সম্পাদকীয় ২...
ঐতিহাসিক
সাড়ে ছয় দশক পর বরফ গলার লক্ষণ প্রকাশ পাইতেছে। ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথম চিন ও তাইওয়ান পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হইবার উপক্রম করিতেছে। যে নানজিং শহরে তাইওয়ানের সফররত সরকারি আধিকারিক চিনা আধিকারিকের সহিত বৈঠকে মিলিত হইলেন, বিংশ শতকের প্রথমার্ধে জাতীয়তাবাদী কুওমিন্টাং পার্টির শাসনকালে তাহাই ছিল চিনের রাজধানী। চিয়াং কাই-শেক-এর নেতৃত্বাধীন সেই কুওমিন্টাং মাও-জে-দঙের কমিউনিস্ট গেরিলাদের হাতে পরাজিত ও বিধ্বস্ত হওয়ার পর কুড়ি লক্ষ দলীয় সমর্থককে লইয়া চিয়াং তাইওয়ান দ্বীপে আস্তানা গাড়েন। তদবধি তাইওয়ানই জাতীয়তাবাদী চিনাদের আবাসভূমি হইয়া ওঠে। কমিউনিস্ট-শাসিত চিনকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে অপ্রস্তুত বিশ্ব ১৯৭১ সাল অবধি তাইওয়ানকেই চিনের প্রতিনিধিত্বের অধিকার দিয়া চলে। ’৭১-এ রাষ্ট্রপুঞ্জে সেই প্রতিনিধিত্বের অধিকার নাকচ হওয়ার পর হইতে পরিস্থিতি পাল্টাইতে থাকে, গণপ্রজাতন্ত্রী চিনই হইয়া ওঠে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চিনের প্রতিনিধি। কিন্তু তাহাতে কমিউনিস্ট শাসিত চিন এবং ধনতান্ত্রিক তাইওয়ানের পারস্পরিক সম্পর্কের বিরূপতা, শত্রুতা, বিদ্বেষ বিন্দুমাত্র হ্রাস পায় না। বৈরর সেই ইতিহাসেই ইতি টানিতে উদ্যোগী দুই দেশ।
বর্তমানে চিন বিশ্বের নবোদিত আর্থিক-সামরিক শক্তি— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিস্পর্ধী। তুলনায় মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সাহায্যপুষ্ট হইলেও তাইওয়ান নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর ও ক্ষুদ্র একটি প্রদেশ। কিন্তু তাইওয়ানকে মূল চিনা ভূখণ্ডের সহিত মিশাইয়া দেওয়ার চিনা তাগিদ এতই তীব্র যে বেজিং বলপ্রয়োগেও প্রস্তুত। তাইওয়ান সে কথা জানে, তথাপি চিনা কমিউনিস্টদের প্রতি তাহার বাসিন্দাদের বিরূপতা হ্রাস পায় নাই। দুই চিনকে কাছাকাছি আনা তাই কঠিন। সেই কঠিন ব্রতটিই পালনে উদ্যোগী হইয়াছে তাইওয়ানের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী কুওমিন্টাং পার্টি, যাহা উপর্যুপরি দুই বার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হইয়া মূল চিনা ভূখণ্ডের সরকার ও জনসাধারণের সহিত ঘনিষ্ঠতা স্থাপনে অপেক্ষাকৃত নমনীয় অবস্থান লইয়াছে। তাহাতেই সম্ভব হইয়াছে তাইওয়ানের সরকারি আধিকারিকের চার দিনের আনুষ্ঠানিক নানজিং সফর। দুই দেশেরই ইতিহাসে ইহা যুগান্তকারী। উভয় সরকারই ইহাকে স্বাগত জানাইয়াছে। তবে অতি সতর্ক, সাবধানী এই স্বাগতজ্ঞাপন— পাছে সামান্য ছুতায় জায়মান মৈত্রীর সুর-তাল কাটিয়া যায়!
বর্তমান চিনে অবশ্য ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’র আবাহন ও সাফল্যের পর ধনতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ তীব্র। এখন সেখানে ‘ধনী হওয়া গৌরবের’, লজ্জার নয়। ধনবাদী তাইওয়ানের সহিত তাই গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের একাত্মতায় কোনও আদর্শগত বাধা নাই, যেমন ছিল না হংকং বা ম্যাকাও-এর বেলাতেও। কিন্তু তাইওয়ানের ক্ষেত্রে হিংসা-প্রতিহিংসারঞ্জিত ইতিহাসও একটি বাধা বটে। ইতিহাস ও আদর্শের অসমঞ্জস ভূমিতে পারস্পরিক নৈকট্য-সাধন সম্ভব কি না, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে একমাত্র কূটনীতি। সেই কূটনীতি সুচিন্তিত সতর্কতা দাবি করে। যে প্রশ্নে মতানৈক্য সম্ভব, তাহাকে সচেতন ভাবে পাশ কাটাইয়া উভয় পক্ষের নিকট তাৎপর্যপূর্ণ ও সহযোগ-সম্ভব ক্ষেত্রগুলিকে প্রাধান্য দেওয়াই কূটনীতির কাজ। চিন ও তাইওয়ানের মধ্যে যে আদানপ্রদান চলিতেছে, একটি কূটনৈতিক প্রদর্শ হিসাবেই তাহা গোটা দুনিয়ার নিকট গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিয়াটি সফল হইলে তাহা শিক্ষণীয়ও বটে। বিশ শতকের বোঝা ঝাড়িয়া ফেলিবার শিক্ষা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.