আইপিএল মহানিলামে কেকেআরে বঙ্গ ক্রিকেটারদের ‘ব্রাত্য’ করে রাখা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়ে গেল ময়দানে।
এক দিকে, সিএবি। যারা রীতিমতো গর্জে উঠল এমন ‘অন্যায়’-র বিরুদ্ধে। নিজেদেরই এক কর্তাকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে। নিলাম টেবলে উপস্থিত সিএবি সহ-সচিব জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করা হল সংস্থারই উচ্চপদস্থ কর্তাদের পক্ষ থেকে। কেউ কেউ ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন, আইপিএল শুরু হলেই টের পাওয়া যাবে কলকাতায় কেকেআরের জনপ্রিয়তার কী দশা হতে চলেছে। অন্য দিকে, বাংলার ক্রিকেটমহল। যারা শামি-লক্ষ্মীদের কেকেআরের বাইরে রাখাকে বাংলা ক্রিকেটেরই চরম অসম্মান বলে ধরছে। বলে দিচ্ছে, শামিদের নেওয়ার যথেষ্ট ‘ইচ্ছে’-ই নাকি ছিল না কেকেআরের!
পুরো ঘটনায় সিএবি প্রেসিডেন্ট অবাক। জগমোহন ডালমিয়া বলে দিচ্ছেন, “সারপ্রাইজড। বাংলার কাউকে নেওয়া হয়নি দেখে আমি বিস্মিত।” সংস্থার কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র হুঙ্কার, “সিএবি সহ-সচিব জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেকেআর টেবলে দেখে কোথায় মুখ লুকোবো বুঝতে পারছি না। সিএবি-র অনুমতি নিয়ে ওখানে বসেননি সহ-সচিব। বাংলার সম্মান ভূলুন্ঠিত হচ্ছে দেখেও উনি চুপ করে রইলেন।” বোর্ডের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট চিত্রক মিত্র-র গর্জন, “অবিশ্বাস্য লাগছে যে পীযূষ চাওলাকে ৪.২৫ কোটি দিয়ে কেনা হল। অথচ মহম্মদ শামির জন্য ওই টাকাটাই খরচ করা হল না। খেলা শুরু হলেই বোঝা যাবে বাংলার মানুষ ব্যাপারটাকে কী ভাবে নিচ্ছেন।” আর যাঁকে নিয়ে বিতর্ক, সেই জিৎ বলছেন, “আমি কোনও বিতর্কে ঢুকতে চাই না। এ নিয়ে কিছু বলব না।”
|
এখন প্রাক্তন নাইট। লক্ষ্মী ও মনোজ। |
সিএবি-তে যতটা অসূয়া জন্মেছে কেকেআরের নিলাম-কাণ্ড নিয়ে, ক্রিকেটমহলেও সম-পরিমাণ। লক্ষ্মীরতন শুক্ল থেকে মহম্মদ শামি, মনোজ তিওয়ারি থেকে ঋদ্ধিমান সাহা, অশোক দিন্দা এক জনকেও তো নেওয়া হল না। শামি-লক্ষ্মীর জন্য তবু কেকেআর ‘বিড’-এর রাস্তায় গিয়েছে। দিন্দা-মনোজের জন্য সেটুকুও বরাদ্দ ছিল না। সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ শামি আর লক্ষ্মীকে না রাখা নিয়ে। দিন্দা, ঋদ্ধি বেশ কয়েক মরসুম কেকেআরে নেই। কিন্তু শামি প্রথম থেকে কেকেআরে। লক্ষ্মীও গত ছ’বছর ধরে। মনোজ মাঝে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে এক বার গেলেও কেকেআরের জার্সিতেই আইপিএলের সিংহভাগ খেলেছেন। এ বার তিনজনই দিল্লিতে। শামি বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন। বাকি দুইয়ের মধ্যে মনোজ মিডিয়ায় সরাসরি আক্রমণ করেছেন। লক্ষ্মী ঠারেঠোরে।
