প্রায় দু’মাস ধরে বহু টানাপোড়েনের পরে অবশেষে বুধবার দফতর ছাড়াই হাওড়া পুরসভার পূর্ণাঙ্গ মেয়র পরিষদের নাম ঘোষণা করলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি (শহরাঞ্চল) তথা রাজ্যের কৃষি-বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। এ দিন পুরভবনে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীকে পাশে বসিয়ে তিনি জানালেন, দশ জন মেয়র পারিষদ মনোনীত হওয়ার পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁদের শপথ হয়ে গিয়েছে। শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন মেয়র নিজে। এ দিন মেয়র পারিষদের প্রথম বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, গত ১১ ডিসেম্বর নতুন পুরবোর্ডের মেয়র ও কাউন্সিলরেরা শপথ নেন। পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ করার দু’মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পুরবোর্ড গঠন করার কথা। অর্থাৎ, ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা করে শপথ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দু’মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে মনোনীত মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তার পরে এত দ্রুততার সঙ্গে মেয়র পারিষদ গঠনের পাশাপাশি শপথ গ্রহণও হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, যে দল গত পুর-নির্বাচনে ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৫টি ওয়ার্ড দখলে রেখেছিল, তাদের এত গোপনে মেয়র পরিষদ ঘোষণা করে শপথ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল কি?
রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “প্রথমত এটা দলের ব্যাপার। দল ঠিক করবে, কাকে কী পদ দেওয়া হবে। তা ছাড়া, মেয়র কাকে কবে শপথ নেওয়াবেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে অন্য কোনও কাউন্সিলরের কিছু বলার নেই।”
এ দিন হাওড়া পুরভবনে মেয়র ও কৃষি-বিপণন মন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ মেয়র পরিষদের যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে রয়েছেন ডেপুটি মেয়র মিনতি অধিকারী, বাণী সিংহ, বিনোদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাস হাজরা, শ্যামল মিত্র, গৌতম চৌধুরী, সীমা নস্কর, নাসরিন খাতুন, অরুণ রায়চৌধুরী, দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় ও শান্তনু বন্দ্যোপাধায়। অরূপবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, মেয়র পরিষদ গঠন ও শপথ হয়ে যাওয়ার কথা এত দিন কেন জানানো হয়নি?
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “কৌশলগত কারণেই জানানো হয়নি। আজ সংবাদমাধ্যমকে জানানো হল, প্রথম মেয়র পরিষদ বৈঠকও হল।” কৃষি-বিপণন মন্ত্রী জানান, বৈঠকে তাঁকে শুভানুধ্যায়ী হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাই তিনি উপস্থিত ছিলেন।
এমনিতেই গত দু’মাস ধরে মেয়র পরিষদ গঠন না হওয়ায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। তার উপরে এ দিনের এই ঘোষণায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্যেও। সিপিএম কাউন্সিলর আসরাফ জাভেদ এ দিন রাজ্যপাল ও মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, রাজ্যপাল যেহেতু ৮ তারিখের মধ্যে পূণার্ঙ্গ বোর্ড গঠন করতে চিঠি দিয়েছিলেন, তাই হাওড়ার মানুষকে অন্ধকারে রেখে এই মেয়র পরিষদ গঠিত হয়েছে। এটা পুরোপুরি বেআইনি। কংগ্রেস থেকে সদ্য তৃণমূলে যাওয়া ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী ঘোষ বলেন, “আমরা তো জানতামই না মেয়র পরিষদ গঠন হয়ে গিয়েছে। কাল রাতে শুনেছি নাম ঘোষণা হয়েছে।”
৫০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তিলকেশ মণ্ডল বলেন, “বলা হয়েছিল, আজ মেয়র পরিষদের শপথ। তাই নির্বাচিতদের অভিনন্দন জানাতে এসেছিলাম। এসে জানলাম, ৭ তারিখ নাকি সব হয়ে গিয়েছে।” |