হাওড়ার আমতার মুক্তিরচক গ্রামে দুই মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনার তদন্তে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে বলে দাবি করলেন বামপন্থী বিশিষ্টজনেরা।
মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে দুই নির্যাতিতাকে দেখতে আসেন দলের সদস্যেরা। তাঁদেরই অন্যতম বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “এই মামলায় অভিযুক্তদের সকলকেই আটক করা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে পুলিশ সব কাজ করে ফেলেছে। দুই নির্যাতিতা আরও তিন জনের নামে এইআইআর করতে চাইলেও তা পুলিশ নিতে চায়নি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে জেরা করেনি। তদন্তের এই অংশটিতে যত দেরি হবে, চার্জশিট ততই দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে অভিযুক্তেরা পার পেয়ে যাবে। মধ্যমগ্রাম কাণ্ডে যেমনটি করেছিলাম, যথাযথ তদন্তের দাবিতে আমরা আমতা কাণ্ডেও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করব।” |
হাসপাতালে এলেও দলে থাকা পুরুষ সদস্যেরা নির্যাতিতাদের দেখতে ভিতরে যাননি। ভারতী মুৎসুদ্দি, মালিনী ভট্টাচার্য এবং সুজাতা ঘোষ রায় এই তিন জন ভিতরে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে ভারতীদেবী বলেন, “দুই মহিলা এখনও মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ। ভাল করে কথা বলতে পারছেন না। নারকীয় অত্যাচার হয়েছে ওঁদের দু’জনের উপরে।”
হাসপাতালে আরও যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা হলেন, নাট্যকর্মী চন্দন সেন, সাহিত্যিক কিন্নর রায়, কবি মন্দাক্রান্তা সেন, নকশাল নেতা আজিজুল হক। আরও ছিলেন কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ভাস্কর মণ্ডল এবং এই মঞ্চেরই সদস্য প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। চন্দনবাবু বলেন, “আমরা সারা রাজ্যে ঘুরে ঘুরে নির্যাতিতা বিভিন্ন মহিলার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছি। আমতার ঘটনাতেও দেখলাম নির্যাতিতাদের পরিবার ঘরে ফিরতে পারছেন না। আমরা এই সব পরিবারকে নিয়ে খুব শীঘ্রই কলকাতায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করব। সেখানেই রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের পন্থা ঠিক হবে।”
তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বিশিষ্টজনদের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। এফআইআর-এ যে আট জনের নাম ছিল, সকলেই গ্রেফতার হয়েছে বলে জানিয়ে রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, অভিযুক্তদের ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে, আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে, ফরেন্সিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকী, প্রত্যক্ষদর্শীদের জেরার কাজও শেষ। চার্জশিটে কোনও ফাঁক রাখা হবে না। ওই দুই মহিলা সুস্থ হলেই তাঁদের আইপিসি-র ১৬৪ নম্বর ধারায় বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানো হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
নির্যাতিতাদের গ্রামে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার জবাবে উলুবেড়িয়া (উত্তর) কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি এখানে প্রতিদিন আসছি। প্রতিটি গ্রামবাসী যাতে এখানে নিরাপদে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
|
পুলিশ বলছে |
• অভিযুক্তদের সকলের ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে।
• ফরেন্সিক পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে।
• প্রত্যক্ষদর্শীদের জেরার কাজ শেষ।
• দুই মহিলা সুস্থ হলেই বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি। |
|