সম্পাদকীয় ১...
রাজনীতির ঊর্ধ্বে
লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণাই যাহা বাকি আছে। এমন সময়ে অন্তর্বর্তী রেল বাজেট কী বলিতে পারে, তাহা অনুমান করা দুঃসাধ্য নহে। রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়গে হতাশ করেন নাই। তাঁহার বাজেটে একটি কথাই ভবিষ্যতের পক্ষে তাৎপর্যবাহী— রেল এই আর্থিক বৎসরে যত পণ্য পরিবহণের অনুমান করিয়াছিল, বাস্তবে তাহার সামান্যই বেশি হইয়াছে এবং রেলমন্ত্রী জানাইয়াছেন, আগামী অর্থবর্ষে এই ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত বৃদ্ধির হার মাত্র ৪.৬ শতাংশ। অর্থনীতির রক্তাল্পতায় ভুগিবার ইহা এক প্রকৃষ্ট লক্ষণ। অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির কথা মাথায় রাখিলে, পণ্য মাশুল যথেষ্ট না বাড়াইলে রেলের কোষাগারে আরও চাপ পড়িতে চলিয়াছে। নির্বাচনের বাজারে পণ্য মাশুল প্রত্যাশিত ভাবেই বাড়ে নাই। নূতন সরকারের নূতন রেলমন্ত্রী আসিয়াও পণ্য মাশুল খুব বাড়াইতে পারিবেন বলিয়া প্রত্যয় হয় না। পণ্য মাশুলের মাধ্যমে রেলের খরচ তুলিয়া যাত্রিভাড়ায় ভর্তুকি দেওয়ার খেলাটি ভারতীয় রেলকে এই বিপন্নতার সম্মুখীন করিয়াছে। ইউপিএ সরকারের দশ বৎসর রেলের এই মৌলিক ব্যাধিটির চিকিৎসা করিতে ব্যর্থ। বস্তুত, সেই চেষ্টাই করা হয় নাই। রেলের আয়-ব্যয়ের অনুপাত এখনও ৯০ শতাংশের ঊর্ধ্বে।
ভারতীয় রেলের সমস্যা হইল, নেতারা ইহাকে মূলত একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে দেখিতেই অভ্যস্ত, দেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো হিসাবে নহে। ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় দফায় মোট কত জন রেলমন্ত্রী হইয়াছেন, আচমকা এই প্রশ্নের সম্মুখীন হইলে হয়তো সরকারের অনেক কর্তার মুখেই উত্তর জোগাইবে না। গত পাঁচ বৎসরে দুই অন্তর্বর্তী মন্ত্রীসহ মোট রেলমন্ত্রীর সংখ্যা সাত। তাঁহাদের মধ্যে এক জন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হইয়া দফতর ছাড়িয়াছেন, তাঁহারই রোষে দ্বিতীয় জনের কুর্সি গিয়াছে, তৃতীয় জনের মন্ত্রিত্ব চলাকালীনই দল জোট হইতে সরিয়া দাঁড়াইয়াছে। এক জন দুর্নীতির দায়ে চাকুরি খোয়াইয়াছেন। দেশের অন্যতম জরুরি পরিকাঠামোর শীর্ষ আসনে এই দোলাচল স্বাস্থ্যকর হইতে পারে না। ভারতে জোট সরকার-পর্ব আরম্ভ হওয়া ইস্তক রেল মন্ত্রকটি গুরুত্বপূর্ণ শরিকের ক্ষমতার পীঠস্থান হিসাবেই ব্যবহৃত হইয়াছে। ভারতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলির বহু ইতিবাচক ভূমিকা হয়তো আছে, কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ বিষয়ে সুসংহত চিন্তা সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত নহে। ফলে, রেল মন্ত্রক কার্যত দুইটি কাজ করিয়াছে— ভাড়া না বাড়াইবার সস্তা জনতোষণ এবং আঞ্চলিক স্বার্থসিদ্ধি। উভয়ই ভোটমুখী, এবং উভয়ই রেলের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যতের পক্ষে মারাত্মক। ভারতে জোট রাজনীতি দীর্ঘস্থায়ী হইবে বলিয়াই অনুমান। রেল লইয়া এই ছেলেখেলাটিও সমধিক আয়ুঃপ্রাপ্ত হইলে ঘোর বিপদ।
গত দেড় বৎসরে পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত অবশ্য মিলিয়াছে। যাত্রিভাড়া বাড়াইয়া দীনেশ ত্রিবেদী চাকুরি খোয়াইয়াছিলেন। রেল মন্ত্রক তৃণমূল কংগ্রেসের হাত হইতে যখন কংগ্রেসের হাতে আসিল, পবন বনশল তাঁহার পূর্বসূরি মুকুল রায়ের সিদ্ধান্তের বিপরীতে হাঁটিয়া ফের ভাড়া বাড়াইলেন। তাহার পর কলিকাতা মেট্রো রেলেরও ভাড়া বাড়িল। আশা করা যায়, নেতারা ভাড়া না বাড়াইবার বিপদগুলি শেষ পর্যন্ত দেখিতে পাইয়াছেন। সম্প্রতি রেলের ভাড়া স্থির করিবার দায়িত্ব একটি স্বতন্ত্র কমিটির হাতে তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। রেলমন্ত্রী ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’-এর কথাও বলিয়াছেন। সত্যই যদি হুঁশ ফিরে, রেলের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য লইয়া নেতারা চিন্তা করেন, তাহাতেই পরিত্রাণের সম্ভাবনা। রেলকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখিয়া, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের হাতিয়ারে পরিণত না করিয়া তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে হইবে। লোকসভা ভোটের পর যে নূতন সরকার ক্ষমতায় আসিবে, এই কাজটি তাহার কর্তব্য-তালিকায় প্রথম দিকেই থাকিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.