নিলামের খবর পাওয়ার পর এ দিন আর কেকেআর সংসারে তাঁর কাটানো ছ’টা বছর নিয়ে কথা বলতে চান না লক্ষ্মী। বাংলা অধিনায়ক পরিষ্কার বলে দিলেন, “যারা আমার উপর আস্থা রেখেছে, তাদের আস্থার মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাকে ম্যাচ জেতানোর জন্য নিয়েছে দিল্লি, আমি ম্যাচ জেতাব। চেষ্টা করব, কলকাতার মানুষের সম্মান রাখতে। আমি চাই এ বার লোকে বলুক, বাংলার ছেলে এসে দিল্লিকে জেতাচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন করছে।” কিন্তু কেকেআর? নিলামের আপনার জন্য নাইট কর্তারা বেশি দূর এগোলেন না দেখে অবাক হয়ে যাননি? “ওঁরা যে ভাবে টিমটাকে সাজাবেন ভেবেছেন, সাজিয়েছেন। আমার তো টিম নয়। আমার পিতৃদেবেরও টিম নয় যে বলব, একে নাও, ওকে নাও। যা-ই হোক, কেকেআর নিয়ে এখন আর একটা কথাও নয়।”
লক্ষ্মী কিছু বলুন না বলুন, যন্ত্রণাটা ধরা পড়ে পরিষ্কার। মনোজের যে যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ অনেক বেশি ব্যক্ত। যিনি এ দিন বলে দিয়েছেন, “কেকেআর শুধু আমি কেন, বাংলার বাকিদের জন্যও সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়েছে বলে মনে হয়নি। মনেই হয়নি নেওয়ার জন্য সে ভাবে চেষ্টা করেছিল বলে।” সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, “কলকাতার প্লেয়ারই যদি হোম টিমের হয়ে খেলতে না পারে, লোকের আগ্রহ কমে যাবে। ওদের কাছে সুযোগ ছিল আমাদের নেওয়ার, নিল না। আমাদের এখন নিজেদের কেরিয়ারের কথা ভাবতে হবে।”
যে ব্যাপারটা প্রবল আঘাত করছে বাংলার ক্রিকেটমহলকে। বাংলার কোচ অশোক মলহোত্র ক্ষিপ্ত। “আমি বুঝতে পারছি না, লক্ষ্মীর জন্য আর পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিতে পারল না কেকেআর? দেশে ওর চেয়ে ভাল অলরাউন্ডার আর একজনও আছে? মনোজকে নেবে না জানতাম। আরে, এ বার ব্যাপারটা ওপেন ছিল। তুমি সেখানে মহম্মদ শামিকে না নিয়ে বিনয় কুমারকে নেবে? অশোক দিন্দার কথা ভাববেও না? ঋদ্ধিমান সাহাকে নেবে না?” হিংস্র ভাবে শুনিয়ে দিলেন অশোক। আর এক প্রাক্তন বাংলা অধিনায়ক অরুণলাল অতটা আগ্রাসী নন। বলে দিলেন, “আমি অকশনটা ভাল করে দেখিনি। ওরা হয়তো নিতে চেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত পারেনি। কিন্তু যেহেতু পুরো ব্যাপারটা জানি না, মন্তব্য করা ঠিক হবে না।” কিন্তু বাংলার রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলে দিলেন, “আইপিএলে যে ক’টা টিম আছে, সব শহরভিত্তিক। সব টিমেই শহরের একটা সেন্টিমেন্ট থাকে। দুর্ভাগ্য, শুধু কেকেআরে সেটা নেই।”
সম্বরণ আক্ষেপ করছেন ভেবে যে, তাঁকে মাঠে গিয়ে হাততালি দিতে হবে কিছু বাইরের ক্রিকেটার আর কয়েক জন বিদেশির জন্য! কোনও বাংলা ক্রিকেটারের জন্য নয়। অশোক আক্ষেপ করছেন, কেকেআরের মনোভাব দেখে। তিক্ত গলায় বলে দিচ্ছেন, “আমি ওদের সিইও বেঙ্কি মাইসোরকে বলেছিলাম, কী টিম করবে তোমার ব্যাপার। কিন্তু লোকাল ফ্লেভারটা রেখো। কী করে তুমি সেটা অগ্রাহ্য করতে পারো? ওদের তো চেষ্টাটাই ছিল না।” বাংলা কোচের মনে হচ্ছে, মাঠে বা টিভিতে নাইটদের ম্যাচ দেখতে বসলে, ‘কানেকশন’-টা পাবেন না।
অশোককে বোধহয় দোষ দেওয়া যায় না। আইপিএল সেভেনে এখন থেকে কেকেআর থাকবে, শুধু ‘বং কানেকশন’-টা থাকবে না। |
জগমোহন ডালমিয়া (সিএবি প্রেসিডেন্ট)
বাংলার কাউকে নেওয়া হয়নি দেখে আমি বিস্মিত।
বিশ্বরূপ দে (সিএবি কোষাধ্যক্ষ)
সিএবি সহ-সচিব জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেকেআরের টেবলে দেখে কোথায়
মুখ লুকোবো
