কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে পেতে আগ্রহী হয়নি। ঘরের ছেলে পাপালি ওরফে ঋদ্ধিমান সাহাকে ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে লুফে নিয়েছে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। কলকাতার হয়ে না খেলতে পারার জন্য মন কিছুটা ক্ষুণ্ণ হলেও কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে উইকেট কিপিং এবং নিয়মিত খেলার সুযোগ মিলবে বলে মনে করছেন শিলিগুড়ির ক্রিকেটপ্রেমীরা। ঋদ্ধিমান নিয়মিত খেলুক এবং কিছু করে দেখাক এমনটাই তাঁদের কাছে বড় চাওয়া। বিশেষ করে শিলিগুড়ির অগ্রগামী ক্লাবের ঋদ্ধিমানের কোচ এবং কর্মকর্তারা মনে করছেন, গত কয়েক বছর চেন্নাই সুপার কিংসে খেলার পর এ বার কিংস ইলেভেন পঞ্জাব তাঁকে দলে নেওয়ায় নিয়মিত উইকেট কিপিং করতে সমস্ত বড় সুযোগ পাবেন ঋদ্ধিমান। চেন্নাই সুপার কিংসে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কিপিং করায় সেই সুযোগ পেতেন না ঋদ্ধিমান। তাই এ বার তাঁর সামনে সুযোগ বেশি বলেই অনেকে মনে করছেন।
ঋদ্ধিমানের বাবা প্রশান্তবাবু এবং মা মৈত্রেয়ীদেবী অবশ্য এ দিন খবর পেয়ে খুশি-ই। প্রশান্তবাবু বর্তমানে কলকাতায় বিদ্যুৎ ভবনে কর্মরত। অফিসের সহকর্মীরাই এ দিন তাঁকে প্রথম খবর দেন। ছেলের খেলা নিয়ে গোড়া থেকেই তিনি এবং মৈত্রেয়ীদেবী উৎসাহী। প্রশান্তবাবু বলেন, “এই ব্যবস্থাটাই এমন যে কখন কোন দলে খেলবে তা বলা যায় না। আশা মতো দল নাও হতে পারে। ও নিয়মিত খেলার সুযোগ পাক এবং কিছু করে দেখাক এটাই চাই। তা ছাড়া কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ওকে দিয়ে যদি কিপিং করায় সেটাই বড় ব্যাপার হবে।” চাকরির কারণেই তিনি স্ত্রী মৈত্রেয়ীদেবীকে নিয়ে কলকাতাতেই রয়েছেন। শিলিগুড়ির বাড়িতে রয়েছে পাপালির জ্যাঠার পরিবার। জ্যাঠতুতো দাদা কৌশম্বী, বউদি রুমা দেবী এবং পরিবারের অন্যান্যরা ঋদ্ধিমানের খেলা নিয়ে বরাবরই উৎসাহী। এ দিনও পঞ্জাব দলে পাপালির সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়ে খুশি তাঁরা। কৌশম্বী বলেন, “ভাল খবর। কলকাতার হয়ে খেলতে পারলে অবশ্যই ভাল লাগত। তবে ও যে দলেই খেলুক কিছু করে দেখাবে বলে আমার বিশ্বাস।”
কলকাতার হয়ে খেলার চেয়ে আইপিএল-এ তাঁর সাফল্যই পরিবার, চেনা পরিচিতদের কাছেন বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগ্রগামী ক্লাবে ঋদ্ধিমানের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক বলেন, “চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ঋদ্ধিমান গত কয়েক বছর খেলেছে। কিন্তু সেখানে ধোনি থাকায় ঋদ্ধিমান উইকেট কিপার হিসাবে সুযোগ পেত না। তাঁকে ব্যাটসম্যান হিসাবে দলে থাকতে হত। অনেক ক্ষেত্রে সে জন্য নিয়মিত সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হত। অথচ কিপিং-টা ওর কাছে প্রধান। আইপিএল-এর মতো খেলা একটা বড় প্লাটফর্ম। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছে। সেখানে নিজের কিপিংটা দেখানোর মস্ত বড় সুযোগ থাকছে ওর সামনে।” তবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ঋদ্ধিমানকে পেলে তা যে আনন্দের হত সে কথা কবুল করেন জয়ন্তবাবুও। প্রথম কয়েক বছর কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও খেলেছে ঋদ্ধিমান। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘চাইলেই তো হল না। ঋদ্ধিমান শুধু নয়, লক্ষ্মীরতন শুক্লা, মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দারাও কেউ কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে নেই। বাংলার অনেককেই তো দিল্লি ডেয়ারডেভিলস নিয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আফসোস করার কিছু নেই।”
শিলিগুড়িতে পাপালির পাড়ার শক্তিগড় এলাকার বাসিন্দারা, পরিচিতদের অনেকেই জানান, কলকাতা দলে ওকে দেখলে ভাল লাগত ঠিকই। তবে সব সময় তা হবে সেটাও আশা করা ঠিক নয়। পাড়ার ক্লাব শক্তিগড় শৈলেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার ও ক্লাবের সদস্যরা এ দিন খবর পেয়েই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তাঁরাও মনে করছেন কলকাতা দলের হয়ে ঋদ্ধিমান খেললে বাড়তি উদ্দীপনা থাকত। তবে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে যদি নিয়মিত মাঠে নামতে পারে, কিপিং করতে পারে পাপালি তা হলে সেটাই ভাল। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা গৌতম সরকার বলেন, “পঞ্জাবে ও নিয়মিত উইকেট কিপিং করতে পারবে বলেই আমাদের ধারণা। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিংয়ের সুযোগ পেলে ও নিশ্চয়ই কিছু করে দেখাবে।”
|