারি ও মার্সিডিজ দলে তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী-বন্ধু রস ব্রনের মতো ঘনিষ্ঠরাও তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। মিশায়েল যাতে এখনও পর্যন্ত সাড়া না দিলেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা জরুরি। তাঁদের কথায়, “এতে রোগীর স্নায়ু শান্ত থাকে। পরিবার-বন্ধুরা কাছেই আছে বুঝলে তাঁর মধ্যে একটা নিরাপত্তা বোধ তৈরি হয়।”
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ফ্রান্সের মেরিবেল-এ স্কি করার সময় পড়ে গিয়ে মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়ার পর থেকে গত ৪৬ দিন কৃত্রিম কোমায় আছেন শুমাখার। চিকিৎসকেরা তাঁকে কোমা থেকে জাগানোর চেষ্টা শুরু করেছেন। তবে কাজটা খুব জটিল। একটু একটু করে শুমাখারের রক্তে মিশে থাকা ঘুম পাড়ানো ওষুধ বের করতে হবে। যাতে বেশ কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। কৃত্রিম কোমায় রাখতে শুমাখারের অক্সিজেন সরবরাহ কমানো আছে, রক্তও অনেক তরল করে রাখা হয়েছে। যে কারণে ইমিউন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে তাঁর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচণ্ড কমে গিয়েছে।
গত দেড় মাস সরাসরি পাকস্থলিতে টিউব ঢুকিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে কিংবদন্তিকে। ফুসফুসে অক্সিজেনও যাচ্ছে টিউবের সাহায্যে। শুমাখার হাওয়া ভরা এক ধরনের বিশেষ বিছানায় শুয়ে আছেন। রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে প্রতিদিন পাশ ফেরানো ও ম্যাসাজ করা হচ্ছে। এমনকী এই অবস্থায় মাঝে মাঝে তাঁকে দাঁড় করানোও হচ্ছে। যে কোনও ধরনের সংক্রমণের জন্য নিয়মিত মনিটরং চলছে। তা সত্ত্বেও নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকলে সেটা সত্যিই উদ্বেগের। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুমাখার তিন-চার দিনে নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় সাড়া না দিলে ভয়ের কারণ রয়েছে।
|