ভেবে পাচ্ছি না। সিএবি-র অনুমতি নিয়ে ওখানে বসেননি সহ-সচিব।
বাংলার সম্মান ভূলন্ঠিত হচ্ছে দেখেও
উনি চুপ করে রইলেন।
চিত্রক মিত্র (বোর্ডের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট)
অবিশ্বাস্য লাগছে যে পীযূষ চাওলাকে ৪.২৫ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হল অথচ
মহম্মদ শামির জন্য ওই ৪.২৫ কোটি টাকাটা খরচ করা হল না। খেলা শুরু
হলেই
বোঝা যাবে বাংলার মানুষ ব্যাপারটাকে কী ভাবে নিচ্ছে।
জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
এই বিতর্কে ঢুকতে চাই না। কিছু বলব না। |
|
নিলাম-নিলাম
আইপিএল সেভেন নিলামের প্রথম দিনের পর কোন টিম কোথায় দাঁড়িয়ে? বিশ্লেষণে দীপ দাশগুপ্ত |
সেরা টিম
ভারসাম্যের দিক থেকে দেখলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস আর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। দিল্লি সব রকম প্লেয়ার নিয়েছে। বিদেশি ও ভারতীয় মিলিয়ে ওপেনার, মিডল অর্ডার, অলরাউন্ডার, পেসার সব। তবে এ বার সব টিমকেই বেশ ব্যালান্সড লাগছে। আগে যেমন চেন্নাই বা মুম্বইয়ের সঙ্গে বাকিদের যে রকম তফাত থাকত, এ বার তা হবে না।
সেরা লগ্নি
কেভিন পিটারসেন আর জর্জ বেইলি। ওদের যত টাকা দিয়েই কিনুক, পয়সা উসুল হবে। তবে আমার ফেভারিট নিউজিল্যান্ডের জেমস নিশাম। মাত্র এক কোটি দিয়ে ওকে কিনল দিল্লি। ছেলেটা ১৪০ প্লাস গতিতে বল করে, হাতে বড় হিট আছে, উপমহাদেশে খেলে সফল।
খারাপ লগ্নি
সে ভাবে কেউ নয়। তবে দীনেশ কার্তিক কি সাড়ে বারো কোটি পাওয়ার যোগ্য? জানি না।
সেরা চমক
টিম আরসিবি। বিরাট, যুবরাজ, ক্রিস গেইলএরা সবাই ব্যাট করছে দেখলে বিপক্ষ এমনিই কেঁপে থাকবে। ভাল ব্যাটিং ট্র্যাকে এই টিমের স্কোর কোথায় যাবে, ভাবতে পারছি না।
কেকেআর কোথায়
বোলিং বিভাগ খুব ভাল। স্পিনে নারিনের সঙ্গে চাওলা। পেসারদের মধ্যে মর্নি মর্কেল, বিনয় কুমার। তবে ব্যাটিংটা অতটা ভাল না। যেখানে রস টেলরের মতো কাউকে ভাবা যেত। তবে কাল আনক্যাপড প্লেয়ার কিনে নেওয়ার পরে হয়তো আবার ঝাঁপাবে অবিক্রিত প্লেয়ারদের জন্য।
সারমর্ম
নিলাম নিয়ে একটা ধারণা থাকে যে, যারা বেশি প্লেয়ার ধরে রাখবে, সুবিধে তাদের। কিন্তু এ বার সবচেয়ে বেশি প্লেয়ার ধরে রেখেও সে ভাবে সুবিধে পেল না চেন্নাই বা মুম্বই। |
|
|
এক নজরে প্রথম দিন |
কলকাতা নাইট রাইডার্স
আরও চাই ৬ ক্রিকেটার।
হাতে ৯ কোটি। জোকার কার্ড নেই।
দিল্লি ডেয়ারডেভিলস
আরও চাই ৩ ক্রিকেটার।
হাতে ৮.৬ কোটি। জোকার কার্ড ২।
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব
আরও চাই ৪ ক্রিকেটার।
হাতে ১৪.২ কোটি। জোকার কার্ড ১।
চেন্নাই সুপার কিংস
আরও চাই ৩ ক্রিকেটার।
হাতে ২.৯। জোকার কার্ড নেই। |
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স
আরও চাই ৬ ক্রিকেটার।
হাতে ৫.১৫ কোটি। জোকার কার্ড নেই।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
আরও চাই ৪ ক্রিকেটার।
হাতে ১.৮ কোটি। জোকার কার্ড ১।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ
আরও চাই ৩ ক্রিকেটার।
হাতে ৮.৪ কোটি। জোকার কার্ড নেই।
রাজস্থান রয়্যালস
আরও চাই ৫ ক্রিকেটার।
হাতে ১২.১০ কোটি। জোকার কার্ড ১। |
|
|